প্রত্যাবর্তন। লালবাজারে রাজীব কুমার। ছবি: সুমন বল্লভ।
শনিবার সন্ধে ৬টা। লালবাজার ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন সৌমেন মিত্র। অন্য দিনের মতো হাসি মুখে সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে। অফিসার ও নিরাপত্তারক্ষীদের নমস্কার করে। তত ক্ষণে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে তাঁর অপসারণের নির্দেশনামায় সরকারি সিলমোহর পড়ে গিয়েছে।
সৌমেন মিত্র লালবাজার ছেড়ে যাওয়ার আধ ঘণ্টার মধ্যেই বদলে গেল সিপি-র ঘরের নেমপ্লেট। তার পর সন্ধে সাতটা নাগাল লালবাজারে এলেন রাজীব কুমার। প্রায় পাঁচ সপ্তাহ পরে ফের বসলেন সিপি-র চেয়ারে। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘রাজীব কুমার ফিরবেন খবর ছিল। কিন্তু এত দ্রুত তিনি দায়িত্ব নিতে চলে আসবেন আশা করিনি।’’ বস্তুত, পুলিশ কর্তাদের অনেকেই এ দিন সদর দফতর ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। রাজীব আসছেন জানতে পেরে তাঁরা তড়িঘড়ি ফিরে আসেন।
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে বদলি হওয়া ৬৭ জন সরকারি অফিসারকে পুরনো পদে না-ফেরানো পর্যন্ত তিনি শপথ নেবেন না বলে শুক্রবারই জানিয়ে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই অফিসারদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়ে গিয়েছিল তখন থেকেই। নবান্নের খবর, এ দিন বিকেলেই রাজ্য প্রশাসনের সর্বোচ্চমহলের ইচ্ছের কথা জানিয়ে দেওয়া হয় রাজীবকে। একই বার্তা পৌঁছয় সৌমেনের কাছে। ফলে, ঘণ্টাখানেকের তফাতে দু’জনের প্রবেশ-প্রস্থান। কমিশনের নির্দেশে ১২ এপ্রিল লালবাজার ছাড়ার সময় সৌমেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন রাজীব। এ দিন সৌমেন অবশ্য রাজীব আসা পর্যন্ত লালবাজারে অপেক্ষা করেননি।
কলকাতায় দু’দফা ভোটের সময় সৌমেনের নেতৃত্বে মেরুদণ্ড সোজা রাখা পুলিশ আমজনতার তারিফ কুড়োলেও তাঁকে কমিশনার পদে বসানোটা ভাল ভাবে নেননি মমতা। ভোটপ্রচারেই কারও নাম না-করে তিনি বলেছিলেন, ‘‘১৫ দিনের জন্য ক্ষমতা পেয়ে কেউ যদি ভাবে স্বর্ণমুকুট পরিয়ে দেবে, সেটা ভুল।’’
ভোটের দিন তাঁর পাড়ার ক্লাবে কেন তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিল পুলিশ, তা নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন। তখনই প্রশাসনের একাংশ আন্দাজ করেছিলেন, ভোটের পরে লালবাজার ছাড়তেই হবে সৌমেনকে। হলও তা-ই। নির্বাচনী আচরণবিধি উঠে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই। নবান্ন সূত্র জানাচ্ছে, সৌমেনের উপরে মুখ্যমন্ত্রী এতটাই চটে যে, গোড়ায় তাঁকে কম্পালসারি ওয়েটিং-এ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। পরে প্রশাসনের শীর্ষমহলের একাংশ ও এক ঘনিষ্ঠ আইপিএসের অনুরোধে মত বদল করলেও তাঁকে এডিজি (সিআইডি) পদে ফেরত পাঠাতে রাজি হননি। সৌমেনকে পাঠানো হল অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ পদ এডিজি (প্রশিক্ষণ)-এ।
২০১২ সালে পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ-কাণ্ডের তদন্তে নেমে মমতার রোষের মুখে পড়ার পর প্রশিক্ষণ শাখাতেই পাঠানো হয়েছিল কলকাতা পুলিশের তৎকালীন গোয়েন্দা প্রধান দময়ন্তী সেনকে। ডিআইজি (প্রশিক্ষণ) হয়ে লালবাজার ছেড়ে ব্যারাকপুর যেতে হয়েছিল তাঁকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy