হেমতাবাদের দুর্ঘটনাস্থলে উদ্বিগ্ন বাসিন্দারা।
পৃথক দু’টি পথ দুর্ঘটনায় এক কলেজ ছাত্র সহ চার জনের মৃত্যু হয়েছে। জখম হয়েছেন এক মহিলা সহ আরও তিন যুবক। শনিবার রাতে ও রবিবার সকালে দুর্ঘটনাগুলি ঘটেছে উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদ থানার চৈনগর ও ইটাহার থানার গোটলু মোড় এলাকার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে। পুলিশ জানিয়েছে, চৈনগর এলাকার ওই দুর্ঘটনায় মৃতদের নাম মহম্মদ রুকসাদ (১৯), রাজু মহম্মদ (২৩) ও আক্রম সরকার(২২)। গোটলু মোড় এলাকার দুর্ঘটনায় মৃতের নাম সুশান্ত বর্মন (৪৬)। এ দিন সকালে গোটলু মোড় এলাকার ওই দুর্ঘটনার পর এলাকার বাসিন্দারা বেআইনি পার্কিং উচ্ছেদের কাজে পুলিশের গাফিলতির অভিযোগ তুলে প্রায় এক ঘণ্টা জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। বিক্ষোভ চলাকালীন আন্দোলনকারীরা জাতীয় সড়কের ধারে বেআইনিভাবে পার্ক করে রাখা ছ’টি ট্রাক ভাঙচুরও করেন বলে অভিযোগ। পরে পুলিশের আশ্বাসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
জেলা পুলিশ সুপার অমিতকুমার ভরত রাঠৌর জানান, মৃতদেহগুলি ময়নাতদন্তের জন্য রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। কী কারণে দুর্ঘটনাগুলি ঘটল, তা জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে। গোটলু মোড় এলাকার জাতীয় সড়কে কোন গাড়ির ধাক্কায় ওই ব্যক্তির মৃত্যু হল, তা জানার চেষ্টা চলছে। ওই এলাকার জাতীয় সড়কে বেআইনি পার্কিং বন্ধ করতে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
হেমতাবাদের দুর্ঘটনাস্থলে উদ্বিগ্ন বাসিন্দারা।
পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার সন্ধ্যায় ইটাহারের বিমলপাড়া এলাকার বাসিন্দা রুকসাদ, হেমতাবাদ বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা রাজু ও হেমতাবাদের কাশিমপুর এলাকার বাসিন্দা আক্রম আরও দুই যুবকের সঙ্গে একটি ছোট গাড়ি ভাড়া করে বিন্দোল এলাকায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। তাঁরা সকলেই বন্ধু। রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া রুকসাদ হেমতাবাদ এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করতেন। রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ বিন্দোল থেকে ফেরার পথে চৈনগর এলাকার রাজ্য সড়কে তাঁদের গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার ধারে একটি গাছে গিয়ে ধাক্কা মারে। দুর্ঘটনায় ওই তিন যুবক ছাড়াও হেমতাবাদের বাসিন্দা তাঁদের আরও দুই বন্ধু কুন্তল দাস, সারুক আলি ও চালক সুমন ভৌমিক জখম হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় এরপর বাসিন্দারা জখমদের উদ্ধার করে হেমতাবাদ ব্লক প্রাথমিক হাসপাতালে ভর্তি করালে সেখানেই কিছু ক্ষণ পর রুকসাদের মৃত্যু হয়। বাকিদের রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে রেফার করে দেন চিকিত্সকেরা। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে রাজুর মৃত্যু হয়। গভীর রাতে চিকিত্সাধীন অবস্থায় আক্রম মারা যান। এ দিন জখমদের মধ্যে সারুককে শিলিগুড়ির উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে রেফার করে দিয়েছেন রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে কুন্তল ও সুমন আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিত্সাধীন। জখমদের সকলেরই হাত, পা, মাথা, মুখ, চোখ সহ শরীরের নানা জায়গায় গুরুতর চোট রয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর।
হেমতাবাদ থানার ওসি মনোজিত দাস বলেন, ‘‘ফাঁকা রাস্তা পেয়ে চালক অত্যন্ত দ্রুত গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। সেই সময় চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে গাড়িটি রাস্তার ধারের গাছে গিয়ে ধাক্কা মারে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। গাড়িটিকে আটক করা হয়েছে।’’
অন্য দিকে, এদিন সকাল সাতটা নাগাদ ইটাহারের বাশথুপি এলাকার বাসিন্দা পেশায় দিনমজুর সুশান্তবাবু তাঁর স্ত্রী চিমোদেবীকে সাইকেলে চাপিয়ে কাজের খোঁজে ইটাহারের দিকে যাচ্ছিলেন। চিমোদেবীও স্বামীর সঙ্গে দিন মজুরের কাজ করেন। সেই সময় বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে রাজ্য সড়ক থেকে জাতীয় সড়কে ওঠার সময়ে আচমকা রায়গঞ্জগামী একটি গাড়ি মুখোমুখি চলে আসলে চলন্ত সাইকেলের পেছনের ক্যারিয়ারে বসে থাকা চিমোদেবী আতঙ্কে লাফিয়ে নেমে পড়ার চেষ্টা করলে তিনি রাস্তার ধারে ছিটকে পড়ে জ্ঞান হারান। সেই সময় নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে সুশান্তবাবু সাইকেল নিয়ে ওই গাড়িটির সামনের চাকার সামনে পড়ে যান। তখনই রায়গঞ্জগামী ওই গাড়িটি তাঁকে পিষে দিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। চিমোদেবীকে বাসিন্দারা ইটাহার ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে সেখানে প্রাথমিক চিকিত্সার পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাঁর হাতে ও পায়ে সামান্য চোট লেগেছে। এরপরেই এলাকার বাসিন্দারা বেআইনি পার্কিং উচ্ছেদের কাজে পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে জাতীয় সড়ক অবরোধ শুরু করেন। ছ’টি ট্রাক ভাঙচুর হয় বলে অভিযোগ। প্রায় এক ঘণ্টা অবরোধ চলার পর পুলিশের আশ্বাসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
আন্দোলনকারী বাসিন্দাদের তরফে দীপককুমার বর্মন, সত্যজিত মিত্র, উত্পল দাস ও বীরেন বর্মন বলেন, ‘‘পুলিশের নজরদারি না থাকায় দীর্ঘ দিন ধরে জাতীয় সড়কের ধারে চালকদের একাংশ বেআইনিভাবে ট্রাক পার্ক করে সংলগ্ন বিভিন্ন হোটেল ও ধাবায় গিয়ে খাওয়াদাওয়া করে বিশ্রাম নেন। ফলে বাসিন্দারা সাইকেল ও বাইক নিয়ে রাজ্য সড়ক থেকে জাতীয় সড়কে ওঠার মুখে উল্টো দিক থেকে কোনও গাড়ি আসছে কি না, তা দেখতে পান না। সেই কারণেই, এদিন দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।’’
সুশান্তবাবুর স্ত্রী চিমোদেবীর দাবি, তাঁর স্বামী সাইকেল নিয়ে রাজ্য সড়ক থেকে জাতীয় সড়কে উঠছিলেন, তিনি চলন্ত সাইকেলের পিছনে বসে ছিলেন। সেই সময় জাতীয় সড়কের ধারে কয়েকটি ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকায় উল্টো দিকের রাস্তা দেখা যাচ্ছিল না। তখনই আচমকা একটি গাড়ি মুখোমুখি চলে আসায় তিনি আতঙ্কে সাইকেল থেকে লাফ দেন। এরপর তাঁর আর কিছুই মনে নেই। সেটি বাস না ট্রাক ছিল, তাও তাঁর মনে নেই। তাঁর কথায়, পুলিশ জাতীয় সড়কে বেআইনি পার্কিং বন্ধ করলে এদিন স্বামীকে এভাবে মরতে হত না। তিনি বলেন, ‘‘নাবালিকা তিন মেয়েকে নিয়ে এবারে কীভাবে সংসার চালাব, জানি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy