Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Sabuj Sathi

Cowherd: কোনও দিন সবুজ সাথীর সাইকেল এক হাতে নিয়ে গরু চরাতে যায়, কোনও দিন সাইকেলে যায় স্কুলে

দোমহনী পলহোয়েল স্কুলের ছাত্র মোরশেদ। সে জানায়, স্কুল খোলার দিনই ক্লাসে গিয়েছিল সে।

যাপনচিত্র: সবুজ সাথীর সাইকেল নিয়ে গরু চরাতে বেরিয়েছে মোরশেদ আলি।

যাপনচিত্র: সবুজ সাথীর সাইকেল নিয়ে গরু চরাতে বেরিয়েছে মোরশেদ আলি। নিজস্ব চিত্র।

অনির্বাণ রায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২১ ০৭:০২
Share: Save:

রাস্তার ধারে সবুজ সাথীর সাইকেল রেখে আলপথ দিয়ে হাঁটছিল মোরশেদ আলি। পাশের সব খেতে ধান কাটা হয়ে গিয়েছে। মাটির উপরে বেরিয়ে আছে ধান গাছের গোড়ার অংশ। সেগুলি টপকে টপকে হাঁটছিল দুটো গরু। মোরশেদদের বাড়ির। গরু দু’টিকে খেতে বেঁধে ফিরে এল দশম শ্রেণির ছাত্র মোরশেদ। সাইকেল নিয়ে সে ঘুরবে ওই রাস্তা দিয়ে, নজরে রাখবে গরু দু’টিকে।

সূর্য তখন মাঝ আকাশ থেকে ঢলতে শুরু করেছে। মোরশেদ হিসেব করে, স্কুলে দ্বিতীয় পিরিয়ডটা শেষের দিকে। কিন্তু আজ মোরশেদের গরু চরানোর দিন। তাই সে স্কুলে যায়নি। মোরশেদ প্রতিদিন স্কুলে গেলে গরু দু’টিকে মাঠে বাঁধা হবে না। ওর ভাই সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। গরু বাঁধতে শেখেনি এখনও। বাবা টোটো নিয়ে বের হয় সকাল সকাল। মোরশেদ তাই হিসেব করে নিয়েছে, সপ্তাহে চারদিন স্কুলে যাবে। বাকি দিনগুলি মাঠে কাজ করবে। করোনাকালে প্রায় দু’বছর স্কুল বন্ধ থাকায় মাঠে কাজ করেছে সে। স্কুল খোলার পরে পড়াশোনার সঙ্গে বাড়ির কাজ ভাগ করে নিয়েছে সে।

দোমহনী পলহোয়েল স্কুলের ছাত্র মোরশেদ। সে জানায়, স্কুল খোলার দিনই ক্লাসে গিয়েছিল সে। দীর্ঘদিন পরে স্কুল খোলায় অনেক বন্ধুকেই আর ক্লাসে দেখেনি মোরশেদ। বুধবার দুপুরে উত্তর মৌয়ামারির পিচ রাস্তায় দাঁড়িয়ে মোরশেদ বন্ধুদের নাম পরপর বলতে থাকে। মোরশেদ বলে, “একজন রঙের কাজ করে, একজন গ্যারাজে যায়, একজন নাকি কাজ খুঁজতে বাইরে চলে গিয়েছে। শুনেছি ওরা আর স্কুলে আসবে না। আমি স্কুলে যাচ্ছি। আজকে শুধু যাইনি।” স্কুলে না গেলেও এ দিন সকালে গৃহশিক্ষকের কাজে পড়তে গিয়েছিল এই ছাত্র। মোরশেদ বলে, “আমি এ বার ধান বুনেছি, ধান কেটেছি। বাবা তো টোটো চালায়। মাঠে কাজ করতে সময় পায় না। আমার স্কুল বন্ধ ছিল তাই। মাঠে কাজ করেছি।” ধানের পরে এ বার আলু বোনা হবে জমিতে। মোরশেদ আলু বুনবে। আগে-পরে স্কুলেও যাবে। এ ভাবেই ভাগ করে নিয়েছে রোজনামচা।

করোনাআবহেই স্কুল খোলার পরে জলপাইগুড়ি-সহ জেলাগুলির স্কুলে গরহাজির পড়ুয়ার সংখ্যা অনেকে। শিক্ষকদের দাবি, দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় পড়াশোনার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন থাকা এবং পরিবারের আয় বৃদ্ধিতে কাজে হাত দেওয়া এই দুই কারণের জেরেই অনেক পড়ুয়া আর ক্লাসে ফেরেনি। তাদের মাঝে মোরশেদও রয়েছে। যে মাঠে কাজ করলেও স্কুলে যাওয়া বন্ধ করতে চায় না।

মোরশেদ কোনও কোনও দিন সবুজ সাথীর সাইকেল এক হাতে নিয়ে গরু চড়াতে যায়, কোনও কোনও দিন সবুজ সাথীর সাইকেল চেপে স্কুলেও যায়।

অন্য বিষয়গুলি:

Sabuj Sathi jalpaiguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE