প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্যে যাঁরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, তাঁদের চাকরির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেবে রাজ্য সরকার। এর পরেও যদি শূন্য পদ থাকে, তবে নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীরাও চাকরির সুযোগ পাবেন। হাইকোর্টে বৃহস্পতিবার হলফনামা দিয়ে এই স্পষ্ট অবস্থান জানানো হল রাজ্য
সরকারের তরফে।
প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের জন্য গত বছর ১১ অক্টোবর রাজ্য জুড়ে ‘টেট’ (টিচার্স এলিজিবিলিটি টেস্ট) নিয়েছিল শিক্ষা দফতর। কিন্তু পরীক্ষাটি বাতিলের আবেদন জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন বেশ কিছু প্রশিক্ষিত প্রার্থী। তাঁদের আইনজীবী সৌমেন দত্তের বক্তব্য, নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশিক্ষণহীনদের বসার সুযোগ দিতে রাজ্য সরকার গত বছরের গোড়ায় কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে আর্জি জানিয়েছিল। কেন্দ্র সেই আবেদন মঞ্জুরও করে। কিন্তু একই সঙ্গে কেন্দ্রের তরফে একটি সুনির্দিষ্ট শর্তও রাখা হয়েছিল। তা হল ২০১৬ সালের মার্চ মাসের মধ্যে নিয়োগের কাজ শেষ করতে হবে। তা এখনও সম্পূর্ণ না হওয়ার কারণেই এই মামলা দায়ের হয়েছে।
এ দিন ওই মামলার শুনানিতেইরাজ্যের অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল লক্ষী গুপ্ত হাইকোর্টের বিচারপতি চিন্নাস্বামী স্বামীনাথন কারনানের আদালতে এ ব্যাপারে সরকারের অবস্থান পেশ করেন। তিনি জানান, বর্তমানে প্রাথমিকে ৪০ থেকে ৪২ হাজার শূন্য শিক্ষক পদ রয়েছে। সরকার চাইছে সেগুলি পূরণ করতে। সেই কারণে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। তবে সরকার এ-ও সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যে সব প্রশিক্ষিত প্রার্থী টেট পাশ করবেন, নিয়োগের ক্ষেত্রে তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তার পরেও শূন্য পদ থাকলে টেট উত্তীর্ণ অপ্রশিক্ষিত প্রার্থীরা চাকরির সুযোগ পাবেন।
সরকারের এই অবস্থান তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ, এতে টেট নিয়ে দীর্ঘ জটিলতার অবসান হতে পারে বলে অনেকের মত। এমনকী বিরোধী দলের অনেক নেতাও তেমনটাই মনে করছেন। তবে বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান ও বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘এই দাবিটা নিয়েই তো এত দিন ধরে আন্দোলন হল। চাকরিপ্রার্থী ছেলেমেয়েদের মধ্যে কেউ কেউ হতাশায় ভুগে আত্মহত্যাও করল। এখন সরকারের বোধোদয় হয়েছে— ভাল কথা। কিন্তু যাঁদের কেরিয়ারের পাঁচটা বছর গেল, তাঁদেরকে সরকার কী ভাবে ক্ষতিপূরণ দেবে?’’
প্রসঙ্গত, দু’দিন আগে এই মামলার শুনানির সময়েই রাজ্য সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করেছিল আদালত। টেট নিয়ে রাজ্য সরকার কেন্দ্রকে বিভ্রান্ত করছে কি না, সেই প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি আদালত রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছিল, রাজ্যে প্রাথমিকে কত শূন্য পদ রয়েছে, তা হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে। প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের সুযোগ দিতে রাজ্য সরকার কেন্দ্রের কাছে যে আবেদন জানিয়েছিল, তার প্রত্যয়িত প্রতিলিপিও পেশ করার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত।
সেই মোতাবেক এ দিন হাইকোর্টে হলফনামা পেশ করা হয় রাজ্য সরকারের তরফে। যদিও মামলার আবেদনকারীদের আইনজীবী আদালতে জানান, পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রশিক্ষিত প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও সরকার অপ্রশিক্ষিতদের টেট-এ বসতে দিয়েছে।
উভয়পক্ষের সওয়াল শোনার পর আদালত অবশ্য এ দিনই কোনও মত বা পর্যবেক্ষণ জানায়নি। ২৬ অগস্ট পরবর্তী শুনানির দিন হিসাবে স্থির করেছেন মাত্র। তবে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মামলা চলাকালীন কোনও মন্তব্য করা ঠিক নয়। কিন্তু সরকার একটা ব্যাপার ধারাবাহিক ভাবেই বলছে। তা হল, কেবলমাত্র প্রশিক্ষণ থাকাটাই প্রাথমিকে শিক্ষক পদে চাকরি পাওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। টেট পাশ করতেই হবে।’’ মন্ত্রীর এই বক্তব্য ব্যাখ্যা করে শিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যাচ্ছে, প্রশিক্ষিতদের অনেকেই টেট পাশ করতে পারছেন না। আবার যাঁরা প্রশিক্ষণ নেননি, তাঁদের অনেকে টেট পরীক্ষায় খুবই ভাল ফল করছেন। তবে আগে দেখা যাক, আদালত চূড়ান্ত রায় কী দেয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy