শহরের ব্যস্ত রাস্তার ধারে হোর্ডিং-এ সরকারি প্রকল্পের খতিয়ান। কোথাও বা রাস্তা বা আধুনিকীকরণের প্রচার। আবার শহর জুড়ে বাসিন্দাদের বাড়ির দেওয়াল প্রার্থীদের সমর্থনে দেওয়াল লিখন। গত ১৮ মার্চ শিলিগুড়ি পুরভোটের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরেও এমনভাবেই নির্বাচনী বিধিভঙ্গ হচ্ছে বলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগের তির অবশ্যই শাসক দলের দিকে। আজ, বৃহস্পতিবার প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র পরীক্ষার পর বিরোধী সিপিএম, কংগ্রেসের মত রাজনৈতিক দলগুলি রাজ্য নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানাতে চলছে।
যদিও মহকুমা নির্বাচনী দফতর থেকে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার থেকে কমিশনের নির্বাচনী বিধি মেনে ব্যবস্থা নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। হাকিমপাড়ার মহকুমা পরিষদ এবং উড়ালপুল শিলিগুড়ি থানা এলাকায় থাকা কিছু সরকারি বিজ্ঞাপন ঢেকে ফেলা ও সরানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে কমিশনের নির্দেশে শিলিগুড়ি পুরভোটের জন্য নির্বাচনী বিধির প্রতি নজর রাখার জন্য মডেল কোড অব কন্ডাক্টের (এমসিসি) স্কোয়াডও গড়া হয়েছে।
স্কোয়াডের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক বীর বিক্রম রাই বলেন, “আমরা কয়েকটি দল গড়ে কাজে নেমে পড়েছি। কয়েক জায়গায় সরকারি বিজ্ঞাপন ঢাকা হয়েছে।” তিনি জানান, আরও কিছু সরকারি বিজ্ঞাপন সরানো বা ঢাকা হবে। মনোনয়ন জমা নিয়ে কর্মীরা ব্যস্ত ছিলেন। এদিন তা শেষ হয়েছে। এরপরে পুরোদমে কাজ করা হবে। প্রধাননগর, ভক্তিনগর এবং শিলিগুড়ি থানা এলাকা ধরে ৩টি দল তৈরি হয়েছে। দলগুলি প্রথমে বিষয়গুলি চিহ্নিত করছেন। কিছু ক্ষেত্রে আমরা নোটিশও পাঠাব। রাজনৈতিক দলগুলি ব্যবস্থা না নিলে কমিশনের নির্দেশ মেনে কাজ করা হবে।
সরকারি সূত্রের খবর, গত ১৭ মার্চ ভোটের বিজ্ঞপ্তি ঘোষণার আগের দিন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কমিশনার চিঠি দিয়ে রাজ্যের মুখ্য সচিবকে চিঠি দিয়ে রাজ্যের পুরভোটের নির্বাচনী বিধি সংক্রান্ত যাবতীয় কমিশনের নির্দেশ জানিয়ে দিয়েছেন। সেখানে রাজনৈতিক দল, প্রার্থী থেকে শুরু করে মন্ত্রী, আমলারা কি করতে পারবেন বা পারবেন না যেমন রয়েছে, তেমনিই নতুন প্রকল্পের কাজ, সরকারি বিজ্ঞাপন নিয়ে যাবতীয় নির্দেশনামা রয়েছে। তেমনিই বাড়ির মালিকের অনুমতিপত্র নিয়ে দেওয়াল লিখনের বিষয়ও রয়েছে। সংশ্লিষ্ট জেলায় পুরবোর্ড গঠন না হওয়া অবধি ওই নির্দেশিকা বলবত্ থাকবে বলেও কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে।
ইতিমধ্যে দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্টের তরফে নির্বাচনী বিধি ঠিকঠাক না মালা হলে বাসিন্দাদের নিয়ে রাস্তার নামারও হুমকি দেওয়া হয়েছে। জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য জানান, লক্ষ লক্ষ সরকারি টাকা খরচ করে গোটা খরচে কাজের ফিরিস্তির ছোটবড় হোর্ডিং, ব্যানার গত কয়েকমাসে শহরে ছেয়ে গিয়েছে। এসব ভোটের মুখে নির্বাচন কমিশনের উচিত, সরিয়ে ফেলা নতুবা ঢেকে দেওয়া। কিন্তু আমরা তা দেখতে পাচ্ছি না। সরকারি প্রকল্পের খতিয়ান জানাতে মন্ত্রী, বিধায়কদের ছবি সম্বলিত হোর্ডিং জলজল করছে। আমরা কমিশনে অভিযোগ জানাচ্ছি। অশোকবাবু বলেন, “অনেক জায়গায় খবর পাচ্ছি, টেন্ডার বা বরাদ্দ করা কাজ শুরুর চেষ্টা হচ্ছে। ওয়ার্ক অর্ডার ভোটের বিজ্ঞপ্তির আগে না থাকলে কোনও কাজ করা যাবে না। এমন হলে, আমরা বাসিন্দাদের নিয়ে কাজ বন্ধ করে দেব।”
কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে আলাদা দল গড়ে সরকারি প্রচার বা বিজ্ঞাপনের ছবি তোলার কাজ শুরু করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই দলের তরফে ছবি-সহ অভিযোগপত্র রিটার্নিং অফিসার এবং নির্বাচন কমিশনে জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা বিধায়ক শঙ্কর মালাকার বলেন, “স্থানীয় মন্ত্রী মেয়র হবেন ভেবে, গত কয়েক মাসে সরকারি বিজ্ঞাপনে নিজের প্রচার করে গিয়েছেন। প্রশাসনের নজরে সেগুলি এখনও পড়ছে না। আমরা ছবি তুলছি। সব নির্বাচন কমিশনে জানানো হবে।”
বিরোধীদের বক্তব্য অবশ্য গুরুত্ব দিতে চাননি জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, “আরে সরকারির কাজের খতিয়ান তো আমরা প্রচার করবই। কেন্দ্র বা রাজ্যের ক্ষমতায় থাকা সব দলই তা করে। কেন্দ্রীয় সরকারও করে। আর কোথায় ভোটের মুখে কী থাকবে আর কী ঢাকা হবে তা তো নির্বাচন কমিশন ঠিক করবে। এতে আমাদের কী করার আছে!” গৌতমবাবু জানান, মানুষ জানে আমরা কী কাজ করছি বা কী কী কাজ শুরু করেছি। এতে ভোটে হারের ভয়ে বিরোধীরা নানা কথা বলে বাজার গরম করার চেষ্টা করছেন। আমরা আইন মেনেই সব ধরণের প্রচার করছি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy