হেল্প ডেস্কের নতুন মডেল!
রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছে কোনও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ কিংবা ছাত্র সংগঠন হেল্প ডেস্ক বসাতে পারবে না। তাতে কি, ছাত্র সংগঠনগুলির প্রতিনিধিরা কেউ প্রবেশিকা পরীক্ষার মডেল প্রশ্নপত্র বিলি করার নামে কেউ আবার সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিপরাপত্তা রক্ষীর মাধ্যমে দিব্যি ভর্তি হতে আসা পড়ুয়াদের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করে নিচ্ছেন। মডেল প্রশ্নপত্রের উপরে লেখা থাকছে মোবাইল নম্বর কিংবা কোন ফেস বুক পেজে যোগাযোগ করতে হবে তার বৃন্তান্ত। কোথাও আবার বিভ্রান্ত প়ড়ুয়া বা তাঁদের অভিভাবকেরা যখন একজন মুশকিল আসানের খোঁজ করতে করতে নিরাপত্তা রক্ষীর কাছে যাচ্ছেন, তখনই মিলছে কাগজের টুকরো। তাতে মোবাইল নম্বর লেখা। আর সেই মোবাইল নম্বর এবং ফেস বুক পেজ-ই এখন ভর্তি হতে আসা পড়ুয়াদের কাছে হেল্প ডেস্ক। নতুন মডেলে।
ভর্তি হতে আসা ছাত্রছাত্রী কিংবা তাঁদের আত্মীয়দের কাছ থেকে পরামর্শ দেওয়ার নাম করেই শুধু নয়, ভর্তি করিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে হেল্প ডেস্কে বসা ছাত্র সংগঠনের নেতাদের অনেকেই মোটা টাকা আদায় করেন বলে অভিযোগ। জেলার কলেজগুলিতে তো বটেই, কলকাতাতেও হেল্প ডেস্কে এসে মোটা টাকা গচ্চা দেওয়ার অভিযোগ কিন্তু মাঝেমধ্যেই। কাদের হেল্পডেস্ক ভর্তি হতে আসা পড়ুয়াদের কত বেশি আকর্ষণ করতে পারে তা নিয়ে অতীতে ছাত্র সংগঠনগুলি নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়ানোর ঘটনাও ঘটেছে বহুবার। এমতাবস্থায় রাজ্য সরকার জানিয়ে দিয়েছে, ভর্তি প্রক্রিয়ায় হেল্প ডেস্কের কোনও প্রয়োজন নেই।
ভর্তির প্রক্রিয়া শান্তিপূর্ণ এবং দুর্নীতিমুক্ত করতে ইউজিসি-ও হেল্পডেক্স তুলে দেওয়ার পক্ষেই সওয়াল করেছে। তাহলে ভর্তির প্রক্রিয়ায় কোনও সমস্যায় পড়লে পড়ুয়া বা তাঁদের অভিভাবকেরা কোথায় যাবেন? বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নির্দেশ, কোনও পড়ুয়া কিংবা তাঁদের অভিভাবক ভর্তির প্রকিয়া নিয়ে সময়্যায় পড়লে তা সমাধানের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। ইউজিসি প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে হেল্পলাইন চালু করার নির্দেশ দিয়েছে। বুধবারের ওই নির্দেশে বলা হয়েছে, ‘ভর্তি প্রক্রিয়াকে সমস্যামুক্ত করতে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে ভর্তি প্রক্রিয়া চলাকালীন সপ্তাহে সাতদিন ২৮ ঘণ্টা হেল্প লাইন চালু রাখতে হবে।’ ইউজিসি-র মতে, ভর্তির প্রক্রিয়ায় বিভ্রান্তি এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব হেল্পলাইনই এই মুহর্তে সব থেকে কার্যকর দাওয়াই।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় যেমন ইউজিসি-র এই নির্দেশের আগেই হেল্প লাইন চালু করলেও, তা কিন্তু ২৪ ঘণ্টার জন্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয় যতক্ষণ খোলা থাকে ততক্ষণ কিন্তু ফোন ধরার লোক থাকেন। ফোনে তাঁরা প্রয়োজনীয় তথ্যের যোগান দেন। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে হেল্প লাইনের একটি ফোন নম্বর এবং একটি ফ্যাক্স নম্বর দেওয়া হয়েছে। হেল্প লাইনে ফোন পাওয়াটা কোটি টাকার লটারি পাওয়ার মতো। ফ্যাক্স নম্বরে ডায়াল করলে ফ্যাক্স টোন আসে না বলে প়ডুয়া ও ছাত্রছাত্রীদের অনেকেরই অভিযোগ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েরও একটি হেল্প লাইন রয়েছে। সেই হেল্প লাইন নম্বরে ফোন করলে কালেভদ্রে সাড়া মেলে। এমনই অভিজ্ঞতা পড়ুয়াদের। আর তাই ভর্তি সক্রান্ত কোনও সমস্যায় পড়লে ছাত্রছাত্রী ও তাঁদের অভিভাবকেরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে প্রথমেই হেল্প ডেস্কের খোঁজ করেন।
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসে স্নাতক নিয়ে ভর্তি হতে চেয়েছিলেন ধনেখালির এক পড়ুয়া। অনলাইনে ফর্মপূরণ করতে গিয়ে বিপত্তি। কিছুতেই জট খোলে না। প্রেসিডেন্সির হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করে করে আঙুল ব্যাথা হয়ে গেল তাঁর। কিন্তু সাড়া মিলল না। দাদাকে সঙ্গে নিয়ে সেই পড়ুয়া এক দুপুরে এসে হাজির কলেজ স্ট্রিটে। প্রেসিডেন্সিতে ঘোরাঘুরি করে এমন কাউকে পেলেন না যাঁকে জিজ্ঞাসা করে সমাধান সূত্র মেলে। নিরাপত্তা রক্ষীরাই অতএব ভরসা। আর সেখানে খোঁজ করতেই মিলল মোবাইল নম্বর। মুশকিল আসান। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ওই ছাত্রীটির আর ফর্ম ভরা হয়নি প্রেসিডেন্সির। কারণ, দেখা গেল পড়ুয়াটির যোগ্যতাই নেই প্রেসিডেন্সিতে ভর্তি হওয়ায়।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র সংসদ তাদের নিজস্ব হেল্পডেস্ক বসায়। চলতি বছরে স্নাতকোত্তরের প্রবেশিকা পরীক্ষার সময় বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে একাধিক জায়গায় পড়ুয়ারা মডেল প্রশ্নপত্র নিয়ে বসেছিলেন। এসএফআইয়ের তরফে গীতশ্রী সরকার বলেন, ‘‘কেউ প্রশ্নপত্র কিনলে তার উপর আমাদের কারও নম্বর লিখে দেওয়া হয় যাতে পরে সেই পড়ুয়ার কোনও দরকার পড়লে আমরা সাহায্য করতে পারি।’’ প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের পক্ষে প্রান্তিক বসু বলেন, ‘‘ফেসবুকে আমাদের পেজে চেষ্টা করা হয় সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার। প্রতি বিভাগের পড়ুয়ার নম্বর দেওয়া থাকে। যাতে যে কোনও সমস্যায় সাহায্যের জন্য যোগাযোগ করা যায়।’’ কিন্তু সবাই কি ফেসবুকের সাহায্য নিতে সক্ষম? ‘‘সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে কিছু পড়ুয়ার নম্বর দেওয়া থাকে। কেউ ভর্তি সংক্রান্ত প্রশ্ন নিয়ে এলে তাঁরা সেই নম্বর নিয়ে আমাদের ফোন করেন। প্রচুর ফোন বা মেল পাই আমরা’’—বলেন প্রান্তিক।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষ অবশ্য পড়ুয়াদের থেকে বেশি ভরসা রেখেছেন নিজস্ব ওয়েবসাইটের উপরেই। তিনি বলেন, ‘‘অন্য কেউ হেল্পডেস্ক করুক। কিন্তু আমাদের ওয়েবসাইটে হেল্পলাইন রয়েছে। তাতে ফোন করে কেউ সাহায্য পাননি এমন নয়।’’ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সোমা বন্দ্যোপাধ্যায় সব শুনে বলেছেন, ‘‘বাইরে আছি। কলকাতায় ফিরে যা বলার বলব।’’ প্রেসিডেন্সির রেজিস্ট্রার দেবজ্যোতি কোনার একবার ফোন ধরে বলেছেন,‘‘মিটিং-য়ে আছি।’’ পরে আর ফোন ধরেননি। এসএমএস-য়েরও জবাব দেননি।
বিকাশভবন সূত্রের খবর, কলেজে ভর্তিতে শাসক ছাত্র সংগঠনের দাপাদাপি কমাতেই সেন্ট্রালাইজড অনলাইন ভর্তির ব্যবস্থা ভাবা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা কার্যকর করা যায়নি। তাই ভর্তির ক্ষেত্রে ছাত্র সংসদের দাদাগিরি বন্ধ হয়নি। এ বছরও হেল্পডেস্ক বন্ধে ফের কড়া নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী। শিক্ষকদের একাংশ বলছেন, হেল্পডেস্ক না থাকুক, মোবাইলতো রয়েছে! ওটাই এখন মুশকিল আসান। তবে নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত টিএমসিপির রাজ্য সভাপতি জয়া দত্ত জানিয়েছেন, ‘‘এরপরেও যদি কোথাও হেল্পডেস্ক খুলে ছাত্রভর্তিকে প্রভাবিত করা হয় তবে সেই পড়ুয়া বা অভিভাবক আমাদের লিখিত অভিযোগ জানান। দল কড়া ব্যবস্থা নেবে।’’ শুধু তাই নয়, আজ শুক্রবার থেকেই কলকাতা, এমনকি জেলার প্রতিটি কলেজে তিনি নিজে গিয়ে পরিদর্শন করবেন বলে জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy