অরূপ বিশ্বাস।
আলিপুরদুয়ারে দলের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হল অরূপ বিশ্বাসকে। শুক্রবার তৃণমূল সূত্রে এই কথা জানিয়ে বলা হয়, তাঁর বদলে এই জেলায় পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হল শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটককে। তাঁকে সহযোগিতা করবেন আরও এক মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। দল সূত্রে খবর, উত্তরবঙ্গে আরও যে দু’টি জেলার দায়িত্বে রয়েছেন অরূপ, সেই জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং থেকেও তাঁকে সরানো হতে পারে।
অনেক দিন ধরে উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলায় দলের পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস। তার মধ্যে ছিল আলিপুরদুয়ার জেলাও। কিন্তু তাঁর আমলেই গত লোকসভা ভোটে আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রে ভরাডুবি হয় তৃণমূলের। এই কেন্দ্র থেকে রাজ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয় ছিনিয়ে নেন বিজেপি প্রার্থী। শুধু তাই নয়, তাঁর দায়িত্বে থাকা অন্য দু’টি জেলাতেও তৃণমূলকে বড় ব্যবধানে হারায় বিজেপি। তার মধ্যে জলপাইগুড়ি আসনটি দখলে রাখার ব্যাপারে অনেকাংশেই নিশ্চিত ছিল তৃণমূল। কিন্তু সেই আসনেও বিজেপি প্রার্থী ৫০ শতাংশ ভোট পান। আর দার্জিলিং আসনে ৫৯ শতাংশ ভোট পেয়ে রাজ্যের মধ্যে সব থেকে বড় ব্যবধানে জিতেছে বিজেপি।
এর পর থেকেই দলের অন্দরে বিভিন্ন স্তরের নেতাদের নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা। যা থেকে বাদ যাননি অরূপ নিজেও। ভোটের পরে প্রাথমিক ভাবে দলের গঠনগত পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জেলা সভাপতি বদল করা হয়। জলপাইগুড়ির সভাপতি হন কৃষ্ণ কল্যাণী, দার্জিলিঙের সমতলে সম্প্রতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রঞ্জন সরকারকে। আলিপুরদুয়ারে সভাপতি করা হয় মৃদুল গোস্বামীকে।
তৃণমূল সূত্রের খবর, পর্যবেক্ষক হিসেবে বিভিন্ন সময়ে আলিপুরদুয়ারে এসেছেন অরূপ। কিন্তু জেলায় দলের কর্মী-সমর্থকদের একাংশের অভিযোগ ছিল, বেশিরভাগ সময়ই শহরের কোনও বিলাসবহুল হোটেলে বৈঠক করে চলে গিয়েছেন তিনি। বেশিরভাগ সময় প্রান্তিক এলাকায় তাঁকে ডেকেও পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ দলের একাংশের। দলের একটি অংশের দাবি, ভোটের পরে পর্যালোচনা বৈঠক এবং পিকে-র দলের সফরের পরে এই অভিযোগগুলি তৃণমূল নেতৃত্বও ভাল ভাবেই জানতে পারেন। সম্ভবত সেই কারণেই অরূপকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হল। বদলে দায়িত্ব দেওয়া হল এমন দু’জনকে, যাঁদের সঙ্গে চা বাগানের শ্রমিকমহলের সম্পর্ক ভাল। তৃণমূলের ওই অংশের দাবি, মূলত চা বাগানে প্রভাব বিস্তার করে শ্রমিকমহলের ভোটে লোকসভা নির্বাচনে জিতেছে বিজেপি, এমনটাই মনে করা হচ্ছে। সেই ভোটব্যাঙ্কে প্রভাব বাড়াতে মলয়, পূর্ণেন্দু কিছুটা হলেও সফল হবেন বলেই মনে করা হচ্ছে। জেলা তৃণমূলের দাবি, এই দুই মন্ত্রীর সাহায্য পেলে জেলা নেতৃত্বও দলের প্রচারে এগিয়ে যেতে পারবে। দায়িত্ব পাওয়ার পরে মলয় বলেন, ‘‘দলনেত্রী যখন যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা পালনের চেষ্টা করেছি। আলিপুরদুয়ারের দায়িত্বও পালনের চেষ্টা করব। দল বলেছে, এক্ষেত্রে প্রয়োজনে পূর্ণেন্দু বসুর সহযোগিতা নিতে। সেটাও অবশ্যই নেব।’’ পূর্ণেন্দু বলেন, ‘‘আলিপুরদুয়ারের অবস্থা নিয়ে নেত্রী চিন্তিত। তিনি চাইছেন, আমরা আবার যাতে আলিপুরদুয়ারে ঘুরে দাঁড়াতে পারি। আমি ও মলয় সেই দায়িত্ব পালন করব। দলের জেলা সভাপতি মৃদুল গোস্বামী বলেন, ‘‘এটা দলের সিদ্ধান্ত। এই নিয়ে আমার কিছু বলার নেই।’’ অরূপের সঙ্গে রাত অবধি যোগাযোগ করা যায়নি।
একই ভাবে জলপাইগুড়ি এবং দার্জিলিং জেলার পর্যবেক্ষকের ভূমিকা নিয়েও দলের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। লোকসভা ভোটের পরে জলপাইগুড়িতে বৈঠক করতে এসে দলের নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন অরূপ। কর্মীদের অভিযোগ ছিল, তাঁদের সঙ্গে নেতৃত্ব যোগাযোগই রাখেন না। তার পরে তিস্তায় অনেক জল গড়িয়েছে। সভাপতি বদল হয়েছে। তিন জেলা মিলিয়ে একটি কোর কমিটিও তৈরি হয়েছে। তার মাথায় বসানো হয়েছে গৌতম দেবকে। জেলা নেতৃত্বদের সহায়তা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁকে। এ বারে আলিপুরদুয়ার থেকে অরূপকে সরানোর পরে এই জেলাতেও গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
যেমন আলোচনা শুরু হয়েছে দার্জিলিং জেলাতেও। এই জেলার তৃণমূলের তরফে বলা হচ্ছে, ২০১৭ সালে মিরিকে পুরভোটে জয় ছাড়া এখানে পাহাড়-সমতল মিলিয়ে অরূপের কোনও সাফল্য নেই। উপরন্তু লোকসভা নির্বাচনে শিলিগুড়ি ঘেঁষা জলপাইগুড়ি জেলার ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি কেন্দ্রে (গৌতম দেব যেখানকার বিধায়ক) ৮৬ হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিল দল। দলের মধ্যে দাবি উঠেছে, এমন কাউকে পর্যবেক্ষক করা হোক, যিনি আরও বেশি সময় দিতে পারবেন। আলিপুরদুয়ারের পরে প্রশ্ন এখানে, তা হলে কি এই জেলাতেও পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব বদল হচ্ছে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy