সস্ত্রীক উরগেন তামাং। —নিজস্ব চিত্র।
আট মাস উৎকণ্ঠার মধ্যে কেটেছে। আদৌ বাড়ি ফিরতে পারবেন কি না, সে চিন্তায় রাতে দু’চোখের পাতা এক হত না। চারপাশে শুধু গোলাগুলির শব্দ। কিন্তু সেই শব্দ তাঁকে বিচলিত করেনি, কারণ ভারতীয় সেনায় কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল। তবে অন্য দেশের হয়ে লড়াই করতে হচ্ছে, এটা ভেবেই কষ্ট হত। শেষ পর্যন্ত ভারত সরকারের উদ্যোগে রাশিয়া থেকে বাড়ি ফিরলেন কালিম্পঙের বাসিন্দা উরগেন তামাং।
উরগেনের বাড়ি কালিম্পং পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে। সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর গুজরাতে কর্মরত ছিলেন তিনি। সেখানেই দিল্লির এক এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ হয় তাঁর। সেই এজেন্ট তাঁকে রাশিয়ায় মোটা বেতনের কাজের কথা জানান। সেই প্রলোভনেই পা দিয়ে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি রাশিয়া উড়ে গিয়েছিলেন উরগেন।
কথা ছিল রাশিয়াতে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করবেন উরগেন। রাশিয়া পৌঁছতেই তাঁকে কিছু নথিতে সই করানো হয়। তার পর উরগেনকে নিয়ে যাওয়া হয় মস্কোতে। সেখান থেকেই ভাড়াটে সৈন্য হিসাবে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধক্ষেত্রে নামানো হয়। যখন বুঝতে পারেন তিনি প্রতারিত হয়েছেন, তখন কিছুই করার ছিল না। তাঁর কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল পাসপোর্টও।
গত ২৬ মার্চ ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে থেকে একটি ভিডিয়ো করেছিলেন উরগেন। সেই ভিডিয়োতেই নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানান। তাঁকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে আবেদন করেন তিনি। তার পরেই পদক্ষেপ করে কেন্দ্রীয় সরকার। শনিবার সকালে বাগডোগরা বিমানবন্দরে পৌঁছয় উরগেনের বিমান। তাঁকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিল তাঁর স্ত্রী এবং পরিবার। কালিম্পং পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান রবি প্রধানও এসেছিলেন বাগডোগরা বিমানবন্দরে। অনেক দিন পর স্ত্রী অম্বিকা এবং দুই শিশুকে দেখে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন উরগেন।
বিমানবন্দরে নেমে উরগেন বলেন, ‘‘আমি এক জন সাধারণ মানুষ। টাকা উপার্জন করতে গিয়ে এই বিপদে পড়ব জানতাম না। আমরা চার জন একসঙ্গে ছিলাম। সেখান থেকে পালানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমি পালাতে পারিনি। তার পর থেকে আদৌ বাড়ি ফিরতে পারব কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হতে থাকে।’’ দেশে ফিরে মোদী সরকারকে ধন্যবাদ জানান উরগেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের সরকার খুব মজবুত। তারা আমাকে ফেরত আনতে সক্ষম হয়েছে। সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।’’
স্বামীকে এত দিন পর দেখতে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন উরগেনের স্ত্রী অম্বিকা। তিনি বলেন, ‘‘ভাষায় বলে বোঝাতে পারব না যে, আমরা কত উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছিলাম। দুই শিশুকে নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছিলাম। তবে এই দুর্দিনে আমাদের পাশে অনেককে পেয়েছি। সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।’’
রবি বলেন, ‘‘আমি প্রথম থেকেই উরগেনের বিষয়টা জানতাম। সেই মতো যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলাম তাঁকে ভিন্দেশ থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে আসতে। সেই মতো বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। খুব ভাল লাগছে উরগেন বাড়ি ফিরেছেন।’’
অতীতে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার হয়ে লড়াই করতে গিয়ে কয়েক জন ভারতীয়ের মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে এসেছিল। তার পরই এই প্রতারণাচক্রের বিষয়টি নজরে আসে। ভারত সরকারের তরফে বিষয়টি জানিয়ে ভারতীয়দের সতর্ক করা হয়েছে। এমনকি, রাশিয়াতে আটকে থাকা ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারেও উদ্যোগী হয়েছে মোদী সরকার। পাশাপাশি, রাশিয়া সফরে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয় মোদী এবং রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে। তার পরই ভারতীয়দের ফিরিয়ে নিয়ে আসার বিষয়টি গতি পায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy