ফেরত: অসুস্থ অবস্থাতেই বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে এক রোগীকে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
রবিবার কার্যত চিকিৎসক শূন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অন্তর্বিভাগ। এই পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু চিকিৎসার অভাবে এ দিন গোবিন্দ ওঁরাও (৩৫) নামে এক বাসিন্দার মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। খড়িবাড়ির টুকরিজোতের বাসিন্দা গোবিন্দের ভাই সান্টুস ওঁরাওয়ের অভিযোগ, ‘‘১১ দিন ধরে ভর্তি। অথচ চিকিৎসকই ঠিক মতো আসছেন না। দাদা এপিগ্যাসট্রিক যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছিলেন। এখানে সুষ্ঠু চিকিৎসা হল না।’’ ওয়ার্ডের নার্সদের একাংশ বিষয়টি চাপা দিতে সক্রিয় হন বলে অভিযোগ। অভিযোগ, পরিবারের লোকদের মুখ খুলতে নিষেধও করা হয়। কথা বলতে গেলে তাঁদের অন্যত্র সরে যেতে বলেন নার্সদের একাংশ। কেউ কথা বলতে গেলে কেন তাঁরা ওয়ার্ডে ঢুকে কথা বলছেন তা নিয়ে হইচই জুড়ে দেন।
জুনিয়র চিকিৎসকরা জরুরি বিভাগের সামনে অবস্থান করেছেন অন্য দিনের মতোই। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, জুনিয়ররা এনআরএস কাণ্ড নিয়ে আন্দোলন চালানোয় তাঁরা পরিষেবা দিচ্ছেন না। পর্যাপ্ত চিকিৎসক এবং নিরাপত্তা না পেলে এ ভাবে ২৪ ঘন্টার বেশি হাসপাতালে চালানো সম্ভব হবে না বলে বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তাকে জানিয়ে দেন কলেজের অধ্যক্ষ এবং সুপার। অন্তর্বিভাগ সিনিয়র চিকিৎসকদের দিয়েই কোনও রকমে চালানো হচ্ছে।
রবিবার সিনিয়র চিকিৎসকদের অধিকাংশেরই সাপ্তাহিক ছুটি থাকে। পরিস্থিতি সামলাতে জনা ১৫ চিকিৎসককে বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে এ দিন হাসপাতালের পরিষেবা ঠিক রাখার চেষ্টা করেন কর্তৃপক্ষ। উদ্বেগের মধ্যে থেকে এ দিন সন্ধ্যায় অধ্যক্ষ এবং সুপার হাসপাতালের পরিস্থিতি ঘুরে দেখেন। এদিন গোবিন্দবাবুর মৃত্যু নিয়ে সুপার বলেন, ‘‘চিকিৎসক পর্যাপ্ত না থাকায় সমস্যা তো হচ্ছেই। তবে গোবিন্দবাবুর ক্ষেত্রে কী হয়েছে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’’
চিকিৎসা যথাযথ না মেলায় অনেক রোগীকে নিয়েই বিপাকে পড়েছেন পরিবারের লোকেরা। তার উপর জবরদস্তি ছুটি করিয়ে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। এদিন হলদিবাড়ির বাসিন্দা মল্লিকা রায় বাসুনিয়াকে জবরদস্তি ছুটি করিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ পরিবারের। তাঁর ছেলে রতনলাল বাসুনিয়ার অভিযোগ, স্ট্রোক হলে তাঁর মাকে গত শুক্রবার প্রথমে হলদিবাডি হাসপাতাল এবং সেখান থেকে জলপাইগুড়ি হাসপাতাল এবং কয়েক ঘন্টার মধ্যে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে নিয়ে যেতে হয়।
সেখানে সিটি স্ক্যান নেই বলে শিলিগুড়ি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসকের পরামর্শে পরদিন করিয়ে আনেন। তিনি বলেন, ‘‘ভাল করে না-দেখেই চিকিৎসক বলেন ছুটি দিয়েছি বাড়ি নিয়ে যাও। এই পরিস্থিতিতে ছুটি নিতে চাইনি। বাধ্য হয়ে এদিন বাড়িতে নিয়ে যাই। এ ভাবে রোগীদের জবরদস্তি ছুটি করানোর অর্থ কী বুঝতে পারছি না। পরিবারের সকলেই দুশ্চিন্তায় রয়েছি।’’
এসব কারণে অনেক রোগী নিয়ে চলে যেতে চাইছেন। অনেকে চলেও যাচ্ছেন।
দীর্ঘদিন ধরে ভর্তি শিলিগুড়ি জংশনের পাতিকলোনি এলাকার বাসিন্দা অমর ঘোষের মৃত্যু নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে এই পরিস্থিতিতে। তাঁর স্ত্রী অঞ্জলি ঘোষের অভিযোগ, ‘‘চার মাস ধরে ভর্তি ছিলেন আমার স্বামী। মাথায় ফোঁড়া হয়েছিল। ঠিক মতো চিকিৎসা হয়নি।’’ হাসপাতালের সুপার কৌশিক সমাঝদার বলেন, ‘‘এমন কিছু ঘটেছে বলে আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। তবে আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy