যাত্রা: শিলিগুড়ি গার্লস স্কুলের ৭৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান ছিল মঙ্গলবার। মঞ্চে স্কুলের শিক্ষিকাদের সঙ্গে মন্ত্রী গৌতম দেব। ছবি: বিনোদ দাস।
সে এক বিশাল শোভাযাত্রা। রাস্তার দু’ধার ধরে লাইন করে এগোচ্ছিল সকলে। বর্তমান, প্রাক্তন— সব মিলেমিশে একাকার। রংবেরঙের পোশাকে নাচের দল, তার পিছনে ট্রাকের উপরে গানের দল। সামনে বিশাল প্ল্যাকার্ড হাতে হাতে।
সেটা ছিল ১৯৯৬ সাল। শিলিগুড়ি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষের উদ্যাপন। যাঁরা ২৫ বছর আগেকার সেই মিছিলে হেঁটেছেন, তাঁরা মঙ্গলবার এই স্কুলটির চত্বরে ঢুকলে বুঝতে পারবেন, কতটা বদলে গিয়েছে পারিপার্শ্বিক। এমনকি বদল এসেছে স্কুলবাড়ির শরীরেও। কিন্তু মঙ্গলবার ৭৫ বছর উদ্যাপনে স্কুল প্রাঙ্গণে পা রেখে প্রাক্তনীরা ঠিক খুঁজে পেয়েছেন পুরনো সেই আমগাছটাকে। পেয়েছেন সেই ক্লাসঘরের চেনা গন্ধ, সবুজ মাঠের হাতছানি। অতিমারির আবহে অনুষ্ঠান কিছুটা ছোট হলেও নিজের স্কুলকে কেউ মাঠে দাঁড়িয়ে, কেউ ভার্চুয়াল ভাবে খুঁজে পেলেন এই দিন।
এ দিন সকালে ৭৫টি বেলুন উড়িয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। স্কুল প্রাঙ্গণে একদল প্রাক্তনী তখন উপস্থিত। তাঁদের তো বটেই, স্কুলেরও অনেকের মোবাইল ফোন থেকে দ্রুত সেই সব ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। মাঠ থেকেই অনেকে ভিডিয়ো কলে ধরলেন অন্য বন্ধুদের। প্রাঙ্গণে বন্ধুদের সঙ্গে হাজির অর্চনা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘স্কুল অনেকটাই বদলে গিয়েছে। দেখলাম, প্লে-শেডটা এখন অডিটোরিয়াম হয়ে গিয়েছে।’’ এর মধ্যেই কারও মনে পড়ল চুলে লাল ফিতে আর সাদা ফ্রকের দিনগুলি, কেউ আবার মনে মনে হাঁটলেন মেরুন পাড় সাদা শাড়িতে। কেউ জুড়ে দিলেন কবে কোন শিক্ষিকার কাছে বকুনি খেয়েছেন, তার গল্প। কেউ এক্কা দোক্কা খেলা বা রাম’দার আচারের স্বাদ পেলেন যেন এ দিন।
সদ্য প্রাক্তনীরা এ দিন এই স্কুলজীবন নিয়েই মঞ্চস্থ করেছে ছোট্ট একটি নাটক। প্রাক্তনীদের অনেকেই এ দিন গান-নাচ-গীতিআলেখ্যর মতো নানা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এক প্রাক্তনী পৌষালী হালদারের কথায়, ‘‘কলেজে গিয়েও স্কুলের কথা খুব মনে পড়ত। ৭৫ বছর পূর্তির কথা শুনে সব কাজ ফেলে ছুটে এসেছি।’’ হাজির ছিলেন প্রাক্তন শিক্ষিকারাও।
শিলিগুড়ির অন্যতম পুরনো এই স্কুলটিকে রাজ্যে মডেল স্কুল বানানোর স্বপ্ন পর্যটমন্ত্রী গৌতম দেবের। তাই পরিচালন সমিতির সভাপতি পদে এসে আমূল পরিবর্তন ও কঠোর অনুশাসনের কথা বলেছেন তিনি। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘বহু ইতিহাসের সাক্ষী এই স্কুল স্বমহিমায় উজ্জ্বল থাকুক।’’ বর্তমান প্রধান শিক্ষিকা অত্যুহা বাগচী এই স্কুলেরই প্রাক্তনী। বললেন, ‘‘স্কুলকে রাজ্যে মডেল হিসেবে তৈরি করাই এখন লক্ষ্য।’’ জানালেন, শিক্ষিকা হলেও আজও পুরনো দিনগুলি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। এ দিন স্কুলের ৭৫ তম বর্ষপূর্তিতে গাছ লাগানো হয়। সিসি ক্যামেরার উদ্বোধনও হয়।
এমনই স্মৃতিতে কারও মুখ উজ্জ্বল হয়েছে, কারও চোখ ভিজে গিয়েছে। কেউ কেউ চোখ বন্ধ করে দেখতে চেয়েছেন পুরনো ইটরঙা বাড়িটাকে। তবে সকলেরই কানে বেজেছে একটা পংক্তি: ‘আমাদের বিদ্যানিকেতন, আমাদের গৌরবেরই ধন।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy