Advertisement
২৪ জানুয়ারি ২০২৫
Shabana Azmi on Relationship

আধুনিক পরিবার কেমন হয়? নারীবাদ থেকে বিবাহ, সব আগলে সুখে থাকার সহজ-পাঠ দিলেন শাবানা

কলকাতায় এসেছেন কয়েক দিনের কাজে। তার মধ্যেই সময় করে আনন্দবাজার অনলাইনের মুখোমুখি বসলেন অভিনেত্রী শাবানা আজমি। বেশি বয়সে কাজ করা থেকে সংসার সুখের রাখা, ভাল থাকার নানা দিক নিয়ে টোটকা দিলেন তিনি।

সব সময় হাসি খুশি থাকতে পছন্দ করেন শাবানা আজমি।

সব সময় হাসি খুশি থাকতে পছন্দ করেন শাবানা আজমি। —ফাইল চিত্র।

সুচন্দ্রা ঘটক
শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:৫০
Share: Save:

নারীবাদ মানে মেয়েরা এগিয়ে, ছেলেরা পিছিয়ে— এমনটা নয়! আজকাল অনেকেই বড় ভুল ব্যাখ্যা করেন। সে সব দেখেই চিন্তা হয়। শীতের দুপুরে কলকাতার হর্টিকালচারাল গার্ডেনে চিনি ছাড়া কালো চায়ে চুমুক দিতে দিতে নারীবাদ নিয়ে এমনই মন্তব্য করলেন শাবানা আজমি।

‘‘আমি যদি রাগ করি জাভেদ বাল্ব বদলাতে পারে না বলে, সে-ও সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিয়ে দেয়, তা হলে কবিকে না বিয়ে করে কোনও ইলেক্ট্রিশিয়ানকে বিয়ে করলেই তো পারতে,’’ হাসতে হাসতে বলেন শাবানা। থামেন না, বলে চলেন। স্বামী জাভেদ আখতারের প্রসঙ্গটি উদাহরণ মাত্র। কিন্তু শাবানা বলেন, ‘‘জাভেদ বাড়ির কাজ করল না বলে কি আমি কখনও জাভেদের জামা ইস্তিরি করি না? করি। কেন করব না? ও রকম হিসাব করে কোনও সম্পর্ক চলে না। ও সব নারীবাদের ভুল ব্যাখ্যা মাত্র,’’ বক্তব্য শাবানার। তাঁর মতে, নারীবাদ হল সম্মান নিয়ে এগিয়ে চলা। নিজের মতো করে কাজ করতে পারা, বাঁচতে পারা। ‘‘আমি যে সময়ে কাজ শুরু করেছিলাম, তখন কেউ ভাবতেই পারতেন না এত বছর পরেও আমার অভিনয় করার সুযোগ থাকবে। বেশি বয়সি নারীদের জন্য চরিত্র তৈরি হবে। এখন হয়। সমাজ বদলেছে। মেয়েদের অবস্থানও ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে। তবে আরও অনেকটা পথ চলতে হবে,’’ মনে করেন শাবানা।

শাবানা আজমি।

শাবানা আজমি। ছবি: সংগৃহীত।

কথা শুরু হয়েছিল ৫০ বছর ধরে টানা কাজ করে যাওয়া নিয়ে। সম্প্রতি এ শহরের মঞ্চে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে শাবানাকে। কখনও বড় পর্দা, কখনও মঞ্চ, কখনও বা পাঠ, কখনও বক্তৃতা— এখনও কত রকম কাজ যে করেন ৭৪ বছর বয়সি এই অভিনেত্রী। এত বছর ধরে স্বাস্থ্য, সংসার-সহ চারদিক সামলে কী ভাবে রকমারি কাজ করে চলেছেন তিনি? সে আড্ডাই সহজ ছন্দে গড়াল নারী স্বাধীনতা, মেয়েদের জীবন, সুস্থ থাকা, বিয়ে ও শেষমেশ নারীবাদে। কারণ, শাবানার কাছে উত্তরটা সহজ। তিনি মনে করেন, ভাল আছেন বলে ভাল কাজ করছেন। আর ভাল থাকার জন্য স্বাস্থ্যের যত্ন যেমন প্রয়োজন, সম্পর্ক-সংসার সবটা সুন্দর রাখতে পারাও জরুরি। আর তার জন্য রেষারেষি কাটিয়ে ভালবাসতে জানা দরকার।

তবে স্বাস্থ্য আর সম্পর্ক আলাদা বিষয় বলে এখন আর মনে করেন না শাবানা। ‘কোল ইন্ডিয়া কলকাতা লিটারারি মিট’-এর আমন্ত্রণে এসেছিলেন কলকাতায়। সেখানে একটি আলোচনাসভায় যোগ দেন। কাজের ফাঁকে চায়ের আড্ডায় বসে বললেন, ‘‘যে কোনও ব্যক্তির অনেকগুলি দিক থাকে তো বটেই, কিন্তু সব ক’টা একে-অপরের সঙ্গে জড়িয়েও থাকে।’’ স্বাস্থ্য ও সম্পর্ক ভাল রাখার জন্য তবে সারা দিনে কী কী করেন অভিনেত্রী?

রোজ সকালে উঠে হাঁটতে যাওয়ার চেষ্টা করেন! এমনই উত্তর আসে। রোজ না হলেও অনেক দিনই বেরোন। একা নয়, দু’জনে। ওই সময়ে শরীরচর্চা হয়ে যায়, আবার স্বামী জাভেদের সঙ্গে গল্প করে মনটাও ভাল হয়। এখনও দু’জনে একসঙ্গে দিনটা শুরু করতে পারলে ভাল লাগে। আর একা একা হাঁটতে যাওয়ার ইচ্ছাও খুব একটা হয় না বলে জানান ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানি’ ছবির ‘যামিনী চ্যাটার্জি’! মুচকি হেসে তার সঙ্গেই জুড়ে দেন, ‘‘তবে সারা দিনে ওইটুকুই দেখা হয় জাভেদের সঙ্গে। তার পরেই যার যার সহকারী এসে দিনের কাজের তালিকা ধরিয়ে দেন হাতে, আর আমরা আলাদা আলাদা দিকে ছুটি। ওই জন্য এত বছর বিয়েটা টিকে আছে, বুঝলেন? এর বেশি দেখা হলে ঝামেলা ছিল!’’

এখনও দু’জনে একসঙ্গে দিনটা শুরু করতে পারলে ভাল লাগে। জাভেদ আখতার এবং শাবানা আজমি (ডান দিকে)।

এখনও দু’জনে একসঙ্গে দিনটা শুরু করতে পারলে ভাল লাগে। জাভেদ আখতার এবং শাবানা আজমি (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।


সম্পর্কে ভারসাম্য বজায় রাখার কথা বললেন কি শাবানা? ‘‘একেবারেই তাই। এক জনের থেকে সব চাওয়া ঠিক নয়। অনেক মেয়ে ওইটাই ভুল করে ফেলে। একই লোক প্রেমিক হয়ে সারাদিন আশপাশে ঘুরবেন, আর তিনি সংসার খরচ জোগাবেন, অসুস্থতায় পাশে থাকবেন, সব হয় নাকি!’’ সহজ ভঙ্গিতে উত্তর দিলেন জাভেদ-পত্নী। টানা ৫০ বছর ধরে কাজ করে চলেছেন তিনি। ১৯৭৪-এ চারদিকে হইহই ফেলে দেওয়া ‘অঙ্কুর’ ছবির সেই সময় থেকে এ কাল, নানা চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। সকালে একটু হাঁটা ছাড়া নিজেকে সতেজ রাখেন কী করে শাবানা? চিরতার জল কিংবা কোনও টনিকে ভরসা করেন নাকি?

দিনে এক বার নিজের ঘরটা ফুল দিয়ে সাজান। সে কাজটি করতে ভাল লাগে সবচেয়ে বেশি। ওটিই তাঁর কাছে টনিক। বলেন, ‘‘এতে ঘর ভাল থাকে, মন ভাল থাকে। আবার তার প্রভাবে শরীর-স্বাস্থ্যও ভাল থাকে!’’ সম্পর্ক ও সংসার সুন্দর থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন শাবানা। তবে এর কোনও নিয়ম সে অর্থে নেই। বলেন, ‘‘কার বিয়ে বা সংসার কোন টোটকায় ভাল থাকবে, সেটা সে-ই সবচেয়ে ভাল বুঝবে। বই মেনে এ সব হয় না। তাই আবার পুঁথিগত বিদ্যা নারীবাদ নিয়ে না ফলানোই শ্রেয়। নারীবাদ একটি স্বাভাবিক, সাধারণ কথা বলে। তা হল সাম্যের কথা। সম্মানের কথা। কী করলে নিজের সম্মান রক্ষা হচ্ছে, বুঝতে হবে।’’ তার সঙ্গে সংসার-সম্পর্ক-ভালবাসায় জটিলতা সৃষ্টি করার কোনওই যুক্তি নেই বলে মনে করেন তিনি। নিজের উপলব্ধি ও জ্ঞান-বিচার ছাড়া, অন্যকে অনুকরণ করে যদি কেউ চলতে চান, তাতে বিপদ হবে। বলেন, ‘‘আমি রান্না একদম পারি না। আমি রান্না করেছি শুনলেই বাড়ির সকলে ভয় পান। সব মেয়ে রান্না করতে পারবেন, এমন কোনও হিসাব নেই। আবার আমি রান্না পারি না মানে আমার সংসারে শান্তি নেই, তা-ও নয়। কারণ হিসাব ও রকম হয় না।’’

সংসার-ভালবাসার হিসাবের প্রসঙ্গেই ওঠে স্বামী জাভেদের প্রাক্তন স্ত্রী বলিউডে চিত্রনাট্য লেখিকা হানি ইরানির কথা। তাঁর সঙ্গে শাবানার সম্পর্ক যথেষ্টই সুন্দর বলে শোনা যায়। সে বিষয়টিও তো খানিক হিসাবের বাইরে, তাই না? প্রশ্ন পছন্দ হয় শবানার। বলেন, ‘‘এতে হানির অবদান অনেকটা। কোনও দিনও ওদের দুই সন্তানকে আমার বিরুদ্ধে যেতে শেখায়নি হানি। আমি ওদের ভালবাসি, ওরাও আমাকে ভালবাসে।’

প্রাক্তন ও বর্তমান স্ত্রী এবং সন্তানদের সঙ্গে জাভেদ আখতার।

প্রাক্তন ও বর্তমান স্ত্রী এবং সন্তানদের সঙ্গে জাভেদ আখতার। —ফাইল চিত্র।

এখন না হয় জাভেদ ও হানির পুত্র ফারহান আখতার ও কন্যা জোয়া আখতার বড় হয়েছেন, তাঁদের নিজস্ব বিবেচনা আছে, ছোটবেলায় এমন পারিবারিক মেলবন্ধন বজায় রাখতে অসুবিধা হয়নি? না কি আধুনিক পরিবার এমনও হয়? সব সময়ে সবই হয়, যদি সম্মান ও ভালবাসা থাকে, মনে করেন শাবানা। ব্যক্তিগত রুচি, শিক্ষা ও সাহসের উপর সম্পর্কের ধরন নির্ভর করে। নিজের স্বামীর বিবেচনার কথা বিশেষ করে উল্লেখ করেন এ ক্ষেত্রে। বলেন, ‘‘জাভেদ শুধু বলেছিল, এ নিয়ে অন্যদের সঙ্গে বেশি কথা বলার দরকার নেই। নিজেরা নিজেদের মতো করে সকলের সঙ্গে সহজ সম্পর্ক রাখি, ঠিক যার যতটা ইচ্ছা হয়। হানির যদি কখনও মাঝরাতেও কোনও বিপদ হয়, ও জাভেদকেই ফোন করবে। জাভেদ যাবে। আমি আটকাব না, অবাকও হব না। এটাই স্বাভাবিক বলে মনে করি। কাগজ দিয়ে তো সম্পর্ক নির্ধারিত হয় না। আবার তেমন আমার আর জাভেদের ৪০ বছরের সংসার জীবন। তা খুব গাঢ়। সেটা তো আমারই। তাই না?’’

সাধারণত এ সময়ে সংসার ভাঙা, ছোট পরিবার, এ সব নিয়েই আলোচনা হয়ে থাকে বেশি। কিন্তু বদলে যাওয়া সময়ে যে পরিবারের সংজ্ঞাও নানা ধরনের হতে পারে, কথায় কথায় তা-ই মনে করিয়ে দিলেন শাবানা। নিজেদের কথা বলতে বলতে এক অর্থে সুখে থাকার পাঠই দিলেন ‘অর্থ’, ‘মাসুম’, ‘ফায়ার’-এর মতো নানা ছবিতে নানা রূপে দেখা দেওয়া অভিনেত্রী।

অন্য বিষয়গুলি:

Shabana Azmi Javed Akhtar Farhan Akhtar Zoya Akhtar Relationship Goals Relationship Tips Celebrity Bollywood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy