‘পদ্ম’-কাঁটা বিঁধছে ‘হাত’-এ। লোকসভা নির্বাচনে শিলিগুড়ি পুরসভার ফলাফল অন্তত তেমনটাই বলছে। বিজেপির উত্থানের সঙ্গে সঙ্গেই পিছিয়ে পড়ছে কংগ্রেস। দলের কাউন্সিলরদের কোনও ওয়ার্ডেই এগোতে পারেনি কংগ্রেস। তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠছে দলের অন্দরে।
একেই ১৪ জন কাউন্সিলর নিয়ে ‘সংখ্যালঘু বোর্ড’ চালাচ্ছে কংগ্রেস। লোকসভা নির্বাচনে মেয়র, ডেপুটি মেয়রের ওয়ার্ডে কংগ্রেসের কার্যত ভরাডুবি হয়েছে। মেয়র পারিষদ-সহ দলের কাউন্সিলরদের সমস্ত ওয়ার্ডেই তৃণমূল, বিজেপি বা বামেদের তুলনায় প্রাপ্ত ভোটের বিচারে পিছিয়ে কংগ্রেস। শিলিগুড়ি পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডে থেকে জিতেছিলেন মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত। ডেপুটি মেয়র সবিতা দেবী অগ্রবাল জিতেছিলেন ৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে। ওই দুটি ওয়ার্ডে সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস বিজেপি, তৃণমূলের থেকে পিছিয়ে পড়েছে। ১২ নম্বর ওয়ার্ডে সব চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে তৃণমূল। কংগ্রেস তিন নম্বরে। ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি এগিয়ে। কংগ্রেস চতুর্থ স্থানে। লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের প্রার্থী ছিলেন সুজয় ঘটক। তিনি ১৬ নম্বর ওয়ার্ডেরও কাউন্সিলর। খোদ কংগ্রেস প্রার্থীর সেই ওয়ার্ডে এগিয়ে তৃণমূল। সুজয়বাবু দ্বিতীয় স্থানে।
বাম বা সিপিএমের ফলাফলও খুবই খারাপ। তাদের ১৮ জন কাউন্সিলর। সেখানে তারা মাত্র চারটি ওয়ার্ডে এগিয়ে রয়েছে লোকসভা নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের বিচারে। পুরসভার তারা বিরোধী দল। অথচ কংগ্রেস ক্ষমতায় থেকে একটি ওয়ার্ডেও কেন সাফল্য পেতে ব্যর্থ তা নিয়েই গুঞ্জন শুরু হয়েছে। কংগ্রেসের একাংশ-ই মনে করছেন, দলে মেয়র থেকে মেয়র পারিষদদের একাংশের বিরুদ্ধেই নানা সময়ে নানা অভিযোগ ওঠে। সে সব নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা না নিতে পারাই এর অন্যতম কারণ।
তাদের মতে, শহরে অবৈধ নির্মাণ নিয়ে প্রচুর অভিযোগ জমা পড়লেও মেয়র পারিষদ সীমা সাহা ব্যবস্থা নিতে পারেননি বলে অভিযোগ ওঠে। তাঁকে সরে যেতেও হয়। পরে মেয়র দায়িত্ব নেন। তিনিও দেখছি-দেখব বললেও কোনও সদর্থক ব্যবস্থা কখনই নিতে পারেননি বলে অভিযোগ। সীমাদেবীর ২৫ নম্বর ওয়ার্ডেও কংগ্রেসের ভরাডুবি হয়েছে। পার্কিং বিভাগের দুর্নীতি নিয়ে নানা সময়েই অভিযোগ উঠেছে। মেয়র পারিষদ সঞ্জয় পাঠকের আমলেও পার্কিংয়ের ফি আদায়ের ক্ষেত্রে অনিয়মে যুক্ত থাকার অভিযোগ ওঠে। পুরসভার তরফে ট্রেড লাইসেন্স ফি প্রচুর পরিমাণে বাড়িয়ে দেওয়ায় শহরের ব্যবসায়ীদের বিরাগভাজন হয়ে পড়ে ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের পুরবোর্ড। সঞ্জয়বাবুর ১ নম্বর ওয়ার্ড, ট্রেড লাইসেন্স বিভাগের মেয়র পারিষদ দেবশঙ্কর সাহার ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি এবং তৃণমূলের চেয়ে অনেক পিছিয়ে কংগ্রেস।
শহরের পানীয় জল সরবরাহ বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন মেয়র পারিষদ পম্পা দাস। পানীয় জল সরবরাহ নিয়ে বিভিন্ন সময়েই জেরবার হতে হয়েছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। এমনকী পুরসভার ট্যাপকল থেকে ব্যাঙাচি বার হওয়ার মতো ঘটনা নিয়েও বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পূর্ত বিভাগের কাজকর্ম নিয়েও ঠিকাদারদের একাংশ অসন্তুষ্ট ছিলেন। তারা পুরসভায় বিক্ষোভ অবস্থানও করেছিলেন। শহরের সাফাই পরিষেবার কাজ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। মেয়র পারিষদের ওয়ার্ডগুলিতে কংগ্রেসের খারাপ ফলাফলের জন্য সে সব অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন দলেরই একাংশ। তা ছাড়া মানুষের প্রত্যাশা মতো পুর পরিষেবা দিতেও ওই বোর্ড সফল হতে পারেনি বলেও কাউন্সিলরদের অনেকেই মনে করেন।
এমতাবস্থায়, দলের নেতারা আশা করছেন মোদী-হাওয়া পুরভোটের সময় থাকবে না। তাই ফল বদলাবে। মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত জানান, “আমরা সব পরিস্থিতির জন্যই তৈরি। মানুষের জন্য কাজ করেছি। যারাই সাহায্য চাইতে এসেছেন কাউকে ফেরাতে চাইনি। তবে লোকসভা নির্বাচন বলে মানুষ যাদের বেশি সমর্থন করেছে পুরভোটে তা পরিবর্তন হবে বলেই মনে করি।” অন্য দিকে ডেপুটি মেয়র সবিতাদেবী অগ্রবাল বলেন, ‘‘কেন এ ধরনের ফল হল তা খতিয়ে দেখব।” তবে তাঁর যুক্তি, তাঁর ওয়ার্ডে বাণিজ্যিক এলাকা বেশি। ব্যবসায়ীদের একাংশ লোকসভা নির্বাচনে মোদীর পক্ষে গিয়েছে। সবিতাদেবী স্বীকার করেন, “মোদী হাওয়াতেই এই ফল হয়েছে। তবে পুরভোটে এই ফলাফল হবে না বলেই মনে হয়। ওয়ার্ডে বিভিন্ন উন্নয়নের কাজ করেছি। মানুষকে পাশে পাব বলেই আমার ধারণা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy