দল বেঁধে জঙ্গলে বেড়াচ্ছিল তারা। সকলে আবার ফিরে যায় তাকে একা ফেলে। দলছুট হয়ে একা একা ঘুরে ওজন কমেছে। খাওয়াও ভুলেছে। এমনই এক হস্তীশাবককে উদ্ধার করে দিনরাত এক করে সেবা করছেন বনকর্মীরা। প্রায় ৪৮ ঘণ্টার চেষ্টায় কিছুটা সুস্থও হয়ে উঠেছে সে। তবে এখনও সঙ্কটজনক। তাই পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
বন দফতর সূত্রে খবর, দু’দিন আগে শিলিগুড়ির বিন্নাবাড়ি সেনাছাউনির কাছে মহানন্দা অভয়ারণ্যে অসুস্থ এবং দলছুট একটি হস্তীশাবককে উদ্ধার করেন বনকর্মীরা। হাতিটির শারীরিক পরিস্থিতি এতটাই খারাপ ছিল যে, নড়াচড়া করতে পারছিল না সে। টানা কয়েক দিন খেতে না-পেয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছিল। বনকর্মীরা মনে করছেন, শাবকটি আর চলতে না-পারায় তাকে ছেড়ে রেখে চলে গিয়েছে হাতির দল। শাবকটিকে অসুস্থ অবস্থায় দেখে তার দেখাশোনা শুরু করেন কার্শিয়াং বন বিভাগের আধিকারিক এবং কর্মীরা। হাতিটির শারীরিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে যান ডিএফও দেবেশ পাণ্ডে, মহানন্দা অভয়ারণ্যের ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন সন্টু দাস, বাগডোগরার রেঞ্জার সোনম ভুটিয়া প্রমুখ। হস্তীশাবকের শারীরিক অবস্থা দেখে দ্রুত মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয় ।
বেঙ্গল সাফারি পার্কের পশুচিকিৎসক নিক দোলে এবং প্রাণীসম্পদ দফতরের ফাঁসিদেওয়া ব্লকের পশুচিকিৎসক শুভঙ্কর ভৌমিক ওই হস্তীশাবকের চিকিৎসা করছেন। সাহায্যে এগিয়ে এসেছে ভারতীয় সেনা ও জাম্বো ট্রুপস স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। জঙ্গলেই ওই হাতিটির যাবতীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জানা যাচ্ছে, হাতিটির একটি পায়ে অভ্যন্তরীণ কোনও ক্ষত থেকে ঘা হয়ে গিয়েছে। সেই ঘা বেড়ে যাওয়ায় শাবকটির যাবতীয় রোগ সংক্রমণ হয়েছে। হাতিটির জ্বর রয়েছে। চিকিৎসকেরা বনকর্মীদের সহায়তায় খাবারের সঙ্গে ওষুধ দিয়ে খাওয়াচ্ছেন। সঙ্গে দেওয়া হয়েছে জল, ডাল, কলাপাতা ইত্যাদি।
আরও পড়ুন:
বিভাগীয় বনাধিকারিক (ডিএফও) দেবেশ পাণ্ডে বলেন, ‘‘দু’দিন আগে হাতিটিকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। একদমই চলতে পারছিল না। না খেতে পেয়ে হাড় বেরিয়ে গিয়েছিল। দ্রুত ওর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। কোথাও স্থানান্তর না-করে হাতিটিকে ওই জায়গাতেই রেখে চিকিৎসা করা হচ্ছে। খাবারের সঙ্গেই ওষুধ মিলিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে। কিছুটা সুস্থ হলে শাবকটির পায়ের চিকিৎসা শুরু করা হবে।’’ রেঞ্জার সোনম ভুটিয়া বলেন, ‘‘দু’জন চিকিৎসক হস্তীশাবকের চিকিৎসা করছেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে অনেকটা ভাল রয়েছে ও। ২৪ ঘণ্টা ওর শারীরিক পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে হবে।’’