সুনসান সুভাষপল্লির রেশন দোকান। ডিসপ্লে বোর্ডেও দেখাচ্ছে এপিএল গ্রাহকদের জন্য চাল-ডাল নেই। ছবি: দেবমাল্য বাগচী।
রাজ্যবাসীকে দু’টাকা কিলো চাল দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। তারপরেও খড়্গপুরের এপিএল গ্রাহকেরা রেশনে চাল-গম পাচ্ছেন না। ডিলারদের দাবি, গত তিন সপ্তাহ ধরে শহরে এপিএল গ্রাহকদের জন্য চাল ও গম বরাদ্দ করছে না খাদ্য বন্টন দফতর। পুজোর মুখে এমন পরিস্থিতিতে পড়ে ক্ষুব্ধ রেশন গ্রাহকেরা। এ ক্ষেত্রে কিছু অসাধু ডিলারকে জব্দ করতেই বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি খাদ্য বন্টন দফতরের কর্তাদের। আর দফতরের আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, নতুন করে ডিজিট্যাল রেশন কার্ড পেতে যে ফর্ম পূরণ হয়েছে, তার ভিত্তিতেই খাদ্য সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে বলে।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্র ও রাজ্যের খাদ্য আইনে খড়্গপুরে প্রায় ৯৫ হাজার ডিজিট্যাল রেশন কার্ড এসেছিল। প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ জনসংখ্যার শহরে বেশিরভাগ বাসিন্দা রেশন কার্ড না পাওয়ায় অশান্তি শুরু হয়। বিঘ্নিত হয় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। তারপর দীর্ঘ দিন শহরে ডিজিট্যাল রেশন কার্ড বিলি বন্ধ ছিল। সম্প্রতি ফের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কার্ড বিলি শুরু হয়েছে। তাছাড়া, নতুন করে ডিজিট্যাল কার্ডের জন্য আবেদনে ফর্ম পূরণ করার কথা বলা হয়েছিল। তবে যতদিন নতুন কার্ড না পাওয়া যাচ্ছে, ততদিন রাজ্যের সব নাগরিককে ২ টাকা কিলো দরে চাল দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী সেই মতো শহরের রেশন গ্রাহকেরা এত দিন মাথাপিছু ২ টাকা কেজি দরে ৫০০ গ্রাম চাল ও ৭৫০ গ্রাম গম পাচ্ছিলেন। তবে তিন সপ্তাহ ধরে অনেকেই তা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। খরিদা মিলনমন্দির এলাকার বাসিন্দা পেশায় দোকানের কর্মী রাকেশ শর্মা যেমন বলেন, “আমি ডিজিট্যাল কার্ড পাইনি। এখন আমার রেশন ডিলার চাল দিতে চাইছে না।’’
এই পরিস্থিতির জন্য খাদ্য দফতরকেই দুষছেন রেশন ডিলাররা। তাঁদের দাবি, গত তিন সপ্তাহ ধরে এপিএল গ্রাহকদের জন্য চাল বরাদ্দ করা হচ্ছে না। কারণও বলতে পারছেন না বলে খাদ্য দফতরের কর্তারা। শহরের এক রেশন ডিলারের কথায়, “আমরা ক্ষোভ জানালে মহকুমা খাদ্য নিয়ামক ব্যবস্থা নেবেন। তাই চুপ রয়েছি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর কথা মতো সামগ্রী দিতে না পারায় গ্রাহকদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে। এমনটা চললে ফের আইনশৃঙ্খলা ব্যাহত হবে।’’ খড়্গপুর রেশন ডিলার অ্যাসোশিয়েশনের সম্পাদক শিশির রায়ও একই সুরে বলেন, “পুজোর আগে তিন সপ্তাহ ধরে এপিএল গ্রাহকদের জন্য চাল ও গম বরাদ্দ না হওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে।’’ তিনি আরও জানান, বিষয়টি মহকুমা খাদ্য নিয়ামকের নজরে আনা হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন।”
খাদ্য দফতর অবশ্য অন্য কথা বলছে। জনা গিয়েছে, নতুন করে ডিজিট্যাল রেশন কার্ড পাওয়ার জন্য ৫৪ হাজার মানুষ ফর্ম পূরণ করেছিলেন। ত্রুটিযুক্ত ফর্ম ঝাড়াই-বাছাইয়ের পরে ২০,৪৩৫টি ফর্ম গ্রহণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে খাদ্য দফতরের কর্তাদের ব্যাখ্যা, খড়্গপুরের বাসিন্দাদের অধিকাংশ রেল ও বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা। তাঁরা এই শহরের রেশন গ্রাহক নন। তাই, রেশন নিতে আগ্রহী নন বলে ফর্ম পূরণ করেননি। কিন্তু কিছু অসাধু রেশন ডিলার কারচুপি করে বেশি সংখ্যক রেশন কার্ডের প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত খাদ্য সামগ্রী তুলছিলেন। পরে তা খোলাবাজারে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছিলেন। সেই প্রবণতা আটকাতেই কম পরিমাণ খাদ্য সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। খড়্গপুর মহকুমার খাদ্য নিয়ামক মিঠুন দাস বলেন, “আমরা রেশন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে চাইছি। তাই যে ২০,৪৩৫টি ফর্ম গ্রহণ করা হয়েছে, সেই অনুযায়ী খাদ্যসামগ্রী বরাদ্দ করা হচ্ছে। আমার বিশ্বাস এতে রেশন নিতে যাঁরা ইচ্ছুক তাঁরা রেশন পাচ্ছেন। এর পরেও যদি গ্রাহকদের বাড়তি চাহিদা থাকে তবে সংশ্লিষ্ট ডিলার উপযুক্ত প্রমাণ দিলে আমরা তাঁর বরাদ্দ বাড়াব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy