নিজের তৈরি যন্ত্র হাতে বর্ণালী ঘটক। নিজস্ব চিত্র
ইলিশ বা রসগোল্লার প্রতি বাঙালির যত প্রেম, গাছপাকা আম নিয়ে তার চেয়ে কিছু কম নয়। কিন্তু দোকানে-বাজারে হলদে টুকটুকে আমের আড়ালে কার্বাইডের বিষ লুকিয়ে থাকছে কি না, তা চট করে বোঝা মুশকিল। কারণ, অকালে ফল পাকিয়ে তোলার কাজে সরকারি ভাবে কার্বাইডের ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও গ্রামেগঞ্জে তা ব্যবহৃত হয় আকছার।
কার্বাইড রয়েছে কি না, তা মানুষের পক্ষে শুঁকে বা দেখে বলা মুশকিল। তাই ‘যান্ত্রিক নাক’ দিয়ে আমের গায়ে কার্বাইডের অস্তিত্ব যাচাই করার পদ্ধতি বাতলেছেন এক বাঙালি গবেষক। তার স্বীকৃতি হিসেবে সম্প্রতি কলকাতার আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছেন বর্ণালী ঘটক নামে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষিকা। তিনি এখন যাদবপুরে অধ্যাপক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের অধীনে গবেষণারত। বর্ণালী বলছেন, ‘‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও বম্বে আইআইটি-র যৌথ প্রকল্পে একটি সেন্সর তৈরি করা হয়েছে। আমের ত্বকে কার্বাইড রয়েছে কি না, এই যান্ত্রিক নাক গন্ধ শুঁকেই সেটা যাচাই করতে পারবে। এই সেন্সরের দামও অনেক কম। বিষয়টি নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ফুড সেফটি স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি।’’
চাষিদের অনেকেই বলছেন, কার্বাইডে পাকালে ফলের রং টুকটুকে হয় বটে, কিন্তু তাতে গাছপাকা ফলের স্বাদ মেলে না। আর চিকিৎসকেরা বলছেন, কার্বাইডে পাকানো ফল খেলে শরীরে নানান রোগ দেখা দিতে পারে। যে-সব চাষি কার্বাইড দিয়ে ফল পাকান, তাঁদেরও চর্মরোগ হয়।
আম রফতানির ক্ষেত্রে ভারত প্রথম সারির দেশ। অনেকেই বলছেন, কার্বাইড দিয়ে পাকানো আম রাজ্যের বিভিন্ন বাজারে তো বিক্রি হয়ই, ভিন্ রাজ্যেও রফতানি হয়। তবে কার্বাইডে পাকানো ফল বিদেশে রফতানির ক্ষেত্রে কড়াকড়ি থাকে। কোনও ফলে কার্বাইডের অস্তিত্ব ধরা পড়লে রফতানি বাধা পায়।
গবেষকেরা জানাচ্ছেন, কার্বাইড জলীয় বাষ্পের সংস্পর্শে এসে অ্যাসিটিলিন গ্যাস তৈরি করে। সেটাই ফল পাকাতে সাহায্য করে। কিন্তু ওই গ্যাসের অস্তিত্ব খালি চোখে বা নাকে বোঝা সম্ভব নয়। বর্ণালী জানান, ঘড়িতে থাকা কোয়ার্টজ় ক্রিস্টাল দিয়ে সেন্সর তৈরি করা হয়ে থাকে। আমের গন্ধ শুঁকলে সেন্সরের স্ক্রিনে থাকা ফ্রিকোয়েন্সির বদল দেখে কার্বাইডের অস্তিত্ব বোঝা সম্ভব।
প্রশ্ন উঠেছে, আম ছাড়া কলা বা অন্যান্য ফলের ক্ষেত্রে এই যান্ত্রিক নাসিকা কাজ করবে কি? বর্ণালী জানাচ্ছেন, তাঁর সেন্সর আম চেনার জন্যই তৈরি করা হয়েছে। ভিন্ন ফল চিনতে হলে সেই ফলের কথা মাথায় রেখে সেন্সর তৈরি করতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy