নির্দেশ: সাংবাদিক বৈঠকে অনুব্রত মণ্ডল। সিউড়িতে। নিজস্ব চিত্র
দিন কয়েক আগে ভাইরাল হওয়া ভিডিয়ো ফুটেজে এক মহিলাকে ‘গাঁজা কেসে অ্যারেস্ট’ করিয়ে দেওয়ার কথা বলতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। সেই মহিলা বিজেপি করেন দাবি করেছিলেন তিনি। এ বার বোর্ড গঠনে ‘বিশৃঙ্খলা’ হলে দলের অঞ্চল সভাপতিকে ‘জেলে পাঠানোর’ হুঁশিয়ারি দিলেন বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল।
বৃহস্পতিবার সিউড়িতে জেলা তৃণমূলের কার্যালয়ে ওই কথা বলেন অনুব্রত। বিরোধী-শূন্য পঞ্চায়েতগুলির বোর্ড গঠন এ দিন থেকেই শুরু হয়েছে জেলায়। সেই পর্ব শান্তিপূর্ণ থাকায় দৃশ্যতই তৃপ্ত তৃণমূল জেলা সভাপতি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন জেলা কার্যালয়ে। এর পরে যদি সমস্যা হয়, তা হলে কী করবেন, সাংবাদিকদের এই প্রশ্নেই অনুব্রত জানিয়ে দেন, কোনও ‘বিশৃঙ্খলা’ হলে দায় বর্তাবে অঞ্চল ও ব্লক সভাপতির উপরেই। তিনি বলেন, ‘‘বীরভূমের কোনও অঞ্চলে যদি কোনও সমস্যা বা ভুল হয়, তা হলে দায়িত্ব তো আমি নেব না। ব্লক সভাপতিকে জিজ্ঞাসা করব। ব্লক সভাপতিকে সাসপেন্ড করব। অঞ্চল সভাপতিকে জেল খাটাব।’’
তাঁর সংযোজন, ‘‘প্রধান নিয়ে কোনও আপত্তি থাকতেই পারে। অঞ্চল সভাপতি ব্লক সভাপতিকে বলুন, ব্লক সভাপতি আমায় বলুন। ছ’মাস পর প্রধানকে সরিয়ে দেওয়া হবে। তবে বিশৃঙ্খলা করলে অঞ্চল সভাপতি জেলে যাবেন আর ব্লক সভাপতি খারিজ হবেন।’’
ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতে বিরোধী শূন্য আসনগুলি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হওয়ায় বোর্ড গঠন এত দিন থমকে ছিল। কিন্তু, সম্পূ্র্ণ নির্বাচন হয়েছে, এমন ১০টি পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠিত হওয়ায় বাধা ছিল না। আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যা থাকায় ওই ১০টির মধ্যে ইতিমধ্যেই মহম্মদবাজারের রামপুর পঞ্চায়েত বাদে বাকি ৯টির বোর্ড গঠন হয়েছে। পঞ্চায়েত মামলার নিষ্পত্তির পরে ধাপে ধাপে বাকি ১৫৮ গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার থেকে।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, এ দিন দুবরাজপুর, রাজনগর, নলহাটি ১, ময়ূরেশ্বর ১ ও খয়রাশোল ব্লকের ২৫টি পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠিত হয়েছে। ২২ তারিখের মধ্যে সমাপ্ত হবে বোর্ড গঠন প্রক্রিয়া। ২৪-২৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ১৯টি পঞ্চায়েত সমিতি ও ২৮ তারিখ জেলা পরিষদে বোর্ড গঠন হওয়ার কথা।
এমনিতে বীরভূমে পঞ্চায়েত তিন স্তরেই শাসকদল প্রায় নিরঙ্কুশ ভাবে ক্ষমতায়। জেলা পরিষদ পুরোপুরি বিরোধী শূন্য। সব ক’টি পঞ্চায়েত সমিতিও তৃণমূলের দখলে। গোটা জেলায় বিরোধীদের দখলে দু’টি মাত্র পঞ্চায়েত। একটি । তৃণমূল সূত্রের খবর, অনুব্রতর একমাত্র মাথাব্যথা দলের ভিতরের কোন্দল। যা গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের সময় ছায়া ফেলতে পারে বলে জেলা নেতৃত্বের আশঙ্কা। হয়তো সে কারণেই এ দিন অনুব্রতকে ওই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বলে দলের নেতারা মনে করছেন।
বিরোধীদের অবশ্য অভিযোগ, এই জেলায় অনুব্রত আর পুলিশ যে সমার্থক, তা তাঁর মন্তব্য থেকেই পরিষ্কার। সিপিএম এবং বিজেপি নেতাদের আরও বক্তব্য, নিরঙ্কুশ ক্ষমতা পেয়েও দলের ভিতরের দ্বন্দ্বকে ভয় পাচ্ছেন খোদ সভাপতি। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদা বলেন, ‘‘যে দল মানুষের গণতন্ত্রকে মর্যাদা দেয় না, সে দল অভ্যন্তরীণ গণতন্দ্রকে কী ভাবে বিশ্বাস করবে? তাই প্রতিনিয়ত ভয় দেখাতে হচ্ছে। পুলিশকে কাজে লাগানোর কথা বলতে হচ্ছে। এর পরেও কিন্তু তৃণমূল ভাঙবে।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়ের বক্তব্য, ‘‘নিজের দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আস্থা না থাকলেই মুখ থেকে এমন কথা বের হয়। এটা সবাই জানে যে, তৃণমূলের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিচ্ছে, ওঁর শেখানো বোমা-বন্দুকের লড়াইয়ে নিজেরাই ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে, দলের লোকেরা বিজেপির দিকে ঝুঁকছেন। তাই এ কথা বলতেই হবে।’’
অনুব্রতের নিজের ব্যাখ্যা, বাড়িতে যেমন অভিভাবকেরা সদস্যদের শাসন করে রাখেন, তেমনই দলের অভিভাবকেরাও দলকে শাসন করে রাখলে কোনও সমস্যা হয় না। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘১৬৭টি পঞ্চায়েতের মধ্যে দু’টি মাত্র আমাদের হাতছাড়া। মঙ্গলকোট-কেতুগ্রামেও কোনও পঞ্চায়েত হাতছাড়া নয়। বিরোধীরা কোথায়!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy