গত পুর নির্বাচনের পর ৪ বছর সাড়ে সাত মাস গড়িয়েছে। ১ অক্টোবর মেয়াদ শেষ হচ্ছে শিলিগুড়ি বোর্ডের। এই সময় কালে অবৈধ নির্মাণ থেকে পার্কিংয়ের বরাত, কর্মী নিয়োগ-সহ নানা বিষয়ে অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। গত ২০ মে মেয়র এবং তাঁর পারিষদেরা ইস্তফা দেওয়ার আগেও কয়েক সপ্তাহ ধরে শহরে ফোর জি পরিষেবার কেবল পাতার কাজ নিয়ে দুনীতির শেষ অভিযোগ ওঠে। এ সব নিয়ে শহর জুড়েই চলছে নানা আলোচনা। রাজনৈতিকদলগুলির নেতৃত্বের একাংশ মনে করছেন, এই পরিস্থিতিতে দুর্নাম ঘুচিয়ে পুরবোর্ড চালানো এবং সাফল্য অর্জন করার মতো সময় আর হাতে নেই। কংগ্রেস, তৃণমূল বা বামেরা কেউই বোর্ড গড়তে চাইছেন না। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মত, অনিয়ম অস্বচ্ছতার অভিযোগের মধ্যে ঝুঁকি নিতে চাইছেন না কেউ। নির্বাচন ঘোষণা বা মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসক বসার সম্ভাবনাই প্রবল। প্রশাসক বসিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে তাঁরা মনে করছেন।
প্রাক্তন মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “আমরা কোনও রকম অন্যায় করিনি। কোনও দুর্নীতি বা অস্বচ্ছাতার কারণে পদ থেকে সরে যাইনি। অসহযোগিতা, অপবাদ দেওয়ার চেষ্টার জন্য বোর্ড ছাড়তে হয়েছে।” তিনি জানান, বোর্ড গঠনে তারা যাবেন না। তাঁরা নির্বাচন চাইছেন। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এই পরিস্থিতিতে মেয়র নির্বাচন করতে এক জনকে চেয়ারম্যান করে সেই প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দিতে পারে পুর দফতর। কেউ রাজি না হলে প্রশাসক বসবে। নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত এ ভাবেই চলবে। জেলা বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, পুর-বাসিন্দাদের সমস্যার চেয়ে ওঁদের কাছে ক্ষমতার রাজনীতিটাই বড়। জেলা সভাপতি রথীন্দ্র বসু বলেন, “এত দিন যারা পুরসভা চালালেন, তাঁরা দুর্নীতির দায় এড়াতে বোর্ড ছেড়ে পালিয়েছে। একে অপরকে দুষছে। বামেদের সব চেয়ে বেশি ১৮ জন কাউন্সিলর রয়েছে। তারাও মানুষের পাশে থাকতে চাইছেন না। বাসিন্দারা সবই দেখছেন।”
২০০৯ সালে জোট গড়ে পুর নির্বাচনে বামেদের হঠিয়ে পুরসভায় ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট। মেয়র পদ নিয়ে বিরোধে বামেদের সমর্থনে মেয়র হন কংগ্রেসের গঙ্গোত্রী দত্ত। বছর দুয়েক না যেতেই মেয়র ইস্তফা দিয়ে বামেদের সংস্রব ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। কংগ্রেস-তৃণমূল জোট পুরবোর্ড গড়ে গঙ্গোত্রীদেবীকে মেয়র করে। বছর দেড়েক পর তৃণমূল জোট ছেড়ে বেরিয়ে আসে। একাই বোর্ড চালাচ্ছিল কংগ্রেস। এই সময়ের মধ্যে অবৈধ নির্মাণের বিরুদ্ধে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মেয়র কিছু করতে পারেননি বলে অভিযোগ। অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে পার্কিংয়ের বরাত দেওয়ার প্রক্রিয়া, পুরসভার বিভিন্ন পদে কর্মী নিয়োগ নিয়েও। তৃণমূলের অভিযোগ, পুরসভার কর সংগ্রহ বিভাগে কর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও ব্যবস্থা নিতে পারেননি মেয়র। গত বছর শহরে ডেঙ্গি মারাত্মক আকার নেয়। ডেঙ্গি প্রতিরোধের কাজ দায়সারা ভাবে করার অভিযোগ ওঠে পুরসভার বিরুদ্ধে।
জোটের বোর্ডে প্রশ্ন উঠেছিল নানা মেয়র পারিষদের গাড়ির মাত্রাতিরিক্ত তেলের খরচ নিয়ে। বাম কাউন্সিলরদের অনেকে অভিযোগ তুলেছেন, জোটের কাউন্সিলরদের একাংশ কী করে এই কয়েক বছরে বাড়ি, গাড়ি, জমি, পুকুর কিনছেন তা অনেকে জানেন। বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম বলেন, “ক্ষমতা নিয়ে কংগ্রেস-তৃণমূল নিজেরা গোলমাল করে গিয়েছে। দুর্নীতি ছাড়া প্রত্যশা পূরণেও তারা সমস্ত ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়েছে। আমরা নির্বাচন চাই।” নুরুলবাবু জানান, মানুষের রায় তাদের পক্ষে ছিল না বলেই তারা বিরোধী থাকবেন, বোর্ড গঠনে যাবেন না।
তৃণমূলের জেলা কমিটির অন্যতম নেতা তথা প্রাক্তন মেয়র পারিষদ কৃষ্ণ পাল এই দিন এই প্রসঙ্গে বলেছেন, “নুরুলবাবু প্রথমে কংগ্রেস পরিচালিত পুরবোর্ডকে সমর্থন করেছিলেন। এখন তাঁদের মুখে এ সব কথা মানায় না।” উল্টে তাঁর পাল্টা অভিযোগ, কংগ্রেস পুরসভায় ক্ষমতায় থেকে একের পর এক দুর্নীতি করে গিয়েছে। তৃণমূল বোর্ডে থাকার সময় স্বচ্ছতা বজায় রেখেই কাজ হয়েছে বলে কৃষ্ণবাবুর দাবি। তিনি আরও বলেন, “সাতচল্লিশ আসনের পুরসভায় আমাদের ১৫ জন কাউন্সিলর। প্রয়োজনীয় কাউন্সিলর না থাকায় আমরা বোর্ডে যেতে আগ্রহী নই। নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন চাইছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy