কেউ পার্টি অফিসে বসে দিনভর ‘কন্ট্রোল রুম’ সামলালেন, কেউ বা সকাল থেকে চড়া রোদে ঘাম ঝরিয়েছেন। উত্তরবঙ্গে প্রথম পর্বের চারটি লোকসভা আসনের ভোটে এ ভাবেই ভোট পরিচালনা করলেন শাসক, বিরোধী সব দলের ভোটের ‘সেনাপতি’রা।
শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডে দলীয় কার্যালয়ে বসেই বৃহস্পতিবার দিনভর দলের পক্ষ থেকে ভোটপর্ব তদারকি করলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকার খোঁজ খবর নেন। কোথাও রিগিং হচ্ছে, বুথে ভোটারদের যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ শুনলেই পুলিশ এবং প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন দলের নেতা-কর্মীদের। কখনও নিজেই রিটার্নিং অফিসারকে ফোন করে অভিযোগ জানিয়েছেন। কখনও ই-মেলও করেন। ভোটের শেষে মন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া, “এই দফায় ৪টি আসনেই আমরা জিতব। পাহাড়ে আমাদের পোলিং এজেন্টদের মোর্চার মদতপুষ্ট সমাজবিরোধীরা ভয় দেখিয়ে সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে। তা সত্ত্বেও পাহাড়ে আমরা বড় ব্যবধানে জিতব।”
ভোটের লাইনে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। ভোট দিতে এসেছেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য।
ভোট দিচ্ছেন কোচবিহারের জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। এলাকায় ঘুরে ভোট দেখছেন বাম প্রার্থী
দীপক রায়। সঙ্গে ছিলেন উদয়ন গুহও। বৃহস্পতিবার ছবিগুলি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক ও হিমাংশুরঞ্জন দেব।
এ দিন ভোরে বাড়ি থেকে বার হয়ে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল লাগোয়া কালীবাড়িতে পুজো দিতে যান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। মন্দিরের গেট তখনও না খোলায় বাইরে থেকে প্রণাম সেরে নিজে ভোট দিতে যান শিলিগুড়ি গার্লস হাইস্কুলে। দলের জেলা অফিসের পাশে তৃণমূল নেতার বাড়িতে দুপুরের খাওয়া সারেন তিনি।
দলীয় অফিসে বসে নজরদারি করেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য এবং সিপিএমের দার্জিলিং জেলার কার্যনির্বাহী সম্পাদক জীবেশ সরকার। অশোকবাবু জানান, যে খবর তিনি পাচ্ছেন তাতে পাহাড়ে তৃণমূল বিরোধী ভোট বেশি পড়েছে। তাঁর দাবি, এমনকী সমতলেও তৃণমূলের যে ভোট মেলার কথা, তা তারা পাবে না। শিলিগুড়ির প্রধাননগরের মার্গারেট হাইস্কুলে সওয়া সাতটা নাগাদ ভোট দেন দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রের বাম প্রার্থী সমন পাঠক। মার্গারেট স্কুলে সকাল ১০টা নাগাদ সস্ত্রীক ভোট দিতে যান শিলিগুড়ির বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্যও। ৮টা নাগাদ হাকিমপাড়ার মীন ভবনে ভোট দিতে যান দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী সুজয় ঘটকও। পরে তিনি শিলিগুড়ি পুর এলাকাগুলি ঘুরে দলীয় কর্মীদের কাছ থেকে খোঁজখবর নেন।
কোচবিহারে তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা নাটাবড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে দিনভর নিজের বিধানসভা এলাকার একপ্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত। অপর শিবিরে ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ পার্টি অফিসে থেকেই ভোটের তদারকি করলেন। সকাল সাড়ে ৫টায় স্নান, হাল্কা টিফিন সেরে নেন রবীন্দ্রনাথবাবু। ওই ভোরেই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের ফোন পেয়ে কথা সেরে নেন। তারপর বেরিয়ে পড়েন। ফোনে খোঁজখবর নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীও। বিকেলের দিকে একটি হোটেলে ঢুকে খাওয়া সারেন। প্রত্যয়ী রবীন্দ্রনাথবাবু পরে জানান, “আমরা বড় ব্যবধানে জিতব।”
উদয়নবাবু সকাল থেকে দলের দিনহাটা পার্টি অফিসে মোবাইলে কথা বলছিলেন। অভিযোগ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকদের অভিযোগ জানিয়েছেন। পরে যান কোচবিহার জেলা কার্যালয়ে। সেখান থেকে দলের প্রার্থী, বাম নেতাদের সঙ্গে অভিযোগ জানাতে যান জেলাশাসকের দফতরে। বিজেপি-র জেলা সম্পাদক নিখিল দে দলীয় কার্যালয় থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রে ঘুরে বেড়ান।
জলপাইগুড়ির কংগ্রেস প্রার্থী সুখবিলাস বর্মা সকালেই লোকসভা কেন্দ্রের অর্ন্তগত গ্রাম এলাকাগুলিতে গিয়ে দলীয় কর্মীদের কাছে ভোটের গতিপ্রকৃতি নিয়ে খোঁজখবর করেছেন। সিপিএম প্রার্থী মহেন্দ্র রায়ের একমাত্র ছেলে প্রতিবন্ধী দেবব্রতকে হুইল চেয়ারে ঠেলে নিয়ে সকাল ৮টা নাগাদ রাজগঞ্জের চাউলহাটি শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের বুথে ভোট দিতে যান। ভোট দিয়ে তিনি চলে আসেন জলপাইগুড়িতে দলের জেলা দফতরে। সেখানে বসে বিভিন্ন বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের দফতরে অভিযোগ পাঠান। তার পরে সদর এলাকার কয়েকটি বুথে গিয়ে ভোটের কাজ পরিদর্শন করেন। সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ জলপাইগুড়ি শহরের জুনিয়র বেসিক ট্রেনিং ইন্সটিটিউশনের বুথে লাইনে দাঁড়িয়ে যান তৃণমূল প্রার্থী বিজয়চন্দ্র বর্মন। প্রায় একই সময়ে হাকিমপাড়া শিশুমহল স্কুল বুথে ভোট দেন বিজেপি প্রার্থী সত্যলাল সরকার। ভোট দেওয়ার পরে দু’জনেই শহর-গ্রামের বিভিন্ন বুথে বুথে ঘুরে ভোট প্রক্রিয়া পরিদর্শন করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy