পয়লা এপ্রিল থেকে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় কেন্দ্রের খাদ্য সুরক্ষা আইনের অধীনে নতুন রেশন ব্যবস্থা শুরু হতে চলেছে। পশ্চিমবঙ্গে প্রথম এই জেলায় ওই প্রকল্প রূপায়ণ হবে। প্রশাসনিক স্তরে চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরির কাজ চলছে। জেলাশাসক তাপস চৌধুরী বলেন, “জেলায় প্রায় ১১ লক্ষ মানুষ ওই প্রকল্পের আওতায় আসবেন।” এদের মধ্যে প্রায় ৯ লক্ষ মানুষ বর্তমানে ‘এপিএল’ কার্ডের গ্রাহক। নতুন ব্যবস্থায় তাঁরা মাথাপিছু মাসে পাঁচ কিলোগ্রাম খাদ্যশস্য পাবেন।
দক্ষিণ দিনাজপুরের খাদ্য নিয়ামক অমরেন্দ্র রায় জানান, আগামী সপ্তাহ থেকে জেলায় ডিজিটাল রেশন কার্ড বিলি শুরু হবে।
সরকারি সূত্রে খবর, রাজ্যের মধ্যে মাত্র ৮টি ব্লক নিয়ে গঠিত দক্ষিণ দিনাজপুর সবচেয়ে ছোট জেলা। রাজ্যের তরফে ওই প্রকল্পের জন্য এই জেলাকে বেছে নেওয়ার মূল কারণ সেটাই। জেলায় মোট রেশনকার্ড গ্রাহকদের ৯৩ শতাংশের ডিজিটাল রেশন কার্ড তৈরি হয়ে গিয়েছে। এই অগ্রগতিও প্রকল্পটি চালুর বিষয়ে দক্ষিণ দিনাজপুরকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রস্তুতি পর্বের কাজ খতিয়ে দেখতে শনিবার বালুরঘাটে আসবেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, দক্ষিণ দিনাজপুরের জনসংখ্যা ১৬ লক্ষ ৭০ হাজার ৯২৯ জন। এর মধ্যে রেশন কার্ড ধারীর সংখ্যা ১৬ লক্ষ ৪৯ হাজার ৫৫৮ জন। তার মধ্যে এখনও অবধি প্রায় ১৫ লক্ষ ৩৪ হাজারের উপর বাসিন্দার ডিজিটাল রেশন কার্ড তৈরি হয়ে গিয়েছে।
খাদ্য দফতর সূত্রের খবর, এ জেলায় প্রায় ৩ লক্ষ ৮৬ হাজার বিপিএল এবং ১ লক্ষ ৫৪ হাজার অন্ত্যোদয় প্রকল্পের অধীন। বাসিন্দারা দু টাকা কেজি দরে চাল ও তিন টাকা কেজি দরে গম প্রতি মাসে পরিবার পিছু মোট ৩৫ কেজি করে সরবরাহ পান। খাদ্য সুরক্ষা আইনেও কম দামে প্রতি মাসে গরিবদের ৩৫ কেজি চাল ও গমের নিশ্চিত সরবরাহের আওতায় আনা হবে। রেশন দোকানের মাধ্যমে খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পে বাসিন্দারা খাদ্যশস্য পাবেন।
প্রকল্প একনজরে
• জেলায় প্রায় ১১ লক্ষ মানুষ আসবেন এই প্রকল্পের আওতায়।
• আগামী সপ্তাহ থেকে বিভিন্ন এলাকায় শুরু হবে ডিজিটাল রেশন কার্ড বিলির কাজ।
• খাদ্যশস্য মজুতের জন্য জেলায় রয়েছে ১৩টি গুদাম।
• তপন, বালুরঘাট ও কুমারগঞ্জে তৈরি হচ্ছে আরও তিনটি গুদাম।
• পয়লা এপ্রিল থেকে খাদ্য সুরক্ষা আইনের অধীনে চালু হবে নতুন রেশন ব্যবস্থা।
জেলা খাদ্য দফতর জানিয়েছে, এ জেলায় মোট রেশন গ্রাহকের প্রায় ৬০-৬৫ শতাংশ মানুষ খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় আসবেন। জেলায় বিপিএল এবং অন্ত্যোদয় প্রকল্পের অধীন মোট ৩৩ শতাংশ মানুষ খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় আসছেনই। এপিএল গ্রাহক গরিব বাসিন্দারাও খাদ্য সুরক্ষা আইনের অন্তর্ভুক্তির সুযোগ পেতে পারেন, জানিয়েছেন বিভাগীয় এক আধিকারিক।
বাসিন্দাদের সস্তায় খাদ্যশস্য সরবরাহের মতো পরিকাঠামো জেলায় তৈরি আছে, দাবি করছেন জেলা খাদ্য নিয়ামক। তিনি জানান, দক্ষিণ দিনাজপুরে খাদ্যশস্য মজুতের জন্য ১২টি ভাড়ার গুদাম এবং ১টি সরকারি গুদাম রয়েছে। ওই ১৩টি গুদামে খাদ্যশস্য মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০ হাজার মেট্রিক টন। এ ছাড়া সরকারিভাবে তপন, কুমারগঞ্জ এবং বালুরঘাটে আরও তিনটি গুদাম তৈরি হচ্ছে। তাতে আরও ৩৫ হাজার মেট্রিক টন চাল-গম মজুত করা যাবে। বালুরঘাটের গুদাম তৈরির কাজ সম্পূর্ণ। তপন ও কুমারগঞ্জে গুদাম তৈরির কাজ চলছে। ফলে খাদ্য সুরক্ষা আইন চালু হলে অতিরিক্ত যে চাল গমের সরবরাহ পাওয়া যাবে, তা মজুতের কোনও সমস্যা জেলায় হবে না বলে খাদ্য নিয়ামক দাবি করেন।
দক্ষিণ দিনাজপুরে অন্ত্যোদয় প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত ১ লক্ষ ৫৪ হাজার এবং বিপিএল তালিকাভুক্ত ৩ লক্ষ ৮৬ হাজার মানুষের পাশাপাশি এপিএল তালিকাভুক্ত আরও প্রায় ৫ লক্ষ ৬০ হাজার মানুষ খাদ্য সুরক্ষা আইনের সুবিধা পাবেন। আর্থ-সামাজিক সমীক্ষায় তাঁরা খাদ্য সুরক্ষা আইন প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। সব মিলিয়ে জেলায় প্রায় ১১ লক্ষ মানুষ খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় আসছেন বলে জেলাশাসক তাপস চৌধুরী জানিয়েছেন। তিনি বলেন, অন্ত্যোদয়ের আওতাভুক্ত ১ লক্ষ ৫৪ হাজার মানুষ খাদ্য সুরক্ষা আইনে প্রতিমাসে পরিবার পিছু ৩৫ কেজি চাল ও গমের সরবরাহ পাবেন। ৩ টাকা কেজি দরে চাল ও ২ টাকা কেজি দরে গম তাঁরা রেশন দোকান থেকে পাবেন। বর্তমানে অন্ত্যোদয় তালিকাভুক্তরা সপ্তাহে মাথা পিছু ২ টাকা কেজি দরে চাল ও ৩ টাকা কেজি দরে ৭৫০ গ্রাম গম পান।
খাদ্য সুরক্ষা আইনে অন্ত্যোদয় কার্ড থাকলেও বিপিএল বলে কোনও কার্ডের অস্তিত্ব থাকছে না। খাদ্য নিয়ামক অমরেন্দ্রবাবু বলেন, বিপিএল এবং এপিএল ভুক্ত প্রায় ৯ লক্ষ মানুষ ‘প্রায়োরিটি হাউসহোল্ড’ তালিকাভুক্ত হবেন। খাদ্য সুরক্ষা আইনে তারা প্রতি মাসে ওই একই দরে ( চাল ৩ টাকা ও গম ২ টাকা) মাথা পিছু ৫ কেজি করে খাদ্যশস্য পাবেন। বর্তমানে এপিএল কার্ডের গ্রাহকরা সপ্তাহে মাথা পিছু কেজি প্রতি ৯ টাকা দরে ২৫০ গ্রাম চাল এবং ৭ টাকা দরে ৪০০ গ্রাম গম পান।
বিপিএল গ্রাহকরা বর্তমানে রেশন দোকান থেকে সপ্তাহে মাথাপিছু ২ টাকা কেজি দরে ১ কেজি চাল ও ৫ টাকা কেজি দরে এক প্যাকেট আটা (৬৫০গ্রাম) পান। তাদের জন্য খাদ্য সুরক্ষা আইনে চালের দর কেজি প্রতি এক টাকা বেশি হলেও, মাসে গড়ে ৫ কেজি অর্থাত্ এক কেজি চাল বেশি পাবেন। অন্য দিকে, এক টাকা কম দামে গমের নিশ্চিত সরবরাহ পাবেন।
খাদ্য সুরক্ষা আইনে সস্তায় খাদ্যশস্য সরবরাহের পাশাপাশি পূর্ব নির্ধারিত জেলা খাদ্য দফতর থেকে এপিএল, বিপিএল এবং অন্ত্যোদয় তালিকাভুক্তরা রেশন দোকান থেকে যেমন কেরোসিন, এবং বিশেষ পরব ও উত্সবে চিনির সরবরাহ পাচ্ছেন, তেমনই পাবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy