Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

স্বামী-স্ত্রীর পদবি আলাদা, ভোটার-আধার কার্ডে নাম নিয়ে আতঙ্ক

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকর হতে চলায় ওই সব কার্ডে থাকা ভুল কিভাবে সংশোধন করবেন তা নিয়ে রীতিমত আতান্তরে পড়েছেন ওই দম্পতি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

জয়ন্ত সেন 
ভাবুক শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৫:৫০
Share: Save:

মঙ্গলবার দুপুর ১২টা। পুরাতন মালদহের ভাবুক পঞ্চায়েতের আদিবাসী প্রভাবিত গ্রাম বাথান-এ তখন পুরুষ থেকে শুরু করে মহিলারা বেশির ভাগই কেউ জমিতে ধান কাটার কাজে ব্যস্ত বা কেউ ব্যস্ত আলু চাষের জন্য জমি তৈরিতে। ঠিক সে সময় মাঠের কাজকর্ম বাদ দিয়ে মাটির বাড়ির বারান্দায় বসে একমনে আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, ডিজিটাল রেশন কার্ড মেলাতে ব্যস্ত ছিলেন বাথান গ্রামেরই বাসিন্দা লক্ষ্মীরাম মার্ডি ও তার স্ত্রী ছামকি হাঁসদা। কিন্তু কেন?

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকর হতে চলায় ওই সব কার্ডে থাকা ভুল কিভাবে সংশোধন করবেন তা নিয়ে রীতিমত আতান্তরে পড়েছেন ওই দম্পতি। তাঁদের অভিযোগ, ভোটার কার্ড সংশোধনের ব্যাপারে এর আগে গ্রামের বুথে গিয়ে অনেকবার দরখাস্ত পূরণ করে জমা দিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। যে ভুল সে ভুল থেকে গিয়েছে। আর এই ভুলের জেলে তাদের দেশান্তর হতে হবে না তো? এই প্রশ্নেই তারা রীতিমতো আতঙ্কে।

শুধু এই দম্পতিই নয়, বাথান গ্রাম ঘুরে আদিবাসী বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাঁদের প্রায় বেশির ভাগ পরিবারে সদস্যদেরই আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, ডিজিটাল রেশন কার্ডে প্রচুর ভুল রয়েছে। কারও পদবি আধার কার্ডে এক রয়েছে, ভোটার কার্ডে অন্য। আবার কারও জন্ম তারিখ নিয়ে সমস্যা।

এই পরিস্থিতিতে কোথায় যাবেন, কী করবেন, ভেবে পাচ্ছেন না। জমিতে দিনমজুরি করে বেশিরভাগ পরিবারের অন্নসংস্থান হলেও এখন এইসব ভুল ভ্রান্তি সংশোধন করতে কেউ ছুটছেন মালদহে, কেউ আবার ছুটছেন পঞ্চায়েত থেকে ব্লক অফিসে। আবার যাঁদের পূর্বপুরুষদের বাড়ি ছিল ঝাড়খণ্ড তাঁরা সেই পরিচয় সংক্রান্ত কাগজ জোগাড়ে ছুটছেন সেখানে। শুধু এই বাথান গ্রামই নয়, ভাবুক পঞ্চায়েতের আদিবাসী প্রভাবিত চিড়াকুটি, মজিবনগর, ডোমানটোলা সব গ্রামেই একই চিত্র। আদিবাসী ওই বাসিন্দাদের আতঙ্ক একটাই, ‘‘দেশে থাকতে পারবেন তো?’’

লক্ষ্মীরামের স্ত্রী ছামকি বলেন, ‘‘আধার কার্ডের ভুল সংশোধন করতে দু’সপ্তাহ আগে মালদহের একটি ব্যাঙ্কে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের চার মাস পর আসতে বলেছে।’’ একই রকম ভুল থাকায় উদ্বেগে রয়েছেন ওই গ্রামেরই তালু সোরেন, জবা হাঁসদা রানি মুর্মু, সুবোধ মুর্মু সহ কয়েকশো বাসিন্দার। তাঁরা বলেন, ‘‘দিনমজুরি করে আমাদের সংসার চলে কিন্তু এখন নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন কার্যকরের পথে থাকায় আমরা ভোটার কার্ড, আধার কার্ড সংশোধন করার জন্য কাজ বন্ধ করে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।’’ কিন্তু মোট কথা হল, আতঙ্ক এখনই পেটে আঘাত করছে। দিনমজুরি ছেড়ে কার্ড সংশোধনে ছুটতে গিয়ে মার খাচ্ছে রোজগার।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy