প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। —ফাইল চিত্র।
বিকেলে বুকের ইউএসজি হয়েছিল অসুস্থ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। সন্ধ্যায় সেই পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে চিকিৎসকেরা জানালেন, বুদ্ধদেবের শারীরিক অবস্থা নিয়ে এখনই অস্বস্তির কিছু পাননি তাঁরা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মেডিক্যাল বুলেটিনে বলা হয়েছে, আপাতত পরিস্থিতির কোনও অবনতি হয়নি। নতুন কোনও চিকিৎসা শুরু করারও প্রয়োজন হচ্ছে না। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। তাঁর জ্ঞান রয়েছে। তিনি চিকিৎসকদের কথায় সাড়া দিচ্ছেন। এমনকি, যাঁরা তাঁকে দেখতে গিয়েছিলেন, তাঁদের ডাকেও বুদ্ধদেব সাড়া দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
হাসপাতালে ছ’দিন পার
গত শনিবার শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা নিয়ে আলিপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে দেখেছিলেন, তাঁর শ্বাসনালিতে সংক্রমণ রয়েছে। দু’টি ফুসফুসেও সংক্রমণের মাত্রা অত্যন্ত বেশি। টাইপ টু রেসপিরেটরি ফেলিওর হয়েছিল বাম নেতার। শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ইন্টারমিটেন্ট নন ইনভেসিভ ভেন্টিলেটরি সাপোর্টে রাখা হয়েছিল তাঁকে। বুদ্ধদেব হাসপাতালে রয়েছেন ছ’দিন। এই সময়ে বুদ্ধদেবের শারীরিক অবস্থার কখনও অবনতি হয়েছে, কখনও থেকেছে স্থিতিশীল। তবে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, সঙ্কট এখনও পুরোপুরি কাটেনি। তবে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থার অবনতির কোনও লক্ষণ চোখে পড়েনি আপাতত।
বৃহস্পতিবারের ইউএসজি
বুধবার রাতে আচমকাই বুকে অস্বস্তি অনুভব করেছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর ইসিজি করানো হয়। সেই রিপোর্টে চিন্তার কিছু খুঁজে পাননি চিকিৎসকেরা। পরে করানো হয় এক্সরে। তাতে দেখা যায় একটি অংশ অস্পষ্ট। তাই চিকিৎসকরা ঠিক করেছিলেন, বৃহস্পতিবার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর আল্ট্রা সোনোগ্রাফি করানো হবে। তাতে ধরা পড়়বে বুদ্ধদেবের বুকে জল জমেছে কি না। তাই বৃহস্পতিবারের ইউএসজি রিপোর্ট ছিল গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বৃহস্পতিবারের বুকের ইউএসজি রিপোর্টের উপর নির্ভর করছিল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর পরবর্তী চিকিৎসা কোন পথে এগোবে।
রিপোর্ট দেখে চিকিৎসকদের মত
আপাতত সেই রিপোর্ট দেখার পরই চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, নতুন করে কোনও চিকিৎসা পদ্ধতি শুরু করার প্রয়োজন পড়ছে না এখনই। চিকিৎসকেরা আগেই জানিয়েছিলেন, বুদ্ধদেবের বুকে জল জমলে সেই জল বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। রিপোর্ট পাওয়ার পর চিকিৎসকেরা সে ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু না বলায়, মনে করা হচ্ছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বুকে জল জমে কোনও গুরুতর পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
কোন পথে পরবর্তী চিকিৎসা
বুদ্ধদেব নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। এ ছা়ড়াও রয়েছে সংক্রমণ। যদিও সংক্রমণ আগের তুলনায় কমেছে। কিন্তু এখনও তিনি পুরোপুরি সংক্রমণমুক্ত নন। তাই স্যালাইনের মাধ্যমে তাঁকে যে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হচ্ছে তা শনিবার পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় যা যা ওষুধ দেওয়া দরকার এবং ফিজিওথেরাপি করানোর দরকার, তা-ও চলছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
আমের স্বাদ নিয়েছেন বুদ্ধদেব
বুধবারই চিকিৎসকদের কাছে আম খেতে চেয়েছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। জানা গিয়েছে, তাঁর জিভে আমের স্বাদও দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। যদিও রাইলস টিউবের মাধ্যমেই এখনও খাওয়াদাওয়া করাতে হচ্ছে বুদ্ধদেবকে। তাঁর ‘সোয়ালো অ্যাসেসমেন্ট’-ও যথারীতি চলবে।
শনিবার আবার বসবে মেডিক্যাল বোর্ড
মেডিক্যাল বোর্ড দেখে নিতে চাইছে, এক সপ্তাহ ধরে অ্যান্টিবায়োটিক চলার পর কেমন থাকেন বুদ্ধদেব। উন্নতি আশানুরূপ হলে বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে অ্যান্টিবায়োটিক। অথবা ডোজের পরিবর্তনও করা হতে পারে। শনিবার পর্যন্ত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা দেখে নিয়েই আবার বসবে মেডিক্যাল বোর্ড। তাঁর চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডে শুরু থেকে রয়েছেন পালমোনোলজিস্ট অঙ্কন বন্দ্যোপাধ্যায়। এ ছাড়া রয়েছেন, মেডিসিনের চিকিৎসক কৌশিক চক্রবর্তী, ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ সৌতিক পাণ্ডা, সুস্মিতা দেবনাথ, ইন্টারভেনশনাল কার্ডিয়োলজিস্ট সরোজ মণ্ডল, ইন্টারনাল মেডিসিন এবং ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ ধ্রুব ভট্টাচার্য, অ্যানেস্থিয়োলজিস্ট আশিস পাত্র, ইনফেকশাস ডিজিজ় স্পেশালিস্ট দীপনারায়ণ মুখোপাধ্যায়, এন্ডোক্রিনোলজিস্ট সেমন্তি চক্রবর্তী, জেনারেল মেডিসিনের সোমনাথ মাইতি এবং ফিজিশিয়ান এবং হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপারিনটেন্ডেন্ট সপ্তর্ষি বসু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy