জাতীয় সড়কের ধারে থাকা মদের দোকানগুলি সরিয়ে দিতে গেলে, বিভিন্ন এলাকা থেকেই বাধার আশঙ্কা করছে প্রশাসন। সেই সঙ্গেই প্রশ্ন উঠেছে, মদের দোকানগুলোকে সরিয়ে কোথায় বিকল্প জায়গা দেওয়া হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রশাসনের বক্তব্য, মদের দোকান যে কোনও জায়গায় হতে পারে না। তার জন্য অনেক বাধা নিষেধ রয়েছে। সে সব মেনে কতটা ফাঁকা জায়গা পাওয়া যাবে, তা নিয়েও প্রশাসনের আশঙ্কা রয়েছে।
বেশ কিছু দিন আগে শিলিগুড়ি শহর লাগোয়া রাজগঞ্জ এলাকায় একটি মদের দোকান স্থানান্তর নিয়ে প্রতিবাদের মুখে পড়তে হয় জেলা প্রশাসনকে। ৩১ ডি জাতীয় সড়ককে সম্প্রসারণ করে পূর্ব পশ্চিম মহাসড়ক তৈরির কাজ চলছে। এক লেন বাড়িয়ে চার লেন তৈরি হচ্ছে। রাস্তার দু’পাশে দখল উচ্ছেদ হয়েছে। একটি মদের দোকান এবং পানশালাকে দেড় কিলোমিটার পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। সেই জমির মাপজোক শুরু হতেই বাসিন্দারা ঘিরে ধরে বিক্ষোভ শুরু করে। প্রশাসনের দাবি বিকল্প জমির খোঁজ চলছে। এ বার একসঙ্গে এতগুলি মদের দোকান সরাতে গেলে তুমুল বিক্ষোভ হতে পারে। পূর্ব-পশ্চিম করিডর থেকে নেপাল এবং বাংলাদেশ সংযোগকারী এশিয়ান হাইওয়ে শিলিগুড়িকে ঘিরে থাকা এই দুই জাতীয় সড়কের দু’পাশে অন্তত ৫০টি মদের দোকান এবং পানশালা রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সেগুলিকে সরাতে গেলে ব্যাপক বাধা আসবে বলে আশঙ্কা প্রশাসনের।
তা ছাড়া, শিলিগুড়ি মহকুমায় এত খাস জমি খুঁজে পাওয়াও সমস্যা। মদের দোকান কোথায় হবে, তার বাধা নিষেধ বজায় রেখে বিকল্প জায়গা খুঁজে পাওয়া আদৌও সম্ভব কি না, সে প্রশ্ন তুলেছেন প্রশাসনের কর্তারাই। দার্জিলিং জেলার এক আবগারি আধিকারিক বলেন, ‘‘ছ’মাস আগেই রাজ্য আবগারি দফতর থেকে এ বিষয়ে আমাদের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছিল। সে সময়ে আমরা অন্তত ত্রিশটি দোকান স্থানান্তর করার জায়গা খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছিলাম।’’
মালদহের মধ্যে দিয়ে যাওয়া ৪৫ কিলোমিটার জাতীয় সড়কের দু’ধারে সরকারি হিসেবে ১৫টি দেশি-বিলেতি মদের দোকান রয়েছে। মদ ব্যবসায়ীদের দাবি, দোকান করার জন্য বিকল্প জায়গা খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়।
কোচবিহারে জাতীয় ও রাজ্য সড়কের পাশে ২০টির বেশি মদের দোকান রয়েছে। এর প্রায় সব ক’টিই ধাবা কাম ওয়াইন সপ। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের খবর ওই ধাবা মালিকদের কাছে পৌঁছতেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন তাঁরা। এত দিনের ব্যবসা নিয়ে কোথায় যাবেন তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন। মদ ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষে নিখিলানন্দ সাহা বলেন, “সংবাদ মাধ্যমে দেখে বিষয়টি জেনেছি। সব জেনেই মন্তব্য করব।”
দক্ষিণ দিনাজপুরে ৫১২ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে ৭টি বিদেশি এবং ৮টি দেশি মদের দোকান রয়েছে। তা ছাড়া এ জেলার জাতীয় সড়কের অধীন বংশীহারি থানার দৌলতপুর থেকে বুনিয়াদপুর, গঙ্গারামপুর, রামপুর, পতিরাম হয়ে একদিকে ত্রিমোহিনী এলাকা হয়ে হিলি। অন্যদিকে বালুরঘাট হয়ে হিলি সীমান্ত পর্যন্ত অন্তত ২০টি ধাবা এবং লাইসেন্সপ্রাপ্ত পানশালা রয়েছে। উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক, ডালখোলা ও ইসলামপুরের ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের দু’ধারে পাঁচটি পানশালা রয়েছে। প্রতিটি পানশালার সামনে একটি করে মদের দোকান সহ জেলার দু’টি জাতীয় সড়কের ধারে ৩৫টি মদের দোকান রয়েছে। রায়গঞ্জের কুলিক সেতু সংলগ্ন একটি নামি পানশালার অন্যতম কর্ণধার দুলাল কুণ্ডুর দাবি, জাতীয় সড়কের ধার থেকে পানশালা ও মদের ব্যবসা তুলে দেওয়া হলে ব্যবসায়ীদের পথে বসা ছাড়া কোনও উপায় থাকবে না। তাঁরা প্রতিবাদ আন্দোলনে নামবেন, এমন হুমকিও দিয়েছেন। আরেক পানশালা ব্যবসায়ীর প্রশ্ন, শুধু বৈধ পানশালা ও মদের দোকান তুলে দিয়েই দুর্ঘটনা রোখা যাবে না, জাতীয় সড়কের ধারে যে সমস্ত হোটেল ও ধাবায় বেআইনি মদের ব্যবসা হয়, তা কে রুখবে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy