Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
অপেক্ষা মিটল সাবেক ছিটমহলের

নাতিকে নিয়ে ভোট দিলেন আজগর

বহু বছর ধরে এই প্রতীক্ষাতেই দিন কাটছিল তাঁদের। ভোটার কার্ড হাতে পেয়েছিলেন কয়েক দিন আগেই। তখন থেকে মন যেন আর বাঁধ মানছিল না। বৃহস্পতিবার ৫ মে ভোর যখন ফুটতে শুরু করেছে, ঘুম ভেঙে গিয়েছে গোটা সাবেক ছিটমহলের।

ছোট্ট জেহাদকে নিয়ে ভোট দিতে চলেছেন তার বাবা-মা। ছবি: সন্দীপ পাল।

ছোট্ট জেহাদকে নিয়ে ভোট দিতে চলেছেন তার বাবা-মা। ছবি: সন্দীপ পাল।

নমিতেশ ঘোষ
মশালডাঙা (কোচবিহার) শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৬ ০১:১৮
Share: Save:

বহু বছর ধরে এই প্রতীক্ষাতেই দিন কাটছিল তাঁদের। ভোটার কার্ড হাতে পেয়েছিলেন কয়েক দিন আগেই। তখন থেকে মন যেন আর বাঁধ মানছিল না। বৃহস্পতিবার ৫ মে ভোর যখন ফুটতে শুরু করেছে, ঘুম ভেঙে গিয়েছে গোটা সাবেক ছিটমহলের। একশো তিন বছরের আজগর আলি, তাঁর ছেলে বেলাল হোসেন, তাঁর ছেলে জয়নাল আবেদিন—তিন প্রজন্ম এক সঙ্গে গেলেন ভোট দিতে। চোখ-মুখ তখন আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে তাঁদের। বয়সের ভারে ক্লান্ত আজগরও হাসছিলেন। হাঁপিয়ে উঠে বসে পড়ছিলেন। আবার ওঠে আঙুল দিয়ে ‘ভি’ চিহ্ন দেখিয়ে জয়ের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিলেন। তিনি বলেন, “বয়স বেড়ে চলেছে। ইচ্ছে ছিল ভোট দিয়ে স্বাধীনতার পূর্ণতাপ্রাপ্তি করব। তা আজ হল। মনে হচ্ছে এই জীবনে যা জয় করতে চেয়েছিলাম, তা পূরণ হল।”

পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন আজগরের ছেলে বেলাল ও নাতি জয়নাল। তাঁদের চোখে তখন জল। বেলাল বলেন, “কোনওদিন ভোট দিইনি। অপেক্ষা করছিলাম, কবে এই দিন আসবে। আজ আমি বাবা ও ছেলের সঙ্গে জীবনের প্রথম ভোট দিলাম। কী যে আনন্দ হচ্ছে বলে বোঝাতে পারব না।” তিনি জানান, শুধু তাঁরাই নন, সাবেক ছিটমহলের মানুষ ওই অপেক্ষাতে দিন কাটাচ্ছিলেন। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা থেকে তরুণ, তরুণী কেউই ভোট দিতে ভোলেননি।

জয়নাল বলেন, “আমার বয়স পঁচিশ পেরিয়েছে। দাদুর একশো। দাদু বারবার বলতেন একবার ভোট দিতে চাই। যে দিন ছিটমহল সমস্যার সমাধান হল, সে দিন থেকে সেই দিনের অপেক্ষায় ছিলেন।” ভোট দিয়েছেন আজগরের স্ত্রী জাবেদা বিবি। ভোট দিয়েছেন ছিটমহলের সেই ছোট্ট শিশু জেহাদ হোসেন ওবামার বাবা-মা। দিনহাটা হাসপাতালে জন্ম হয়েছিল জেহাদের। প্রথম বাংলাদেশি সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দার সরকারি ভাবে হাসপাতালে জন্ম হয়। তা নিয়ে আন্দোলন ইতিহাস হয়ে আছে। সেই জেহাদের মা আসমা বিবি বলেন, “সেদিনটা তো মনে আছে। কত কষ্ট হয়েছিল। কত মানুষ আওয়াজ তুলেছিলেন। যে দিন সমস্যা মিটল সেদিন খুব আনন্দ হচ্ছিল। আজ ভোট দিতে পেরে খুব খুশি।”

শুধু মশালডাঙা নয়, কোচবিহারে এবার সাবেক ছিটমহল পোয়াতুর কুঠি, কচুয়া, শিবপ্রসাদমুস্তাফি, করলা, বালাকুঠি সহ ৫১ টি সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দারা ভোটে অংশ নেন। সব মিলিয়ে ভোটার সংখ্যা প্রায় দশ হাজার জন। তাঁর মধ্যে বেশিরভাগ ছিল দিনহাটা ও মেখলিগঞ্জে। এ ছাড়া সিতাই, শীতলখুচি, মাথাভাঙাতেও ভোটার রয়েছে। সাবেক ছিটমহলের ত্রাণশিবিরের বাসিন্দারাও ভোটে অংশ নেন। এবারের বিধানসভা নির্বাচনে তাঁরা ভোট দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। ওই এলাকায় ভোটার তালিকা তৈরির নির্দেশ শেষ মুহূর্তে দেওয়া হয়। ওই নির্দেশ জারি হওয়ার পর থেকেই আনন্দে মেতে ওঠেন বাসিন্দারা। দিন কয়েক আগে সবার হাতে (কয়েকজন ভোটার কার্ড পাননি বলে অভিযোগ) ভোটার কার্ড তুলে দেওয়া হয়।

এ দিন ভোরে সাবেক ছিটমহলে গিয়ে দেখা যায়, ভোট দেওয়ার জন্য তৈরি হতে শুরু করেছে মানুষ। কেউ স্নান করছেন। কেউ রান্না সেরে ফেলেছেন। অনেকে সকালের খাবারও খেয়ে নিচ্ছেন। অনেকের পরনে নতুন জামাকাপড়। মহিলা, পুরুষ, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা দল বেঁধে রওনা হয়েছেন বুথের দিকে। দক্ষিণ মশালডাঙার বাসিন্দাদের বুথকেন্দ্র ছিল মনসেব শেওড়াগুড়ি প্রাথমিক স্কুল। ওই স্কুলে থাকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরাও বাসিন্দারে সাহায্যে এগিয়ে যান। আজগরকে কোলে তুলে নিয়ে গিয়ে বুথের বাইরে একটি চেয়ারে বসিয়ে দেন। কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন বলেন, “সাবেক ছিটমহলে শান্তিপূর্ণ ভাবের ভোট হয়েছে। মানুষ ভোটে অংশ নিয়েছেন।”

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 Asghar ali
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy