শনিবার পুরভোট। তাই হাতে আর সাকুল্যে তিনদিন। শেষবেলায় দম ফেলার ফুরসত নেই রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদের। পাশাপাশি ব্যস্ততার চাপে নাওয়া খাওয়া ভুলতে বসেছেন ওঁরাও, যাদের হাত ধরে প্রচার যুদ্ধে সামিল বিভিন্ন দলের নেতা কর্মীরা। ওদের কেউ শিল্পী, কেউ ফ্লেক্সের ব্যবসায়ী। কাক ভোরে রং-তুলি নিয়ে কেউ বেরিয়ে পড়ছেন দেওয়াল লিখতে। কেউ বা রাত জেগে তৈরি করছেন ফ্লেক্স। আবার কেউ স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সামাল দিচ্ছেন ফ্ল্যাগ, ফেস্টুন তৈরির বরাত।
জলপাইগুড়ি পানপাড়ার রঞ্জনকুমার দাসের কথাই ধরা যাক। বছরের অন্য সময় বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের ছবি আঁকা শেখান। সেই সঙ্গে রয়েছে ডেকরেটরের ব্যবসা। কিন্তু ভোটের ঢাকে কাঠি পড়লেই দেওয়াল লিখনের কাজেই বেশি মনোযোগ দিতে হয় তাঁকে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ঘোষণা বা মনোনয়ন জমা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডাক পড়ে তাঁর। যত বেশি কাজ আসতে শুরু করে ব্যস্ততাও বাড়তে থাকে পাল্লা দিয়ে।
ভোর পাঁচটা নাগাদ রং তুলি নিয়ে সাইকেলে চেপে বেরিয়ে পড়ছেন। দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন পাড়ার অলিগলিতে চলছে দেওয়াল লিখনের কাজ। মাঝে ঘন্টাখানেকের বিশ্রাম। তার পর আবার বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে রঙ তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলছেন প্রার্থীর নাম, দলের প্রতীক। রঞ্জনবাবু জানান, রঙের ব্যবহারে দলের বিধি নিষেধ মেনে চলতে হয়। তৃণমূল ও কংগ্রেস দলের লাল রং চলবে না। সিপিআই বা বামফ্রন্ট আবার ঘোর সবুজ বিরোধী। তবে বিজেপি রঙের ব্যাপারে উদার। কোনও রঙেই নাকি আপত্তি নেই তাদের।
নাওয়া-খাওয়ার সময় নেই পাণ্ডাপাড়ার শঙ্করবাবুরও। স্ত্রী পার্বতী সরকারকে সঙ্গী করেই নেমে পড়েছেন ফ্ল্যাগ ফেস্টুন তৈরির কাজে। বিভিন্ন মাপের কাপড় সেলাই করার পর তাতে স্ক্রিন প্রিন্টিংয়ে ফুটিয়ে তোলেন প্রার্থীদের দলীয় প্রতীক চিহ্ন। মাসখানেক ধরে রাত জেগে দু’ জনে মিলে চালাচ্ছেন এই কর্মযজ্ঞ। অন্যান্য সময় সাইন বোর্ড কিম্বা পাথরে নাম খোদাই ফেস্টুন ফ্ল্যাগ তৈরি করে আয় করেন মাসে পাঁচ হাজার টাকার মতো। ভোটের সময় নিবার্চনী প্রচারের ফ্ল্যাগ, ফেস্টুন, হোর্ডিং তৈরির দৌলতে এই আয় দ্বিগুন হয়ে যায়। বাড়তি আয় হয় বলে অতিরিক্ত পরিশ্রম পুষিয়ে যায় বলে জানান শঙ্করবাবু।
ভিড় বেড়েছে কদমতলার বাবুয়া মিশ্রের ফ্লেক্স তৈরির দোকানেও। সারাদিন তো বটেই সারারাত ধরে লোকজন নিয়ে কাজ করেও হিমসিম খাচ্ছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘অন্য সময় যখন ১০ শতাংশ চাহিদা থাকে এই সময় সেখানে ফ্লেক্সের চাহিদা ৩০০ শতাংশ। তৃণমূলের ফ্লেক্সে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি বাধ্যতামূলক আর বিজেপি’র ফ্লেক্সে জায়গা পাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী।’’
বছর উনত্রিশ ধরে ভোটের সময় দেয়াল লিখনের কাজ করছেন সঞ্জয় দে। বছরের অন্য সময় চুক্তির ভিত্তিতে সাইনবোর্ড ফেস্টুন লেখার কাজ করলেও প্রার্থী ঘোষণা এবং মনোনয়ন জমা পড়ার পর থেকেই তাঁকে নিয়ে শুরু হয়ে যায় রাজনৈতিক দলগুলির টানাটানি। ভোট টানতে অন্যদের থেকে চমকে এগিয়ে থাকতে কাজ শেষ করার তাড়া দেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকরা। ভোটের বাজনা বাজলেই তাই কাজের চাপ যেমন বাড়ে তেমনই বাড়তি আয়ের দরজাও খোলে। তিনি বলেন, ‘‘ভোটের সময় কাজ করে আয় বাড়ে প্রায় চারগুণ। সব দলের হয়ে লিখলেও জলপাইগুড়িতে সব চেয়ে বেশি দেওয়াল লিখছি বামফ্রন্ট ও নির্দল প্রার্থীর হয়ে।’’
ইন্দ্রনীল রুদ্রও রাত জাগছেন ফ্লেক্স তৈরির কাজে। অনেক সময়েই ফরমাস থাকছে অর্ডার দেওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই অন্তত একশোটা ফ্লেক্স তৈরি করে দেওয়ার। এমন চাপ মাথায় নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে তাঁকে। তিনি জানান, অন্তত ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত এই ব্যস্ততা থাকবেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy