চা শ্রমিকদের মজুরি চুক্তি নিয়ে রাজ্য সরকারের উপর চাপ বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছেন মোর্চা সভাপতি তথা জিটিএ চিফ বিমল গুরুঙ্গ। গত মাসের ২০ তারিখ দার্জিলিঙে রাজ্যের চা শ্রমিক সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চের প্রতিনিধিরা বিমল গুরুঙ্গের সঙ্গে দেখা করেন। সেই সময়ই তিনি বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্যপালের দ্বারস্থ হওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন। যৌথ মঞ্চের আন্দোলনে সব সময় পাশে থাকার কথাও জানিয়েছেন গুরুঙ্গ।
জিটিএ সূত্রের খবর, চলতি সপ্তাহেই দিল্লি এবং কলকাতায় বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ করে দ্রুত মজুরি চুক্তি রূপায়ণ নিয়ে একপ্রস্থ আলোচনা করেছেন মোর্চা নেতারা। রাজ্যপালের সময় চাওয়া ছাড়াও দিল্লিতে শ্রম এবং বাণিজ্য মন্ত্রকে যাওয়ার প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। পাশাপাশি, রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করার পক্ষপাতী জিটিএ নেতৃত্ব। সমস্ত বিষয়ের জন্য দলের প্রথম সারির তিন নেতাকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার শিলিগুড়িতে যৌথমঞ্চের বৈঠকের পর মঞ্চের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, পাহাড়ের অর্থনীতির একটি বিরাট অংশ চা বাগিচার উপর নির্ভরশীল। মজুরি চুক্তি নিয়ে জিটিএ প্রধানের উদ্যোগী হওয়াটা চা বাগিচা আন্দোলনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
পাহাড়ের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, শ্রমিকদের যৌথমঞ্চে তৃণমূল ছাড়া রাজ্যের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের চা শ্রমিক সংগঠন রয়েছে। মোর্চার সংগঠনও রয়েছে। এই অবস্থায় কৌশলে রাজ্যের উপর আরও চাপ বাড়াতেই মোর্চা সভাপতি এ পথে হেঁটেছেন। সেই সঙ্গে পাহাড়ের শ্রমিকদের একজোট রেখে তাঁদের পাশে থাকার বার্তাও দিচ্ছেন তিনি।
যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক জিয়াউর আলম বলেন, “চা শ্রমিকদের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আমরা রাজ্যপাল, কেন্দ্রীয় সরকার-সহ সমস্ত রাজনৈতিক দলের দ্বারস্থ হচ্ছি। জিটিএ প্রধানের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে পরিস্থিতির কথা জানিয়ে ছিলাম। তিনি কেন্দ্র সরকার ও রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।” এই প্রসঙ্গে জিটিএ সদস্য তিলক চন্দ্র রোকা বলেন, “আমি রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করব। কেন্দ্র ও রাজ্যের সঙ্গেও কথা বলা হচ্ছে। আমরাও চাই দ্রুত চা শ্রমিকদের মজুরি চুক্তি ঠিক হোক। সেখানে ন্যূনতম মজুরি চুক্তি অন্যতম।”
এদিনের বৈঠকের পর যৌথ মঞ্চের তরফে নতুন করে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে ৯ ফেব্রুয়ারি, প্রতি বাগানে শ্রমিক পরিবারগুলোকে নিয়ে মিছিল, ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে উত্তরবঙ্গে জনজাগরণ যাত্রা, ২৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে কেন্দ্র ও রাজ্যের হস্তক্ষেপ চাওয়া হবে। ২৪ ফেব্রুয়ারি বিধানসভায় গিয়ে প্রতিটি দলের দলনেতার হাতে দাবিপত্র তুলে দেওয়ার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও ২৮ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় রাস্তায় চা শ্রমিকদের মহামিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে। দার্জিলিং, ইসলামপুর এবং সঙ্কোশ থেকে জনজাগরণ যাত্রা হবে ডুয়ার্স পর্যন্ত। এদিন থেকে বাগানে শ্রমিকেরা রিলে অনশন শুরু করেছেন। বিভিন্ন এলাকায় ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তা চলবে।
২৫টি শ্রমিক সংগঠনের যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক জানান, রাজ্য সরকার রাজ্যের চা শ্রমিকদের সম্পর্কে উদাসীন। মালিকপক্ষের হয়ে সরকার কাজ করছে। ন্যূনতম মজুরি চুক্তির সময়সীমা নিয়ে কোনও কথা বলা হচ্ছে না। ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকা নিয়ে টালবাহানা চলছে। এদিন রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের সঙ্গে একাধিকবার টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রতিবারই তিনি ব্যস্ত আছেন বলে তাঁর সহকারি জানিয়ে দিয়েছেন।
গত ডিসেম্বর মাসে শিলিগুড়ির উত্তরকন্যায় শেষবার চা মজুরি নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়। ১৯ ডিসেম্বর নূ্যনতম মজুরি চুক্তি আগামী দিনে হবে বলে জানিয়ে সরকার অন্তর্বর্তী কালীন তিন বছরের জন্য খসড়া চুক্তি প্রস্তাব পেশ করে। সেখানে প্রথম বছর সাড়ে ১৭ টাকা এবং পরের দুই বছর ১০ টাকা করে মজুরি বাড়ানোর কথা বলা হয়। পাশের, মজুরিতে সমতা আনার জন্য প্রথমবার ৫ টাকা বেশি বাড়ানোর কথা বলা হয়। বর্তমানে রাজ্যের চা শ্রমিকেরা ৯৫ টাকা করে মজুরি পান। যৌথ মঞ্চ শুধু নয়, তৃণমূলের একটি চা সংগঠনও নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে নূ্যনতম মজুরি ঠিক করার দাবিতে অনড় থাকে। তার পরে এখনও ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের কোনও দিনক্ষণ ঠিক করেনি রাজ্য। সরকারি সূত্রের খবর, চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে বৈঠক করার চিন্তাভাবনা চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy