Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
সারা জীবন ধরে দুর্গার সঙ্গেই সংসার। তাঁকে গড়ে তুলি প্রতি বছর। সেই তো আমার আনন্দ!

পঞ্চমীতেই যেন রেশ আসে দশমীর

মা চলে যাচ্ছেন। আবার এক বছর পর আসবেন। কিন্তু আমাদের দশমী চলে আসে পঞ্চমীতেই। সে দিন থেকেই তো এক এক করে মা দুর্গার প্রতিমা আমাদের অঙ্গন ছেড়ে যান। মাকে বিদায় দিতে চোখে জল চলে আসে।  

মৃৎশিল্পী মালতি পাল। নিজস্ব চিত্র।

মৃৎশিল্পী মালতি পাল। নিজস্ব চিত্র।

মালতি পাল, মৃৎশিল্পী
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:৩২
Share: Save:

গত চার দশক ধরে দুর্গাপুজোর আগের দেড়মাস স্বামীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রতিমা তৈরি করার কাজ করি। তাই এই দেড়মাস কীভাবে কেটে যায়, তা বুঝতে পারি না। দশমীতে দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের দিন বাঙালির মন খারাপ হয়ে যায়। মা চলে যাচ্ছেন। আবার এক বছর পর আসবেন। কিন্তু আমাদের দশমী চলে আসে পঞ্চমীতেই। সে দিন থেকেই তো এক এক করে মা দুর্গার প্রতিমা আমাদের অঙ্গন ছেড়ে যান। মাকে বিদায় দিতে চোখে জল চলে আসে।

মন খারাপ হয়। জানি, প্রতিমা এ বার প্রতিমা রাজেন্দ্রাণীর মতো মণ্ডপে বসবেন। পুজো হবে। তাঁর প্রাণ প্রতিষ্ঠা হবে। কিন্তু যখন তিনি আমাদের ঘরে একটু একটু করে তৈরি হচ্ছিলেন, তখন কী প্রাণ তৈরি হয়ে যায়নি? প্রণাম করে বলি, মা তোমায় নিষ্প্রাণ হয়ে দেখতে পারি না। তোমার কি আমাদের কথা মনে পড়ে না, যারা তোমায় গড়ে তোলে বছরের পর বছর।

মনে হয় মা আমাদের ভুলে যান। আমরা সেই এক তিমিরেই পড়ে থাকি। আমরা মাতৃমূর্তি তৈরি করি, অশুভকে দমন করার সেই শক্তি আমরা গঠন করি, সেই আমাদের তুমি সন্তান বলে মনে কর না? তা হলে আমাদের দিকে মুখ তুলে চাও না কেন? প্রতি বার ঠাকুর ঘর থেকে বেরোনোর সময়, সে কথাই ভাবি।

প্রায় তিন মাস ধরে অনেক পরিশ্রম ও নিজেদের ভাবনা খাটিয়ে প্রতিমা তৈরি করেন মৃৎশিল্পীরা। তার পরে সেই প্রতিমা দশমীতে জলে ভেসে যাবে, এটাও আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারি না। তাই পুজোর চার দিন আমি মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে প্রতিমা দেখি না। দশমীতে আমার বাড়ির সামনে দিয়ে ট্রাকে চাপিয়ে বহু প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার জন্য কুলিক নদীতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই সময় বারান্দায় দাঁড়িয়ে প্রতিমাগুলোকে দেখি। ওই দৃশ্য দেখে চোখে জল এসে যায়। প্রতিমা তৈরির দিনগুলির কথা মনে পড়ে যায়। প্রতিমার কাঠামো থেকে শুরু করে শেষ মুহূর্তে সাজসজ্জা লাগানোর পর্যন্ত, প্রতিটি দিন মনে পড়ে যায়।

আমার বাবার বাড়ি মালদহের মঙ্গলবাড়ি এলাকায়। তাঁরাও প্রতিমা তৈরির কাজে যুক্ত। ১৯৭৯ সালে আমার বিয়ে হওয়ার পর শ্বশুরবাড়িতে আসি। তারপর থেকে প্রতি বছর স্বামীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দুর্গাপ্রতিমা তৈরির কাজ করে চলেছি। অন্য পুজোয় প্রতিমা তৈরির চাপ কম থাকে। তাই আমাকে হাত লাগাতে হয় না। কিন্তু দুর্গাপুজোয় আমাদের কারখানায় প্রতি বছর গড়ে ২৫ থেকে ৩০টি প্রতিমার বরাত আসে। তখন আমাকেও হাত লাগাতে হয়। এ বার শুধু চাই, আমার সারা জীবনের সঙ্গী মা দুর্গা যেন মুখ তুলে চান।

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja Idol Makers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy