Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

এখনও ত্রাণ অমিল ময়নাগুড়ির গ্রামে

ঝড়ের তাণ্ডবে ময়নাগুড়ির চুড়াভাণ্ডার গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি ও ফসলের ক্ষতিপূরণ পৌঁছল না তিন মাস পরেও। বর্ষায় উড়ে যাওয়া টিন খুঁজে নিয়ে কোনও রকমে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছেন অসহায় বাসিন্দারা।

ঝড়ের চিহ্ন এখনও স্পষ্ট। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

ঝড়ের চিহ্ন এখনও স্পষ্ট। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৪ ০২:২৩
Share: Save:

ঝড়ের তাণ্ডবে ময়নাগুড়ির চুড়াভাণ্ডার গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি ও ফসলের ক্ষতিপূরণ পৌঁছল না তিন মাস পরেও। বর্ষায় উড়ে যাওয়া টিন খুঁজে নিয়ে কোনও রকমে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছেন অসহায় বাসিন্দারা। অনেক তদ্বিরের পরে যেটুকু ত্রাণ এসে পৌঁছেছে তা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির প্রত্যেকের হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিরা। ফলে সমস্যায় পড়ছেন তাঁরাও। প্রতি দিন স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ সামাল দিতে নাজেহাল হয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।

যদিও প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, শুধুমাত্র সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হয়েছে। ক্ষতিপূরণের টাকা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। জলপাইগুড়ির মহকুমাশাসক সীমা হালদার বলেন, “যাঁদের ঘরবাড়ি পুরোপুরি ভেঙে গিয়েছে, তাঁদের ত্রাণ সামগ্রীর প্যাকেট পাঠানো হয়েছে। ক্ষতিপূরণের জন্য উপর মহলে জানানো হয়েছে। দেরিতে হলেও প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্তই সাহায্য পাবেন।”

গত ১১ মে রাতে প্রবল ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় চূড়াভাণ্ডার গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা। ২০টি গ্রাম সংসদের মধ্যে ১৩টি বিধ্বস্ত হয়। রথেরহাট ১ ও ২, ভাঙারহাট ১ ও ২ এবং চরচূড়াভাণ্ডার গ্রামে বিঘার পর বিঘা পাট খেত, গাছগাছালি, বাঁশ বাগান ও বসতবাড়ি ঝড়ের দাপটে শেষ হয়ে যায়। ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন তেরোশো পরিবার। টানা এগারো দিন রান্না করা খাবার সরবরাহ করতে হয়েছে ব্লক প্রশাসনকে। স্থানীয় পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝড়ে আড়াইশো বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত। নষ্ট হয়েছে অন্তত তিনশো বিঘা জমির পাট ও সবজি। ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান কাকলি বৈদ্য মণ্ডল জানান, গত বুধবার ব্লক প্রশাসন থেকে ১৭০টি ত্রাণ সামগ্রীর প্যাকেট বিলি করা হয়েছে। কিন্তু অনেকেই ত্রাণ না পাওয়ায় জটিলতা বেড়েছে। তাঁর কথায়, “গ্রামের লোকের কাছে উঠতে বসতে কথা শুনতে হচ্ছে। লোকজন কোনও যুক্তি শুনতে রাজি নন।”

রথেরহাট-২ বুথের মেচেরবাড়ি গ্রামে তিন মাস পরেও একই অবস্থা। প্রায় আধ কিলোমিটার দূরে উড়ে যাওয়া ঘরের চাল খুঁজে এনে কোনও মতে মাথা গোঁজার মতো ঠাই করে নিয়েছেন অমূল্য রায়, বিপদ মণ্ডল, নরেশ রায়, সুদেশ মণ্ডল, জয়কান্ত রায়ের মতো চাষিরা। স্থানীয় বাসিন্দা গুরুপদ কীর্তনিয়ার বাড়ির সামনে উপড়ে যাওয়া তেঁতুল গাছটি এখনও আগের মতোই পড়ে রয়েছে। ঘরের চাল দাঁড় করালেও এখনও বেড়া দিতে পারেননি গুরুপদবাবু। শুক্রবারেও ত্রাণ সামগ্রী ও ক্ষতিপূরণের টাকার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা ভিড় করেছিলেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য মায়া রায়ের বাড়িতে। তাঁদের অভিযোগ, ত্রাণ সামগ্রী প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে পৌঁছচ্ছে না।

প্রশ্ন উঠছে ত্রাণ সামগ্রীর মান নিয়েও। বাসিন্দারা জানান, প্ল্যাস্টিকের বালতি, মগ, জগ, স্টিলের থালা, গ্লাস, হাড়ি, কড়াই, শাড়ি, ধুতি ইত্যাদি দেওয়া হয়েছে ঠিকই। কিন্তু ভাঙা ওই প্লাস্টিক সামগ্রীগুলি ব্যবহার করা যাবে না। মায়াদেবী বলেন, “ওই বিষয়ে আমি সম্পূর্ণ অন্ধকারে। এলাকার একশোটি পরিবার পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার রয়েছে ২৫টি। সেগুলির তালিকা তৈরি করে প্রশাসনের কর্তাদের দেওয়া হয়েছে। ৩৮ জনকে ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হয়েছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

storm scanty relief maynaguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy