জ্যোতি মিত্র।
জীবন যুদ্ধে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে স্বামীর হাত ধরে শুরু ধূপকাঠির হকারি। এর পরে, নিজেই জেলার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে ধূপকাঠি বিক্রি করতে শুরু করেন। এ ভাবে ধীরে ধীরে নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলেছেন তিনি। এক ফালি জমি কিনে সেখানে গড়ে তুলেছেন একটি ধূপকাঠির কারখানা। তিলে তিলে গড়ে তোলা সে কারখানায় এখন অঞ্জনা, রুমি, নীলমদের মতো অন্তত ১০ থেকে ১৫ জন মহিলা ধূপকাঠি তৈরি করেন। শুধু তা-ই নয়, আশেপাশের গ্রামের আরও অন্তত ৫০ জন মহিলা তাঁরই ধূপকাঠির উপকরণ বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ধূপকাঠি তৈরি করে দেন। এ ভাবে ‘দিন আনা, দিন খাওয়া’ পরিবারগুলির মহিলাদের কাছে তিনিই হয়ে উঠেছেন ‘দুর্গতিনাশিনী’। তিনি মালদহের নারায়ণপুরের জ্যোতি মিত্র। ধূপকাঠির কারবার করে নিজে ঘুরে দাঁড়ানোর পাশাপাশি, অন্য মহিলাদের এখন ভরসা জ্যোতি।
জ্যোতির লড়াই শুরু বিয়ের পর থেকেই। জানা গিয়েছে, কলকাতা থেকে স্বামী রানা মিত্রের সঙ্গে মালদহে চলে আসার পরে ইংরেজবাজার শহরের বালুচরে এক চিলতে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে পাইকারি দরে কিনে আনা ধূপকাঠি এই জেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে বিক্রি করা শুরু করেন দম্পতি। ছেলে জন্মানোর পরে কয়েক মাস এই কারবার বন্ধ রেখে ছিলেন জ্যোতি। তবে ছেলের বয়স এক বছর হতে না হতেই জ্যোতি ফের ধূপকাঠির হকারি শুরু করেন।
২০০৭ সালে পুরাতন মালদহ ব্লকের নারায়ণপুরের ঝিমুলি গ্রামে এক ফালি জমি কিনে ধূপকাঠির কারখানা চালু করে দেন। আর ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রথম দিকে, জ্যোতি নিজেই কারখানায় উৎপাদিত ধূপকাঠি বাজারে বাজারে দোকানির কাছে গিয়ে বিক্রি করতেন। পরবর্তীতে অবশ্য ব্যবসায়ীরাই এসে কারখানা থেকে ধূপকাঠি নিয়ে যান। এখন সে ধূপকাঠির পসার মালদহ জেলা তো বটেই, এমনকি, উত্তর দিনাজপুর থেকে দার্জিলিং, আসানসোল-দুর্গাপুর হয়ে বিহারেও ছড়িয়েছে।
এই কারখানা থেকেই ঘুরে দাঁড়িয়ে ইংরেজবাজার শহরে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন তিনি। খড়্গপুরে আরেকটি ধূপকাঠির কারখানা খুলেছেন এবং সেখানে স্বামী থাকেন। একমাত্র ছেলে কলকাতায় লেখাপড়া করছে। জ্যোতি বলেন, ‘‘আমার এই লড়াই কিন্তু সহজ ছিল না। অনেক কষ্ট করে, ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছি। এখন ভাল লাগে যে আমার এই ছোট্ট কারখানায় আরও অনেক মহিলাকে কাজ দিয়ে তাঁদের স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করছি।’’ জ্যোতির কারখানায় কাজ করছেন ঝাঁঝড়া গ্রামের অঞ্জনা মল্লিক। অঞ্জনা বলেন, ‘‘কারখানায় কাজ দিয়ে এই জ্যোতি দিদিই আমাদের স্বনির্ভর করেছেন।’’ একই কথা প্রতিধ্বনিত ঝিমুলি গ্রামের রুমি খাতুনের মুখে। তিনি বলেন, ‘‘স্বামীর রোজগারের সংসার চলছিল না। জ্যোতি দিদিই এসে আমাদের আয়ের পথ দেখিয়েছেন।’’ অঞ্জনা, রুমিদের মতো অন্তত ৫০ জন মহিলাকেই স্বনির্ভরতার দিকে এগিয়ে নিয়ে জ্যোতি এখন স্বপ্রভায় দীপ্ত ‘মৃন্ময়ী’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy