জলপাইগুড়িতে অধীর চৌধুরী।
দল ভেঙে তৃণমূলে চলে যাওয়া জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান সহ নয়জন কাউন্সিলরকে ‘সিঁধেল চোর’ এবং তৃণমূলকে ‘চোরাশিকারির দল’ বলে কটাক্ষ করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। সোমবার সন্ধ্যার পরে সমাজপাড়ায় আয়োজিত পুরভোটের সভায় অধীরবাবু ওই কটাক্ষ করেন। বিগত পুরবোর্ড কংগ্রেসের হাতে তুলে দেওয়ায় তিনি শহরবাসীকে অভিনন্দন জানিয়ে অন্তর্ঘাতের কারণে শেষ পর্যন্ত বোর্ড দখলে না রাখতে পারার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন। দলত্যাগীদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে অধীরবাবু বলেন, ‘‘কত টাকার বিনিময়ে ‘মাথা ন্যাড়া’ করে ঘাসফুল শিবিরে ভিড়েছেন। সেটা এ বার ভোট চাওয়ার আগে বাসিন্দাদের কাছে খুলে খুলবেন।’’
অধীরবাবুর কথায়, “জলপাইগুড়ি শহরবাসী কংগ্রেসকে উজাড় করে ভালোবাসা দিয়েছে। কিন্তু সেই ভালোবাসা ধরে রাখতে পারিনি। যাঁদের টিকিট দেওয়া হয়েছিল, বুঝতে পারিনি তাঁদের মধ্যে কিছু সিঁধেল চোর ছিল।” এর পরেই ছিল দলত্যাগী পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু সহ নয়জন কাউন্সিলরের প্রতি তাঁর প্রশ্ন, “কত টাকার বিনিময়ে মাথা মুড়িয়ে তৃণমূলে গেলেন ভাই? এ বার ভোট চাইতে গেলে বাসিন্দাদের খুলে বলবেন কত টাকায় বিক্রি হয়েছেন।”
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির ওই বক্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে তৃণমূল শিবিরে। জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, “রাজনীতিতে দলবদল নতুন কোন ঘটনা নয়। টাকার জন্য নয়। শহরের উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে কংগ্রেস কাউন্সিলরদের বড় অংশ তৃণমূলে যোগ দেন।” পুরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান মোহন বসু পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, “অধীরবাবু এক সময় আরএসপি করতেন। দয়া করে তিনি বলবেন কত টাকার বিনিময়ে মাথা মুড়ে কংগ্রেসে ঢুকেছিলেন?”
২৫ আসনের জলপাইগুড়ি পুরসভায় গতবার কংগ্রেসের দখলে ছিল ১৬টি আসন। তাঁদের মধ্যে আটজন কাউন্সিলর বিদায়ী চেয়ারম্যান মোহন বসুর নেতৃত্বে গত বছর ৩০ জুন তৃণমূলে যোগ দেন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির বক্তব্যে ঘিরে ফিরে এসেছে ওই দল ভাঙার প্রসঙ্গ। অধীরবাবুর অভিযোগ, ‘‘তৃণমূল কংগ্রেস চোরাশিকারির দলে পরিণত হয়েছে। টাকা ছড়িয়ে কাউন্সিলর, বিধায়ক কিনে দল ভারি করতে ব্যস্ত। জলপাইগুড়িতেও সেটাই হয়েছে।’’ তাঁর কথায়, “দিদির আচল বড়। চিটফান্ডের অনেক টাকা। সেটাই ছড়িয়ে চোরা শিকারির মতো বিভিন্ন দল ভাঙ্গিয়ে নিজের দল ভারি করেছেন।”
এ দিন বিকেল ছটা নাগাদ সভা শুরু হলেও প্রবল শিলাবৃষ্টির জন্য তা বন্ধ হয়ে যায়। আলিপুরদুয়ারের কংগ্রেস বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায়, জলপাইগুড়ির বিধায়ক সুখবিলাস বর্মা, জেলা কংগ্রেস সভাপতি নির্মল ঘোষ দস্তিদার-সহ নেতা কর্মীরা সভাস্থল ছেড়ে আশপাশের বাড়িতে আশ্রয় নেন। প্রায় চল্লিশ মিনিট বৃষ্টির পরে ফের সভার কাজ শুরু হয়। সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ কোচবিহার থেকে সভাস্থলে পৌঁছন অধীরবাবু।
সমাজ উন্নয়নে নগরায়নের ভূমিকা, রাজ্য জুড়ে সন্ত্রাস, অর্থ লগ্নি সংস্থাগুলির বাড়বাড়ন্ত, নারী নির্যাতন, আলু চাষি এবং চা শ্রমিকদের মৃত্যুর অভিযোগ তুলে রাজ্য সরকারের তুলোধনা করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে স্বৈরাচারী বলেও আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বলছেন আমি রাজ্য চালাচ্ছি। পুরসভায় আমাদের জিতিয়ে আনুন উন্নয়ন হবে। এটা হলে গণতন্ত্র কোথায় যাবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যদি বলেন কেন্দ্রে বিজেপি সরকার আছে রাজ্যগুলি বিজেপি হলে উন্নয়ন ভাল হবে। মুখ্যমন্ত্রী কি পারবেন ওই বক্তব্যকে সমর্থন করতে?’’ তাঁর কথায়, “এ সব বলে মুখ্যমন্ত্রী স্বৈরাচারী মানসিকতার প্রমান দিচ্ছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy