Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

মাছ-মাংস খাইয়ে প্রত্যাহারে ‘চাপ’

শনিবার সকালে রাজাভাতখাওয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপির দু’জন পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী ও ৯ জন গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য গোপন ডেরায় চলে যান। তাঁদের দাবি, শনিবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেওয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা করেই লুকিয়ে প়ড়েন তাঁরা।

ব্যস্ত: দলীয় দফতরে মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। নিজস্ব চিত্র

ব্যস্ত: দলীয় দফতরে মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার-আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৮ ০২:২০
Share: Save:

পাশাপাশি দুই জেলা। তবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার নিয়ে অভিযোগের বৈচিত্রে কোচবিহারের থেকে এগিয়ে আলিপুরদুয়ার। সেখানে জোর করে বাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে চর্বচোষ্য খাইয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করানোর অভিযোগও করা হয়েছে। একই সঙ্গে কর্মীদের ভয় দেখানো, অপহরণের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে সব স্তর থেকেই। শাসকদল এই সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।

ভয় দেখানোর সব থেকে অভিনব অভিযোগটি এসেছে আলিপুরদুয়ারের বীরপাড়া থেকে। বিজেপি বিধায়ক মনোজ টিগ্গার অভিযোগ, ‘‘গত বৃহস্পতিবার বীরপাড়া-১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের তাঁদের চার প্রার্থীকে জোর করে তৃণমূলের এক নেতার বাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়৷ রাতে সেখানে মাছ-মাংস দিয়ে রীতিমতো ভোজ খাওয়ানো হয় তাঁদের। তার পরে আটকে রাখা হয়। শুক্রবার তাঁরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন৷’’

তবে সব ক্ষেত্রে চাপ দেওয়াটা এত ‘নিরামিষ’ ছিল না বলেও দাবি বিরোধীদের। আর সেই চাপ থেকে বাঁচতে দল বেঁধে গা ঢাকাও দিয়েছেন অনেকে। শনিবার সকালে রাজাভাতখাওয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপির দু’জন পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী ও ৯ জন গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য গোপন ডেরায় চলে যান। তাঁদের দাবি, শনিবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেওয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা করেই লুকিয়ে প়ড়েন তাঁরা। বিজেপির ওই এলাকার মণ্ডল সম্পাদক পার্থপ্রতিম দত্ত জানান, ‘‘মনোনয়ন জমার পর থেকেই প্রার্থীদের নানা ভাবে হুমকি ও প্রলোভন দেওয়া চলছে। তাই আতঙ্কে প্রার্থীরা গা ঢাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।’’ একই সঙ্গে জেলা বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের দাবি, এই ভাবে গা ঢাকা দেওয়ার কৌশল নিয়ে অনেক ক্ষেত্রে ফল পেয়েছেন তাঁরা।

এই সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল জেলা সভাপতি মোহন শর্মা পাল্টা জানান, শুক্রবার রাতে কামাক্ষ্যাগুড়ি এলাকায় তৃণমূলের এক সমর্থকে বেধড়ক মারধর করেছে বিজেপি। তৃণমূলের রাজাভাতখাওয়া অঞ্চলের সভাপতি অ্যালবার্ট সাংমা বলেন, ‘‘কোনও ভয় দেখানো হয়নি। বিজেপির প্রার্থীরা একটি বৈঠকে গিয়েছেন বলে আমাদের কাছে খবর আছে।’’

কোচবিহারের ক্ষেত্রে কাউকে ভয় দেখিয়ে তো কারও সঙ্গে সমঝোতা করে মনোনয়ন প্রত্যাহার করানোর অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। একই সঙ্গে রাজনৈতিক সংঘর্ষের খবরও এসেছে। যেমন, শনিবার রাতে কোচবিহার ২ নম্বর ব্লকের রাজারহাট কামিনির ঘাটে এবং টাকাগছে কর্মীদের বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ তুলেছে বিজেপি এবং সিপিএম। তৃণমূল অবশ্য ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

একই ভাবে এ দিন রাতেই বক্সীরহাট থানার নাজিরান দেউতিখাতায় তৃণমূলের হামলায় তাঁদের তিন জন জখম হয়েছেন বলে দাবি বিজেপির। যদিও এ ক্ষেত্রেও তৃণমূল অভিযোগ অস্বীকার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, বিষয়টি দেখা হচ্ছে।

জেলা পরিষদের বিজেপির এক প্রার্থীর কথায়, ‘‘আমার ছেলে, বাবাকে আটকে রেখে ফোন করা হয়। এর পরে ঝুঁকি নেব কী ভাবে?’’ জেলার বিজেপি সভাপতি নিখিলরঞ্জন দে বলেন, ‘‘অভিযোগ জানিয়েও কিছু লাভ হয়নি।’’ একই অভিযোগ সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদক অনন্ত রায়ের। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “বিরোধীদের প্রার্থী দেওয়ার শক্তি নেই। কিছু লোককে লোভ দেখিয়ে দাঁড় করিয়েছিল। পরে তাঁরা তা বুঝতে পেরে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছে।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE