শিলিগুড়ি পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ে বাক-বিতণ্ডা। সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
বিরোধীদের চাপের মুখে পড়ে শহিদ স্মৃতিস্তম্ভ গড়তে পুরসভার তরফে অ্যাকাউন্ট খুলে বাসিন্দাদের থেকে টাকা তোলা হবে না বলে জানিয়ে দিলেন মেয়র অশোক ভট্টাচার্য।
সোমবার পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ের পর এ কথা জানিয়ে দেন তিনি। গত ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবস পালন করে বাঘা যতীন পার্কে শহিদদের স্মৃতিস্তম্ভ করার কথা জানিয়েছিলেন মেয়র। বিশিষ্ট সাহিত্যিক অশ্রুকুমার সিকদারকে এনে শহিদস্তম্ভের শিলান্যাস করানো হয়। তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তৃণমূল কাউন্সিলর কৃষ্ণ পাল। অশ্রুবাবুর বাড়িতে গিয়েও তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। অশ্রুবাবু জানিয়ে দেন তাঁকে এ সব না জানিয়েই করা হচ্ছে। কৃষ্ণবাবুর অভিযোগ তোলেন, অশ্রুবাবুকে সামনে রেখে পুরসভায় অ্যাকাউন্ট খুলে বাসিন্দাদের কাছ থেকে টাকা তোলার চেষ্টা হচ্ছিল। এমন নিয়ম কোনও পুর আইনে নেই।
এ দিন মেয়র বলেন, ‘‘শহিদদের স্মৃতিস্তম্ভের খরচ পুরসভার সাধারণ তহবিল থেকে করা হবে। আপত্তি ওঠায় বাসিন্দাদের কাছ থেকে টাকা তোলা হবে না।’’ কৃষ্ণবাবু জানান, ওই ভাবে টাকা তোলার নিয়ম নেই বুঝেই মেয়র তা থেকে সরে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আইনে কোথাও বলা নেই পুরসভা উন্নয়নের জন্য বাসিন্দাদের টাকা তুলবে। তা অনৈতিক হবে বুঝেই মেয়র শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত বদলালেন।’’
অন্য দিকে নাগরিক সভার নামে সংবর্ধনা সভা করা নিয়েও অনৈতিক কাজের অভিযোগ তুলে এ দিন বোর্ড মিটিংয়ে সরব হয় বিরোধী তৃণমূল। এ দিন সভায় তা নিয়ে হইচই বাঁধে। ভাষা শহিদদের স্মৃতিস্তম্ভ করতে পুরসভার অ্যাকাউন্ট খুলে বাসিন্দাদের টাকা তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েও অনৈতিক কাজের অভিযোগ তোলেন তারা।
মৌসুমী কয়াল, টুম্পা কয়ালদের সংবর্ধনা সভাকে কেন অনৈতিক বলা হচ্ছে তা নিয়ে পাল্টা সরব হন বাম কাউন্সিলররা। অনৈতিক বলার জন্য বিরোধী দলনেতাকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি তোলেন। পরে চেয়ারম্যান ‘অনৈতিক’ কথা টিকে বাদ দিয়ে বক্তব্য নথিভুক্ত করার কথা জানান। তা নিয়েও বিরোধীরা সরব হন। তারা দাবি তোলেন, ওই নাগরিক সভার জন্য যে দু’ লক্ষ টাকা খরচ করা হয়েছে তা পুরসভার তরফে দেওয়া চলবে না। ওই সভা রাজনৈতিক সভা হয়েছে। মেয়রের দলকেই তা বহন করতে হবে।
মেয়র বলেন, ‘‘বোর্ড সভাতে সিদ্ধান্ত করেই নাগরিক সভা করা হয়েছে। তার জন্য দু’ লক্ষ টাকা খরচও ধরা হয়েছিল। পুরসভার কাজের লিখিত প্রতিবেদন সভায় বিলি করা হয়। প্রস্তাব দেওয়া হলে কারও আপত্তি নেই জানিয়েছেন। এ ভাবেই নাগরিক সভা হয়।’’ খরচ বাঁচাতে ওই সভাতেই মৌসুমী কয়াল, টুম্পা কয়ালদের সংবর্ধনা জানানো হয়েছে। তাতে বাড়তি খরচের দরকার পড়েনি।
বিরোধী দলনেতা নান্টু পাল, কৃষ্ণ পালদের অভিযোগ, মাত্র পাঁচ মিনিট নাগরিক সভা প্রসঙ্গে কথা হয়েছে। তার আগে পুরো সময়টাই সংবর্ধনা সভা এবং তাদের বিভিন্ন জন বক্তব্য রেখেছেন। অশোকবাবুরা নাগরিকসভাকে রাজনৈতিক সভাতে, সংবর্ধনা সভাতে পরিণত করেছেন। তা অনৈতিক। দু’পক্ষের কাউন্সিলররা উঠে দাঁড়িয়ে পরস্পরের উদ্দেশে চিৎকার করে বক্তব্য জানাতে থাকলে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা তা নিয়ে বাকবিতণ্ডা চলে।
এ দিন মোশন পর্বে বিরোধী দলনেতা নান্টুবাবু অভিযোগ করেন, বিজ্ঞাপন দিয়ে ফ্লেক্স লাগিয়ে নাগরিক কনভেনশন করার কথা জানানো হয়েছে। সেই মতো পাঁচটি বিষয়ে আলোচনা করার কথা। সেগুলি হল শিলিগুড়ির উন্নয়ন মূলক কাজের এবং পরিষেবা নিয়ে আলোচনা, ওয়ার্ড কমিটির ভূমিকা, প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা, শহরের দারিদ্র দূর করা, বস্তি উন্নয়ন। অথচ এ সব বিষয়ে মেয়র পাঁচ মিনিটও কথা বলেননি। তা নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। কেবল মৌসুমী কয়াল, টুম্পা কয়াল এবং প্রতিবাদী হিসেবে অম্বিকেশ মহাপাত্র, রোহিত পাসিদের ডেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। তাঁরা বক্তব্য রেখেছেন। তিনি বলেন, ‘‘পুরসভার টাকায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ওই সংবর্ধনা সভা হয়েছে। বাসিন্দাদের বক্তব্য শোনা বা লিপিবদ্ধ করা হয়নি। কমিটির সভাপতি সম্পাদকদের বক্তব্যও শোনা হয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy