Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

বিএসএফের জলেই বেঁচে ১০০ পরিবার

এলাকার বাসিন্দা নিমাই বর্মণ, গোকুল বর্মণরা জানান, বিএসএফ জল না দিলে তাঁদের পুকুরের জলই পান করতে হত। এলাকা পানীয় জলের মূল উৎস, দু’টি কুয়ো ও একটি পুকুর, শীতের মরসুমে প্রায় শুকিয়ে গিয়েছে।

অভাবী: নলকূপ অকেজো। পাহাড়পুরে বিএসএফের কাছ থেকে পাওয়া জলই ভরসা বাসিন্দাদের। ছবি: অমিত মোহান্ত

অভাবী: নলকূপ অকেজো। পাহাড়পুরে বিএসএফের কাছ থেকে পাওয়া জলই ভরসা বাসিন্দাদের। ছবি: অমিত মোহান্ত

নিজস্ব সংবাদদাতা
তপন শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৫:২২
Share: Save:

গোটা এলাকায় ৭টি মার্ক টু নলকূপ বসানো হয়েছিল ২০১৫ সালে। কয়েক মাস বাদে সবগুলি অকেজো হয়ে পড়ে বলে খবর। কাছাকাছি নেই বিকল্প কোনও পানীয় জলের উৎসও। তাই পুকুরের ঘোলা জল-ই একমাত্র ভরসা। রাজস্থান বা উত্তরপ্রদেশের কোনও শুকনো অঞ্চল নয়, এ ছবি তপনের মালঞ্চা পঞ্চায়েতের পাহাড়পুর সীমান্ত গ্রামের বাসিন্দাদের। বছরের পর বছর ধরে বাসিন্দাদের ট্যাঙ্কারে করে পানীয় জল সরবরাহ করে চলেছেন ডাকুহারা ফাঁড়ির বিএসএফ জওয়ানরা।

এলাকার বাসিন্দা নিমাই বর্মণ, গোকুল বর্মণরা জানান, বিএসএফ জল না দিলে তাঁদের পুকুরের জলই পান করতে হত। এলাকা পানীয় জলের মূল উৎস, দু’টি কুয়ো ও একটি পুকুর, শীতের মরসুমে প্রায় শুকিয়ে গিয়েছে। বাসনমাজা থেকে স্নান—সবেতেই পুকুরের ওই ঘোলা জল-ই ভরসা বাসিন্দাদের। গবাদিপশুরাও ভুগছে জলকষ্টে। অথচ কয়েক মাস আগেই মালঞ্চা পঞ্চায়েতের তহবিলে ৫ কোটি টাকা অব্যবহৃত হয়ে পড়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে ওই টাকা খরচ হলেও বাসিন্দাদের পানীয় জল সরবরাহের কোনও ব্যবস্থা হল না কেন, তা নিয়ে স্বভাবতই উঠেছে প্রশ্ন।

মালঞ্চা পঞ্চায়েতের প্রধান কৃষ্ণা বর্মণ বলেন, ‘‘দায়িত্ব নেওয়ার পর কোনও টাকা পাইনি। ওই ৫ কোটি টাকা পঞ্চায়েত ভোটের আগেই খরচ হয়ে গিয়েছে। সমস্যা মেটাতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।’’

দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন ব্লকের মালঞ্চা পঞ্চায়েতের শুধু পাহাড়পুরই নয়, এলাকার সন্ধ্যাপুকুর, মালঞ্চা, অর্জুনপুর, অভিরামপুর, হরিবংশীপুর, কাউলির মতো আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বছরভর জলকষ্টে ভোগেন বাসিন্দারা। তপনের ওই সমস্ত এলাকায় অগভীর নলকূপও (মার্ক টু) কাজ করে না বলে দাবি বাসিন্দাদের। এলাকারই মানস সরকার অভিযোগ করেন, ‘‘সরকারি পানীয় জলের নলকূপ দীর্ঘ দিন অকেজো। জলের অভাবে বন্ধ হয়েছে চাষাবাদ। বিএসএফ অফিসাররা সাহায্য না করলে অবস্থা আরও খারাপ হত।’’

ডাকুহারা ফাঁড়ির বিএসএফ জওয়ানদের জন্য রোজ বালুরঘাটের পতিরাম সদর বিএসএফ ক্যাম্প থেকে ট্যাঙ্কারে করে পানীয় জল সরবরাহ করা হয়। ওই ট্যাঙ্কার থেকে প্রথমে গ্রামবাসীদের জল দিয়ে তারপর তা ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। বিএসএফের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এলাকার জলস্তর ৬০-৮০ ফিট নিচে থাকায় নলকূপে জল ওঠে না। কুয়োয় থাকা সামান্য জলও ঘোলা ও বালিতে ভর্তি। বাসিন্দাদের জলকষ্ট দেখে মুখ ঘুরিয়ে থাকা যায় না।’’ তাই বছরের পর বছর বিএসএফের দেওয়া জলেই বেঁচে আছেন পাহাড়পুরের প্রায় একশোটি তফসিলি জাতিভুক্ত পরিবার।

তপনের বিধায়ক তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বাচ্চু হাঁসদা বলেন, ‘‘পিএইচইর মাধ্যমে তপনে পানীয় জল সরবরাহের কয়েকটি প্রকল্প তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’’

যদিও বাসিন্দাদের অভিযোগ, একটানা ১০ বছর বালুরঘাটের সাংসদ ছিলেন আরএসপির রণেন বর্মণ। কিন্তু তপনে পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহের বিষয়ে কোনও সুষ্ঠু পদক্ষেপ নেননি তিনি। বর্তমান শাসক দলের নেতারাও ফি বছর ভোটের আগে কেবল আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। জলকষ্ট সমাধানে হয়নি স্থায়ী
কোনও ব্যবস্থা।

অন্য বিষয়গুলি:

Tapan Water BSF
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy