জলপাইগুড়িতে সরকারি অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে রাস্তায় শহরের বাসিন্দাদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার। ছবি: সন্দীপ পাল।
শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের ভক্তিনগর থানার মামলাগুলির জলপাইগুড়ি জেলা আদালতেই শুনানি হবে বলে জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ভক্তিনগর থানা শিলিগুড়ি পুলিশের আওতায় থাকলে জেলা জলপাইগুড়ি হওয়ায় মামলাগুলি হয় জলপাইগুড়ি আদালতে। ভক্তিনগর থানাকে শিলিগুড়িতে নিয়ে আসতে গেলে প্রয়োজন মেট্রোপলিটন আদালত। যা এখনও শিলিগুড়িতে গড়ে ওঠেনি। যদিও শিলিগুড়ির আইনজীবীদের দাবি ছিল, শিলিগুড়ি এসিজেএম আদালতের পরিকাঠামো তৈরি করে মামলাগুলি এখানে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হোক।
বুধবার জলপাইগুড়ি স্পোর্টস ভিলেজে সরকারি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “জলপাইগুড়ি আদালতের একটি ব্যাপার ছিল। ভক্তিনগর আপনাদের সঙ্গে থাকবে। চিন্তার কোনও কারণ নেই।” এর পরেই বলেন, “আদালতের সীমানা নিয়ে আইনজীবীরা বলেছিলেন, সেটাই বলছি।” শহরের রাজনৈতিক মহল মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার মধ্যে নতুন কিছু না পেলেও জলপাইগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অভিনন্দন চৌধুরী অনেকটাই স্বস্তি খুঁজে পেয়েছেন। তিনি বলেন, “জলপাইগুড়ির সমস্যার কথা চিন্তা করে মুখ্যমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আলিপুরদুয়ার আলাদা হওয়ার পর জলপাইগুড়ি জেলা ক্রমশ সঙ্কুচিত হচ্ছিল। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় সেই বিপদ কাটল। আমরা খুশি।”
এ দিনের মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় অনেকটাই হতাশ শিলিগুড়ির আইনজীবীরা। তবে তাঁরা হাল ছাড়তে রাজি নন। বৃহত্তর শিলিগুড়ি নাগরিক মঞ্চের সম্পাদক রতন বণিক বলেন, “আমরা আমাদের দাবি জানিয়েই যাব। ইতিমধ্যে গণস্বাক্ষর অভিযোগ শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীকে আমরা তা দেব। ভক্তিনগর থানা এলাকার মানুষের কী দাবি তা দেখে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।”
সম্প্রতি জেলার ভক্তিনগর থানাকে শিলিগুড়ি কমিশনারেটের আওতায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, এই খবরে জেলা আদালতের আইনজীবীরা আন্দোলনে নামেন। নাগরিক মঞ্চ-সহ বিভিন্ন সংগঠন তাঁদের পাশে দাঁড়ায়। গত ১২ নভেম্বর আইনজীবী গৌতম পাল এবং সুদীপ্তকান্ত ভৌমিক হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। বার অ্যাসোসিয়েশনের স্টিয়ারিং কমিটির যুগ্ম সম্পাদক গৌতমবাবু জানান, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় আমরা খুশি। ভক্তিনগর থানাকে শিলিগুড়ি কমিশনারেটভুক্ত করার বিরোধিতা করে হাইকোর্টে মামলা চলছে। আশা করছি, ওই মামলায় রাজ্য সরকারের তরফে যে বক্তব্য পেশ করা হবে, তাতে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তার প্রতিফলন ঘটবে।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে অবশ্য হতাশ আইনজীবী তথা জেলা কংগ্রেস সভাপতি নির্মল ঘোষ দস্তিদার। তিনি বলেন, “আমরা আশা করেছিলাম, মুখ্যমন্ত্রী কমিশনারেট নিয়ে স্পষ্ট কথা বলবেন। এটা কোনও কথা হল! একদিকে ভক্তিনগর থানা শিলিগুড়িতে কমিশনারেট ভুক্ত থাকবে। আর সেখানকার মামলার বিচার জলপাইগুড়ি আদালতে হবে।” তিনি জানান, ওই থানা এলাকাকে কমিশনারেট মুক্ত না করা পর্যন্ত কোন সমস্যা মিটবে না। উল্টে সব দিক থেকে জটিলতা বাড়বে। আর কমিশনারেটের মধ্যে জঙ্গল, চা বাগান, কৃষি জমি থাকে না। এখানে সেটা রয়েছে। তাই এটা স্পষ্ট, নিয়মের তোয়াক্কা না করে শিলিগুড়ি কমিশনারেট গঠন করা হয়েছে।
রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে বিজেপি এবং সিপিএম। বিজেপির জেলা সভাপতি দ্বীপেন প্রামানিক বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী কমিশনারেট নিয়ে একটি কথাও বললেন না। শুধু জানালেন, ভক্তিনগর আপনাদের সঙ্গে থাকবে। অর্থাত্ এটা স্পষ্ট ভক্তিনগর শিলিগুড়ি কমিশনারেটে থাকছেই।” সিপিএমের জলপাইগুড়ি জেলা কমিটির আহ্বায়ক সলিল আচার্য বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী অনেক কথা বলেন কিন্তু তা বাস্তব রূপ পায় না। ভক্তিনগরকে শিলিগুড়ি কমিশনারেটে রেখে জানাচ্ছেন, ভক্তিনগর নাকি জলপাইগুড়ির মধ্যে থাকবে। এটা হয় নাকি!”
জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের কেউ এই বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy