Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
Cheetah

চিতাবাঘ না ধরে বাচ্চাকে! ভয় চা বাগানের মায়েদের

আতঙ্ক এতটাই ছড়িয়েছে যে, প্রতিদিন কাজ শুরুর আগে বিভিন্ন সেকশনে পটকা ফাটাচ্ছেন চৌকিদার। যদি সেই শব্দে পালায় বাগানের কোথাও লুকিয়ে থাকা চিতাবাঘ।

কালচিনির ব্লকের ভাতখাওয়া চা বাগানে চিতাবাঘের আতঙ্কে ফাটানো হচ্ছে পটকা।

কালচিনির ব্লকের ভাতখাওয়া চা বাগানে চিতাবাঘের আতঙ্কে ফাটানো হচ্ছে পটকা। —নিজস্ব চিত্র।

সৌম্যদ্বীপ সেন
কালচিনি শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৪ ০৬:১৮
Share: Save:

চা শ্রমিক মায়েদের এ এক জোড়া লড়াই।

বাগানে এই মরসুমে পাতা তোলার সময়সীমা শেষ হওয়ার মুখে তুমুল ব্যস্ত তাঁরা সকলে। কোলের সন্তানকে বাগানের ক্রেশে রেখে পাতা তুলতে বাগানে যাচ্ছেন। সেই সময়ে হানা দিতে শুরু করেছে চিতাবাঘ। ফলে ছড়িয়েছে উদ্বেগ, বাগানের ক্রেশ হাউজ়ে সুরক্ষিত থাকবে তো তাঁদের সন্তানরা? তাই কাজের ফাঁকে মাঝেমধ্যেই তাঁরা ঘুরে আসছেন ক্রেশে। আগে শিশুদের সুরক্ষায় সেখানে পাহারায় থাকতেন লাঠিধারী মহিলা কর্মী। চিতাবাঘের আতঙ্কের জেরে এখন সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে দু’জন বনকর্মীকে।

এমনই পরিস্থিতি আলিপুরদুয়ারের কালচিনি ব্লকের ভাতখাওয়া চা বাগানে। আতঙ্ক এতটাই ছড়িয়েছে যে, প্রতিদিন কাজ শুরুর আগে বিভিন্ন সেকশনে পটকা ফাটাচ্ছেন চৌকিদার। যদি সেই শব্দে পালায় বাগানের কোথাও লুকিয়ে থাকা চিতাবাঘ।

আতঙ্কের সূত্রপাত কয়েক মাস আগে। বাগানের শ্রমিকেরা জানান, গত ৩-৪ মাসের মধ্যে চিতাবাঘের হামলায় সেখানে পাঁচ জন জখম হন। বাগানে বেশ কয়েক বার দেখা মেলে চিতাবাঘের। সম্প্রতি চিতাবাঘের দু’টি শাবকেরও দেখা মিলেছে। বন দফতর সূত্রে খবর, এই সময়ের মধ্যে পাতা খাঁচায় বন্দিও হয় একটি চিতাবাঘ। কিন্তু তার পরেও, সম্প্রতি বাগানের ১১বি সেকশনে চিতাবাঘের হামলায় জখম হন এক মহিলা চা শ্রমিক। তাতে নতুন করে আতঙ্ক ছড়ায়।

কাজে গিয়েছেন মায়েরা। লাঠি হাতে শিশুদের পাহারা মহিলা কর্মীদের।

কাজে গিয়েছেন মায়েরা। লাঠি হাতে শিশুদের পাহারা মহিলা কর্মীদের। —নিজস্ব চিত্র।

এ দিকে, এ বছর সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী ৩০ নভেম্বর থেকে বন্ধ হবে চা পাতা তোলার কাজ। সে জন্য শেষ দশ দিনে কাজের বাড়তি চাপ রয়েছে বাগানে। সেই সময়ে বাগানে চিতাবাঘের পরপর হানায় ভয় ছড়িয়েছে শ্রমিক মহল্লায়। বাধ্য হয়ে ভাতখাওয়া বাগানের বিভিন্ন সেকশনে রোজ কাজ শুরুর আগে ফাটানো হচ্ছে পটকা। ক্রেশে থাকা বাগানের ১৪ জন শিশুর সুরক্ষায় কর্তৃপক্ষের আবেদনে দু’জন বনকর্মীকে পাহারায় মোতায়েন করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও স্বস্তিতে নেই বাগানের শ্রমিক মায়েরা।

ওই বাগানের শ্রমিক ভারতী ভোক্তা বলেন, “দিনদশেক পরেই পাতা তোলা বন্ধ হয়ে যাবে। এখন কাজে দম ফেলার সময় নেই। এরই মধ্যে চিতাবাঘের হানা যথেষ্ট আতঙ্কে আছি। ক্রেশ হাউজ়ে বাচ্চারা কেমন রয়েছে, সে দিকে তাই মন পড়ে থাকছে।” চা শ্রমিক ললিতা কুজুর বলেন, “স্বামী দিনমজুরি করেন। আমি বাগানে কাজ করি। বাড়িতে আর কেউ থাকে না। তাই বাচ্চাকে ক্রেশ হাউজ়ে রাখা ছাড়া উপায়ও নেই।”

ভাতখাওয়া বাগানের ম্যানেজার টি এন পাণ্ডে বলেন, “৩০ নভেম্বর থেকে পাতা তোলা বন্ধ হবে। তার আগে বাগানে চিতাবাঘের ভয়ে কাজের ব্যাঘাত তো ঘটছেই। বিশেষ করে যে সব মহিলার ছোট বাচ্চা আছে, তাঁরা কিছুতেই নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না।”

বন দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “ওই বাগানের কাছেই জঙ্গল। তাই বার বার বাগানে চিতাবাঘ হানা দিচ্ছে।” বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের উপ-ক্ষেত্র অধিকর্তা হরি কৃষ্ণন বলেন, “কোথাও চিতাবাঘের হানার খবর পেলেই সেখানে আমরা খাঁচা পেতে দিই। ভাতখাওয়া বাগানেও তাই করা হয়েছে। আশা করছি, চিতাবাঘটি দ্রুত খাঁচাবন্দি হবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Cheetah North Bengal Tea Garden Kalchini
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy