কামাখ্যাগুড়িতে রাজু সাহার ছবি
আলিপুরদুয়ার জেলা ঘোষণা হবে আগামী ২৫ জুন। এরমধ্যেই বিভিন্ন এলাকায় নতুন মহকুমা ও ব্লকের দাবি ক্রমশ জোরদার হচ্ছে। ইতিমধ্যে আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাট-বীরপাড়া, ফালাকাটা ও কামাক্ষাগুড়ির বাসিন্দারা মহকুমার দাবি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দাবিপত্র পাঠান। ধূপগুড়ি মহকুমার দাবি তুলে দাবিপত্র কলকাতায় পাঠানো হচ্ছে। এই দাবিতে বাম-ডান বিধায়কেরাও যে যার এলাকার জনসাধারণের পাশে দাড়াচ্ছেন। মাদারিহাটের আরএসপি বিধায়ক কুমারী কুজুর থেকে ধূপগুড়ির সিপিএম বিধায়ক মমতা রায় মহকুমা গঠনের দাবি কথা বলেছেন। আলিপুর দুয়ার মহকুমার একমাত্র তৃণমূল বিধায়ক ফালাকাটার অনিল অধিকারীও জনগণের দাবি দলীয় নেতৃত্বের কাছে তুলে ধরেছেন। তবে কেউউ এখনই আন্দোলনের পথে যেতে রাজি নন। সকলেই রাজ্য সরকার কী করতে তা দেখে এগোতে চাইছেন। পাশাপাশি, ব্লকের দাবি তুলেছেন ধূপগুড়ির বানারহাট ও আলিপুরদুয়ার দুই নম্বর ব্লকের শামুকতলার বাসিন্দারা।
বীরপাড়া-মাদারিহাট এলাকার বাসিন্দাদের যুক্তি, মহকুমা শহর আলিপুরদুয়ার থেকে এলাকার দূরত্ব প্রায় ৬৫ কিলোমিটার। আলিপুরদুয়ার মহকুমা শহরে যাতায়াত করতে সারাটা দিন কেটে যায়। প্রায় ৩০টি চা বাগান অধ্যুষিত বীরপাড়া-মাদারিহাট ব্লক চা বাগান থেকে প্রচুর করও আদায় হয়। বীরপাড়া শহর ডুয়ার্সের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসাবে দাঁড়িয়েছে। মহকুমা করতে হলে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন দফতরের জন্য প্রচুর জমি রয়েছে। ফালাকাটা থেকে বীরপাড়ার দূরত্ব মাত্র ২২ কিলোমিটার। তাই ফালাকাটা ব্লকের বাসিন্দারা অনায়াসে বীরপাড়া পৌঁছে কাজকর্ম সারতে পারবেন। এলাকার আরএসপি বিধায়ক কুমারি কুজুর বলেন, “চার লেনের মহাসড়ক পাইনি। এবার মহকুমা না পেলে এখানকার মানুষজন যথেষ্ট বঞ্চিত হবেন।”
ফালাকাটার বাসিন্দাদের যুক্তি বীরপাড়ার থেকে কিছুটা আলাদা। তাঁরা জানাচ্ছেন, ফালাকাটা ব্রিটিশ সরকারে সময়ে মহকুমার মর্যাদা পেয়েছিল দু বছরের জন্য। তাই পুরনো মহকুমার মর্যাদা ফেরানো উচিত। মুখ্যমন্ত্রী তা পূরণ করবেন বলে আশায় বুক বেঁধেছেন বাসিন্দার। তাঁরা জানান, বীরপাড়ার থেকে জনসংখ্যা অনেক বেশি। জমি ও মানুষের আনুপাতিক হার সমান। তা বীরপাড়ার নেই। সেখানে মাইলের পর মাইল চা বাগান। ফালাকাটার কৃষি নির্ভর এলাকায় ব্যবসা বেড়েছে। অপ্রশস্ত জাতীয় ও রাজ্য সড়কের চারটি ভাঙা কাঠের সেতু পেরিয়ে একচল্লিশ কিলোমিটার দূরে আলিপুরদুয়ার মহকুমায় পৌঁছাতে হলে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লেগে যায়। মহকুমা হলে এলাকার কর্মসংস্থান ব্যবসা, বাণিজ্য আরও বাড়বে।
অপর দিকে নতুন জেলা গঠনে জলপাইগুড়ি জেলার অংশে পড়বে ধূপগুড়ি ব্লক। জলপাইগুড়ি ও মালবাজার এই দুই মহকুমাকে নিয়ে হবে জলপাইগুড়ি জেলা। এদিকে, ধূপগুড়ির মত ব্লকে ১৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত ভুটান সীমান্ত চামূচির্র্ থেকে ফালাকাটা ব্লক লাগোয়া গাদং গ্রাম পঞ্চায়েত পর্যন্ত বিস্তৃত। কৃষি ও চা শিল্প ভিত্তিক ধূপগুড়ি ব্লকের বাসিন্দারা নতুন করে মহকুমার দাবি তুলেছেন।
এলাকার সিপিএম বিধায়ক মমতাদেবী আজ, সোমবার মহকুমা করার জন্য যুক্তি সমৃদ্ধ চিঠি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠাবেন বলে জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “জলপাইগুড়ি থেকে ধূপগুড়ি অশহরের দূরত্ব ৪৫ কিলোমিটার হলেও ব্লকের শেষপ্রান্ত চামুর্চি থেকে জলপাইগুড়ির দূরত্ব ৯২ কিমি। তাই এতবড় কৃষি বাণিজ্যভিত্তিক এলাকা মহকুমা হওয়ার যোগ্য।”
ধূপগুড়ি ব্লকের বানারহাটের বাসিন্দারা আবার পৃথক ব্লকের দাবি করেছেন। বাসিন্দাদের যুক্তি, বানারহাট ঘিরে রয়েছে ২২ চা বাগান। ধূপগুড়ি ব্লকে হামেশাই নানা কাজে যাতায়াত করতে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের প্রচুর সময় লাগে। গাড়ি ভাড়া বাবদ যা টাকা লাগে, প্রত্যন্ত চা বাগিচা শ্রমিকদের পক্ষে অনেক সময়ই তা ব্যয় করা সম্ভব হয় না। সে জন্য ব্লক টুকরো করে বানারহাটকে নতুন ব্লকের মর্যাদা দেওয়া প্রয়োজন।
একই ভাবে ডুয়ার্সের অসম ও ভূটান সীমান্তের অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র কামাখ্যাগুড়িকে মহকুমা কররার দাবিতে সরব হয়েছেন বাসিন্দারা। আলিপুরদুয়ার-২ ও কুমারগ্রাম ব্লকের ১৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে কামাখ্যাগুড়িকে মহকুমা করার দাবি উঠেছে। রবিবার বিভিন্ন এলাকায় দাবিতে পোস্টারও পড়েছে। দাবিকে সামনে রেখে বাইক র্যালিও হয়েছে। কুমারগ্রামের তুরতুরি খণ্ড, রায়ডাক কামাখ্যাগুড়ি ১, ২, ভল্কা ১ ও ২, কুমারগ্রাম, চ্যাংমারি, নিউল্যান্ডস ও খোয়ারডাঙ্গা ১, ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এবং আলিপুরদুয়ার ২ ব্লকের শামুকতলা, কোহিনূর, তুরতুরি, মহাকালগুড়ি ও পারোকাটা গ্রাম পঞ্চায়েতকে আনার দাবি উঠেছে। স্থানীয় বিবেকানন্দ ক্লাব ও স্থানীয় বাসিন্দাদের তরফে কয়েক দফায় বিডিও, এসডিও, জেলাশাসকের কাছে দাবিপত্র দেওয়া হয়েছে।
বাসিন্দারা জানান, কুমারগ্রাম ব্লকে তুরতুরি খণ্ড ও রায়ডাক নিউল্যান্ডস, সঙ্কোশ, জয়দেবপুরের মত এমন কিছু দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকা রয়েছে। ৩০-৪০ কিলোমিটার পথ পার হয়ে ব্লক সদরে আসতে হয়। কুমারগ্রাম ব্লকের অন্যতম বাণিজ্য কেন্দ্র কামাখ্যাগুড়ি। অসম ও ভুটান সিমান্ত কাছে হওয়ায় কামাখ্যাগুড়ির গুরুত্ব অনেক। বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়িয়েছে কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস এবং বামেরাও। আরএসপি-র কুমারগ্রামের বিধায়ক মনোজ কুমার ওঁরাও বলেন, “পিছিয়ে পড়া কামাখ্যাগুড়ি মহকুমা করা হলে মানুষ সত্যি উপকৃত হবে।”
কংগ্রেসের কুমারগ্রাম ব্লক কমিটির সভাপতি পলাশ দে এই প্রসঙ্গে বলেন, “ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক এবং জনসংখ্যার দিক বিবেচনা করে কামাখ্যাগুড়িকে আলাদা মহকুমার স্বীকৃতি দেওয়া একান্ত জরুরি।” তৃণমূল কংগ্রেসের কুমারগ্রাম ব্লক সভাপতি দুলাল দে মহকুমা গঠনের দাবিকে সমর্থন করে বলেছেন, “নতুুন মহকুমা গড়া হতেই পারে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীই এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy