বৃহস্পতিবার নতুন মঞ্চের সাংবাদিক বৈঠকে অপর্ণা সেন এবং রিমঝিম সিংহ। —নিজস্ব চিত্র।
তাঁরা কারও পদত্যাগ দাবি করবেন না। তাঁরা কোনও দলের হয়ে তদ্বির করবেন না। যুক্ত হবেন না নির্বাচনী সমীকরণেও। কিন্তু আরজি করের ‘অভিঘাতে’ তৈরি হওয়া নাগরিক মঞ্চ ‘নাগরিক চেতনা’ থেকে অভিনেত্রী-পরিচালক অপর্ণা সেনেরা জানিয়ে দিলেন, মহিলাদের নিরাপত্তার দাবিতে কাঠামোগত বদলের দীর্ঘমেয়াদি দাবিতে তাঁরা আন্দোলন জারি রাখবেন।
বৃহস্পতিবার নতুন মঞ্চের তরফে সাংবাদিক বৈঠক করে জানানো হয়েছে, মূলত চারটি দাবিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠিও লিখেছে ওই মঞ্চ। দাবিগুলি হল— কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের নিরাপত্তা, পুলিশি ব্যবস্থার সংস্কার, নিরাপদ গণপরিবহণ এবং বিদ্যালয়ে সচেতনতা।
সাংবাদিক বৈঠকে অপর্ণার সঙ্গে ছিলেন আরজি কর হাসপাতালের অন্দরে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনার পরে মহিলাদের রাত দখলের আহ্বান জানিয়ে ‘পরিচিত’ রিমঝিম সিংহ, সংযুক্ত কৃষক মোর্চার সংগঠক অভীক সাহা, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া তোর্ষা চট্টোপাধ্যায়েরা। উল্লেখ্য, রিমঝিমকেই ‘নাগরিক চেতনা’র ‘প্রতিষ্ঠাতা’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী, নারী ও শিশুকল্যাণমন্ত্রী শশী পাঁজা এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মাকেও চিঠির প্রতিলিপি পাঠানো হচ্ছে (ঘটনাচক্রে, ‘নাগরিক চেতনা’র প্রেস বিবৃতিতে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের পদবি লেখা হয়েছে ‘পান্ডে’। শিল্প, নারী এবং শিশুকল্যাণমন্ত্রী শশীকে উল্লেখ করা হয়েছে ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী’ হিসেবে। স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্বে রয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তবে মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে মনোজের পদবি বর্মাই লেখা হয়েছে। শশীকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী না লেখা হলেও তাঁকে উল্লেখ করা হয়েছে নারী ও শিশু উন্নয়ণ ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী হিসেবে। যদিও ওই দফতরের নাম নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ।)। মঞ্চের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে অপর্ণা বলেন, ‘‘আরজি করের ঘটনা আমাদের সকলের মধ্যেই অভিঘাতের তরঙ্গ তৈরি করেছিল। আমাদের অনেকেরই ধারণা রয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ মহিলাদের জন্য নিরাপদ রাজ্য। কিন্তু ধারণা এবং বাস্তবতার মধ্যে যে ফারাক রয়েছে, তা আমরা দেখতে পাচ্ছি।’’ তাঁরা যে দাবি তুলছেন, তা যে কালকেই পূরণ হয়ে যাবে না, তা তাঁরা জানেন। এই প্রশ্নেই ‘দীর্ঘমেয়াদি’ আন্দোলনের কথা বলেছেন নতুন নাগরিক মঞ্চের সংগঠকেরা। আরজি কর-পর্বে যে নাগরিক আন্দোলনের ‘ঢেউ’ উঠেছিল, তা সীমাবদ্ধ ছিল শহর এবং মফস্সলেই। সে কথা মেনে নিয়েই অপর্ণারা জানিয়েছেন, ‘নাগরিক চেতনা’কে গ্রামাঞ্চলেও পৌঁছে দিতে চান। কৃষক সংগঠনের নেতা অভীক বলেন, ‘‘আন্দোলনকে গ্রামাঞ্চলে পৌঁছে দিতেই কৃষক আন্দোলনের পক্ষ থেকে আমি এসেছি।’’
আরজি কর আন্দোলনপর্বে ‘মেয়েরা রাত দখল করো, দিন বদল করো’ নামের একটি মঞ্চ গড়া হয়েছিল। তার মূল উদ্যোক্তা ছিলেন রিমঝিমই। নতুন মঞ্চের আবির্ভাবের পর সেই মঞ্চ কি উঠে গেল? জবাবে রিমঝিম বলেছেন, ‘‘সেই মঞ্চ রয়েছে। আমরা এখানে প্রত্যেকে ব্যক্তি হিসাবে এসেছি।’’ অপর্ণা, অভীক, রিমঝিমদের আরও বক্তব্য, তাঁরা কোনও দলীয় রাজনীতির প্রকাশ্য মঞ্চের ‘মুখ’ নন। তবে তাঁরা ‘অরাজনৈতিক’ও নন। অভীকের ব্যাখ্যা, ‘‘আমরা দলীয় রাজনীতির জামাকাপ়ড় ছেড়ে রেখে এসেছি। তবে আমরা অরাজনৈতিক নই। কারণ, সামাজিক যে কোনও বিষয়ের সঙ্গেই রাজনীতি জড়িয়ে।’’ অপর্ণারা জানিয়েছেন, মহিলা নিরাপত্তার দাবিতে কাঠামোগত বদলের প্রশ্নে এই মঞ্চ একটি ‘প্রেশার গ্রুপ’ হিসেবে কাজ করতে চায়।
মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিটিতে এখনও পর্যন্ত ৫০ জন সই করেছেন। সেই তালিকায় রয়েছেন আরজি কর-কাণ্ডের পরে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদপদ থেকে ইস্তফা দেওয়া প্রাক্তন আমলা জহর সরকার, পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, বিরসা দাশগুপ্ত, অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী, পরিবেশকর্মী বনানী কক্কর ও প্রদীপ কক্কর, অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, বিদিপ্তা চক্রবর্তী, কঙ্কণা সেনশর্মা, চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়েরা। রিমঝিমরা জানিয়েছেন, এই বৃত্তকে তাঁরা আরও প্রসারিত করতে চান। তাঁরা কারও পদত্যাগ দাবি করবেন না। কারও হয়ে ভোট চাইবেন না। কিন্তু তাঁরা ‘অরাজনৈতিক’ও নন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy