Advertisement
E-Paper

ফালাকাটায় শাবের বৈঠক

গোয়েন্দাদের একাংশ জানান, ফালাকাটায় যাঁর বাড়িতে বৈঠক হয়েছিল, তিনি বর্তমানে পলাতক। ওই ব্যক্তি পরিযায়ী শ্রমিক। শাব শেখও পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কেরলে ঘাঁটি গেড়েছিল। সেই সূত্রেই দু’জনের আলাপ।

— প্রতীকী চিত্র।

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২৫ ০৭:২০
Share
Save

শুধু মুর্শিদাবাদ নয়, আনসারুল্লা বাংলা টিম (এবিটি)-এর চাঁই এবং সদস্যেরা উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটায় এক ব্যক্তির বাড়িতে বৈঠক করেছিল বলে গোয়েন্দা সূত্রের খবর। ওই সূত্রের দাবি, উত্তরবঙ্গেও সংগঠনের বিস্তার এবং কাজকর্ম নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। মূলত অসম পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া এবিটি-র দুই চাঁই নুর ইসলাম মণ্ডল এবং মহম্মদ শাব রাডি ওরফে শাব শেখের উদ্যোগেই বছর খানেক আগে ওই বৈঠক হয়েছিল। হাজির ছিল মিনারুল শেখ এবং অসম পুলিশের হাতে ধৃত মজিবুর রহমানও। ধৃতদের জেরা করেই ওই বৈঠকের তথ্য মিলেছে বলে গোয়েন্দা সূত্রের দাবি। তদন্তকারীরা ইতিমধ্যে ফালাকাটায় হানা দিয়েছেন বলেও খবর। এর পাশাপাশি বহরমপুর জেলে বন্দি খাগড়াগড় বিস্ফোরণে অভিযুক্ত জেএমবি জঙ্গি তারিকুল ইসলাম ওরফে সুমনকে নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়ে শনিবার বহরমপুর কোর্টে আবেদন করে এসটিএফ। বিচারক তা মঞ্জুর করেছেন বলে খবর।

গোয়েন্দাদের একাংশ জানান, ফালাকাটায় যাঁর বাড়িতে বৈঠক হয়েছিল, তিনি বর্তমানে পলাতক। ওই ব্যক্তি পরিযায়ী শ্রমিক। শাব শেখও পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কেরলে ঘাঁটি গেড়েছিল। সেই সূত্রেই দু’জনের আলাপ। সেই আলাপের সূত্র ধরেই ফালাকাটার বাড়িতে বৈঠকের বন্দোবস্ত হয়েছিল। তবে ফালাকাটার ওই ব্যক্তির সঙ্গে এখনও সরাসরি জঙ্গি সংগঠনের যোগ মেলেনি। ফালাকাটার ভৌগোলিক অবস্থানকেও গুরুত্ব দিচ্ছেন গোয়েন্দারা। তাঁরা বলছেন, ফালাকাটা থেকে এক দিকে যেমন অসমের দূরত্ব বেশি নয়, অন্য দিকে বাংলাদেশ সীমান্তও অদূরে। ভূটানের দিকেও সহজেই চলে যাওয়া যায়। গোয়েন্দাদের কাছে আগেই খবর, পশ্চিমবঙ্গ এবং অসমকে কেন্দ্র করে শিলিগুড়ি করিডর তথা ‘চিকেন’স নেক’-এ নাশকতামূলক কাজকর্মের ছক কষেছিল এবিটি। “সে দিক থেকে ফালাকাটাকে কেন্দ্র করে সংগঠনের বিস্তার তাৎপর্যপূর্ণ,” মন্তব্য এক গোয়েন্দাকর্তার।

উত্তরবঙ্গে এবিটি-র কার্যকলাপ নতুন নয়। বছর দুয়েক আগে কোচবিহারের দিনহাটার কুঠিবাড়ি থেকে নান্নু মিয়া নামে এক জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। বর্তমানে সে জেলবন্দি। এ ছাড়াও, কোচবিহারের সীমান্তবর্তী এলাকায় এসে বৈঠক করেছিল জঙ্গি সংগঠন আল কায়দার উপমহাদেশীয় শাখার শীর্ষ নেতা আবু তালহা। সেখান থেকে ভুয়ো ভারতীয় পরিচয়পত্রও বানিয়েছিল সে। পুলিশের খবর, উত্তরবঙ্গে জঙ্গি সংগঠনের শিকড়-সন্ধান শুরু হয়েছে।

এরই মধ্যে, বহরমপুর জেলে বন্দি খাগড়াগড় বিস্ফোরণে অভিযুক্ত জেএমবি জঙ্গি তারিকুল ইসলাম ওরফে সুমনকে নিজেদের হেফাজতে নিতে চাইছে রাজ্য পুলিশের এসটিএফ। সে ব্যাপারেও শনিবার বহরমপুর কোর্টে আবেদন করেছিল এসটিএফ। বিচারক তা মঞ্জুর করেছেন বলে খবর। সূত্রের দাবি, অসম পুলিশের হাতে ধৃত জঙ্গিদের জেরা করে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন যে, জেলবন্দি সুমনের সঙ্গে নুর, শাব, মিনারুল এবং আব্বাস আলির নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। জেলে বসেই সুমন ফোনে সংগঠনের বাকিদের সঙ্গে যোগাযোগ করত।

গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, এর পরে অসম পুলিশের হাতে ধৃত মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার দুই বাসিন্দা মিনারুল শেখ এবং আব্বাস আলিকেও হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করা হবে। এর সঙ্গে শাবকেও নিজেদের হেফাজতে নিতে চাইছেন পশ্চিমবঙ্গ এসটিএফের তদন্তকারীরা। গোয়েন্দা সূত্রের বক্তব্য, এ রাজ্যে জঙ্গিদের সংগঠনের জাল কতটা বিস্তৃত, তা জানতে সুমন-সহ বাকিদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করতে চাইছেন তদন্তকারীরা। গোয়েন্দাদের আর একটি সূত্রের বক্তব্য, খাগড়াগড় বিস্ফোরণের কয়েক জন অভিযুক্ত ইতিমধ্যে জেল থেকে বেরিয়েছে। তাদের উপরে নজরদারি শুরু করা হয়েছে। প্রয়োজনে তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, মিনারুল-আব্বাসকে জেরা করে সাজিবুল ইসলাম এবং মুস্তাকিম মণ্ডলকে যেমন গ্রেফতার করে এসটিএফ, তেমনই সাজিবুল-মুস্তাকিমকে জেরা করে আরও জনা দশেক সন্দেহভাজনের নাম মিলেছে। তাদের খোঁজ শুরু হয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Ansarullah Bangla Team falakata militants

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}