Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে গেল প্রাণ

কুয়ো থেকে এক জনকে উদ্ধারে নেমে মৃত্যু দু’জনের

এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করতে কুয়োয় নেমে মারা গেলেন দুই যুবক। বৃহস্পতিবার দুপুরে শিলিগুড়ির চম্পাসারির ঘটনা। দমকল এসে কুয়ো থেকে ওই দু’জনের দেহ উদ্ধার করে। পুলিশ জানিয়েছে, দু’জনের মধ্যে এক জনের পরিচয় রাত পর্যন্ত জানা যায়নি।

মৃত ডোলো সিংহের শোকস্তব্ধ কন্যা। বৃহস্পতিবার ছবিটি তুলেছেন সন্দীপ পাল।

মৃত ডোলো সিংহের শোকস্তব্ধ কন্যা। বৃহস্পতিবার ছবিটি তুলেছেন সন্দীপ পাল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৬ ০২:০৫
Share: Save:

এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করতে কুয়োয় নেমে মারা গেলেন দুই যুবক। বৃহস্পতিবার দুপুরে শিলিগুড়ির চম্পাসারির ঘটনা। দমকল এসে কুয়ো থেকে ওই দু’জনের দেহ উদ্ধার করে। পুলিশ জানিয়েছে, দু’জনের মধ্যে এক জনের পরিচয় রাত পর্যন্ত জানা যায়নি। অন্য জনের নাম ডোলো সিংহ (৫৫)। তিনি ওই এলাকারই বাসিন্দা। যাঁর পরিচয় জানা যায়নি, তিনি পেশায় রিকশাচালক বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। তবে এ দিনই তাঁকে প্রথম এলাকায় দেখা গিয়েছে বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন। কেউ কেউ দাবি করেছেন, তিনি বালুরঘাটের বাসিন্দা, দিন কয়েক আগে শিলিগুড়িতে রিকশা চালাতে এসেছিলেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে চম্পাসারির কদমতলা এলাকার বাসিন্দা গায়ত্রী প্রধানের বাড়িতে কুয়ো সাফাই করতে গিয়েছিলেন তাঁদেরই প্রতিবেশী রাজেশ খাতি। কোমরে দড়ি বেঁধে রাজেশবাবু কুয়োয় নেমেছিলেন। গায়ত্রীদেবীর দাবি, দড়িটা হঠাৎই খুব জোড়ে নড়তে থাকায় তিনি কুয়োর দিকে এগিয়ে যান। তত ক্ষণে কুয়োর ভিতর থেকে রাজেশবাবুর আর্ত চিৎকারও ভেসে আসতে থাকে। গায়ত্রীদেবী বলেন, ‘‘ভয় পেয়ে আমিও চিৎকার শুরু করি। রাজেশদার কোমরের দড়ির বাঁধনও খুলে গিয়েছিল। তখনই একজন এসে কুয়োয় নেমে পড়েন।’’ রাস্তার পাশেই গায়ত্রী দেবীর বাড়ি। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গায়ত্রীদেবীর চিৎকার শুনে রাস্তা থেকে অনেকেই জড়ো হয়ে যান। এক রিকশাচালকও কুয়োর সামনে চলে আসেন। কুয়োতে নামার কৌশল জানেন বলে দাবি করে তিনিও নেমে যান বলে বাসিন্দাদের দাবি। খবর পাঠানো হয় পড়শি ডোলো সিংহকেও। এক সময়ে কুয়ো পরিষ্কার করার কাজ করতেন ডোলোবাবু। তিনিও কুয়োয় নেমে পড়েন। ওই দু’জনে কুয়োতে নেমে রাজেশবাবুর কোমরে দড়ি বেঁধে তাঁকে উপরে তোলার ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু রাজেশবাবুকে উপরে তোলার পরে উদ্ধারকারী দু’জনকে তোলার জন্য কুয়োয় ফের দড়ি নামানোর সময় দেখা যায়, ভিতরে থাকা দু’জনের দেহ নিথর হয়ে পড়েছে।

তখনই খবর পেয়ে দমকল কর্মীরা এসে ওই দু’জনের দেহ উদ্ধার করেন। প্রাথমিক তদন্তের পরে এবং দমকল কর্মীদের সঙ্গে আলোচনার পরে পুলিশের অনুমান, কুয়োর ভিতরে মিথেন গ্যাস জমে ছিল। সেই গ্যাসের কারণেই প্রথমে রাজেশবাবু কুয়োয় নেমে নিঃশ্বাস নিতে পারছিলেন না। উদ্ধারকারী দু’জনেও গ্যাসের কারণেই নিঃশ্বাস নিতে না পেরে মারা যান বলে পুলিশ মনে করছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কুয়ো থেকে উদ্ধারের পরে বেশ কিছুক্ষণ সংজ্ঞাহীন অবস্থায় ছিলেন রাজেশবাবু। বছর পঞ্চাশের রাজেশ পাইপ লাগানো, নর্দমা পরিষ্কারের কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘‘কিছু রোজগারের জন্য কুয়ো পরিষ্কার করার কাজ চাইতে গিয়েছিলাম। কুয়োর ভিতর নামার পর থেকে নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না। কোমরের দড়িটাও খুলে যায়। কিছু পরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি আর কিছু মনে নেই।’’

অন্য দিকে, মৃত ডোলোবাবুর পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, একসময়ে কুয়ো পরিষ্কারের কাজ করলেও বর্তমানে তিনি দিন মজুরির কাজ করতেন। মৃতের স্ত্রী কৈশাখি দেবী বলেন, ‘‘একজন কুয়োয় পড়ে গিয়েছে বলে পাড়ার লোকেরা ওঁকে ডেকে নিয়ে যায়। খবর শুনে সাইকেল নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে যায়। একজনকে বাঁচাতে বাড়ি থেকে বের হল, আর নিজেই ফিরল না।’’

এই ঘটনায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে পুলিশ। মৃত রিকশাচালকের পরিচয়ও জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত যা তথ্য মিলেছে তাতে কুয়োর ভিতরে জমা গ্যাসের কারণেই মৃত্যু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তদন্ত চলছে। প্রশিক্ষণ ছাড়া কুয়োয় নামার প্রবণতা বন্ধ করা প্রয়োজন।’’ পুলিশ জানিয়েছে প্রায় পঁচিশ ফুট গভীর কুয়োর ভিতরে জল রয়েছে আড়াই ফুট উচ্চতার। সেই জলে ডুবে মৃত্যুর আশঙ্কা নেই। দমকলের তরফেও কুয়োর ভিতরে পরীক্ষা করে মিথেন গ্যাস রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

well siliguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE