গ্রামাঞ্চলে সংগঠন ধরে রাখতে নিয়মিত চড়ুইভাতির আসর বসিয়ে মাংস-ভাত খাওয়ানোর অভিযোগ উঠেছে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। সন্ধ্যার পরে মাঝেমধ্যেই খানাপিনা হচ্ছে বলে পঞ্চায়েত এলাকার তৃণমূল-সহ অন্যান্য দলের নিচুতলার অভিযোগ। ফাঁসিদেওয়া, মাটিগাড়া নকশালবাড়ি বিধানসভা এলাকায় প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিতে ওই ধরনের চড়ুইভাতি হচ্ছে বলে কংগ্রেস সূত্রের খবর। ভোজের আসরেই আলোচনা হচ্ছে দলীয় কমর্সূচি, চলছে কংগ্রেসের প্রচার।
শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই ওই কাজ করানো হচ্ছে বলে সন্দেহ করছেন তৃণমূল-সহ অন্যান্য দলগুলি। তবে প্রকাশ্যে এতে কোনও প্রভাব না পড়ার কথা বলছেন তাঁরা। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে চড়ুইভাতির কথা স্বীকার করা হয়েছে। তাঁদের দাবি, দলের কর্মী-সমর্থকরা নিজেরা টাকাপয়সা জোগাড় করে চড়ুইভাতি করছেন। এতে দলের সংহতি বাড়ছে।
জনসংযোগের এই পদ্ধতিতেই সাফল্য আসবে বলে আশাবাদী দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের সভাপতি শঙ্কর মালাকার। অন্য দলগুলি যেখানে সভা, সমিতি ও মিছিলের উপরে জোর দিচ্ছে, কংগ্রেসের লক্ষ গৃহস্থের অন্দরমহল বলে কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি। তবে নির্বাচিত প্রতিনিধি থেকে নেতারা দল ত্যাগ করায় তাঁদের দলের খুব একটা ক্ষতি হয়েছে বলে স্বীকার করেননি শঙ্করবাবু। তিনি বলেন, “দল ছেড়ে যাঁরা গিয়েছেন, তাঁদের উপরে মানুষ ক্ষুব্ধ। এই ধরণের চড়ুইভাতিতে ভাল সাড়া মিলেছে। নতুন অনেকে যোগ দিচ্ছেন।” মহকুমা পরিষদ নির্বাচনে বামফ্রন্টকেই প্রধান শত্রু বলে লড়াইয়ের জন্য তৈরি হচ্ছেন বলেও জানান তিনি। বিজেপি বা তৃণমূল থেকে অবশ্য কংগ্রেসে নেতৃত্বের এই দাবি উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও বামফ্রন্টও কংগ্রেসকেই পয়লা নম্বর শত্রু বলে মনে করছে।
শঙ্করবাবু স্বীকার করেছেন, এই পথেই সাফল্যের ব্যপারে আশাবাদী তাঁরা। শঙ্করবাবুর ব্যখ্যা, গত পরিষদ নির্বাচনে মহকুমা পরিষদে সাতটি আসনের মধ্যে চারটি সিপিএম এবং তিনটি কংগ্রেস পেয়েছিল। জেতার পরে অনেক নির্বাচিত প্রতিনিধিদের লোভ দেখিয়ে ও পয়সা খরচ করে তৃণমূল দলে টেনেছে। কিন্তু তাতে কংগ্রেস দলের কোনও ক্ষতি হয়নি। তাই দল ধরে রাখার প্রয়োজনে নয় সংগঠনে জোর দিতেই এই পদ্ধতি বেছে নেওয়া হয়েছে বলে কংগ্রেস দাবি করেছে।
বিজেপি জেলা সভাপতি রথীন বসু কংগ্রেসের এই ভাবে কর্মী ধরে রাখাকে কটাক্ষ করেছেন। তিনি বলেন, “কংগ্রেস দলে লোক টিঁকছে না। তাই প্রচারে চমক আনতে চাইছে কংগ্রেস। এভাবে জেতা যাবে না। বিজেপিকে এভাবে প্রচার করতে হবে না। মানুষ দলে দলে যোগ দিচ্ছে বিজেপিতে। তৃণমূলের পক্ষে জেলা কমিটির সদস্য কৃষ্ণ পাল কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন কংগ্রেসকে। তিনি বলেন, “দিনের বেলায় মানুষের কাছে যেতে ভয় পাচ্ছে কংগ্রেস। তাই রাতের অন্ধকারে সংগঠন বাড়ানোর চেষ্টা করছে। আমরা গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় সভা করে যে বিপুল সাড়া পাচ্ছি। তাতে অন্য কোনও দলকে আমাদের ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই।” প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা জেলা বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান অশোক ভট্টাচার্য অবশ্য শিলিগুড়ির পঞ্চায়েত এলাকাগুলোতে এখনও কংগ্রেসেকেই মূল বিরোধী বলে মেনে নিয়েছেন। তবে প্রচারের এই পদ্ধতি নিয়ে তিনি কিছু বলতে চাননি।
অশোকবাবু বলেন, “তৃণমূল বা বিজেপির ওই এলাকাগুলোতে কোনও সংগঠন নেই। কংগ্রেসের শিলিগুড়ির গ্রামাঞ্চলে এখনও ভাল শক্তি রয়েছে। আমাদের লড়তে হবে তাঁদের সঙ্গেই। তবে কীভাবে তাঁরা প্রচার করবেন তা তাঁদের নিজস্ব ব্যপার।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy