চক্ষু ছানাবড়া তো বটেই। একই সঙ্গে অফিসারদের মাথায় হাত!
কর্মজীবনের সায়াহ্নে এএসআই-পদে প্রোমোশন পাওয়ার পরে আবার অবনমন হয়ে যেতে পারে রাজ্য পুলিশের কনস্টেবল পদে। সে-ক্ষেত্রে উচ্চ পদের বেতন তো আর মিলবেই না। নষ্ট হবে সামাজিক সম্মানও।
রাজ্য পুলিশে পদোন্নতি নিয়ে সোমবার নবান্ন থেকে নতুন যে-নির্দেশিকা জারি হয়েছে, তাতে এমনই অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পুলিশের একাংশ। এত দিন পদোন্নতির আগে প্রশিক্ষণ হত, পরীক্ষা হত, পাশ করলে তবেই হত পদোন্নতি। নতুন নিয়মে আগেই পদোন্নতি হয়ে যাবে। তার পরে দু’মাসের মধ্যে প্রশিক্ষণ ও পরীক্ষা শেষ করতে হবে। সেই পরীক্ষায় পাশ করতে পারলে ভাল। কিন্তু পাশ করতে না-পারলে আবার পুরনো পদে ফিরে যেতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে।
শুধু কনস্টেবল থেকে এএসআই নয়, এএসআই থেকে এসআই, এসআই থেকে ইনস্পেক্টর— সব পদের ক্ষেত্রেই এই আশঙ্কা প্রবল হয়েছে। এক বার প্রোমোশন পেয়ে উচ্চ পদের বেতন ঘরে তোলার পরে আবার পুরনো পদে ফিরে যেতে হতে পারে। পরিস্থিতি কী দাঁড়াতে পারে, ভেবে শিউরে উঠছেন অফিসারেরা। এক অফিসার বলেন, ‘‘ইনস্পেক্টর হওয়ার পরে কোনও অফিসারের সব আত্মীয়বন্ধুরা জেনে গেলেন, তিনি ইনস্পেক্টর হয়েছেন। কিন্তু তার পরে আর পরীক্ষায় পাশ করতে পারলেন না। তখন আবার তাঁকে সাব-ইনস্পেক্টর করে দেওয়া হবে! সামাজিক সম্মান কোথায় যাবে?’’
পুলিশকর্তাদের পাল্টা যুক্তি, রাজ্যে নতুন নতুন পুলিশ-জেলা তৈরি হচ্ছে। কমিশনারেট তৈরি হচ্ছে। প্রধানত থানা স্তরে প্রচুর অফিসারের পদ খালি পড়ে থাকছে। আগে প্রশিক্ষণ ও পরীক্ষা নিয়ে প্রোমোশন দিতে গিয়ে অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে। কারণ, পরীক্ষা দিয়ে এক বারে পাশ করতে পারেন না অনেকে। তখন তাঁকে আবার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। এক অফিসারের কথায়, ‘‘আইনের পরীক্ষা ছাড়াও ৭-৮টি বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়। অনেকেই দু’-তিনটি বিষয়ে অকৃতকার্য হন। তখন আলাদা করে ওই দু’-তিনটি বিষয়ে আবার পরীক্ষা দেওয়া যায়।’’
আরও পড়ুন: মানুষের চাপেই গোঁ ছাড়লেন ‘বিপ্লবীরা’
এর ফলে অনেকটা সময় নষ্ট হচ্ছিল বলে অভিযোগ। তাই কনস্টেবল থেকে ইনস্পেক্টর পর্যন্ত প্রাক্-পদোন্নতির প্রশিক্ষণ (পিপিটি) তুলে দেওয়া হল বলে নবান্ন সূত্রের খবর। নির্দেশে বলা হয়েছে, পদোন্নতির দু’বছরের মধ্যেই বা চাকরি থেকে অবসরের আগে ওই প্রশিক্ষণ পর্ব সেরে নিতে হবে। পরীক্ষাও দিতে হবে। তত দিন পর্যন্ত অবশ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কোনও সিনিয়রিটি পাবেন না। অবসরের আগে সেই পরীক্ষা পাশ না-করলে পূর্বতন র্যাঙ্কই বলবৎ হবে। এখন যেমন অফিসারেরা বেশ কয়েক বার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পান, এ ক্ষেত্রেও সেই সুযোগ দেওয়া হবে।
এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘এ বার চাপ বেশি থাকবে। অবনমনের ভয়ে অফিসারেরা আরও মন দিয়ে পরীক্ষা দেবেন।’’ গত বছর পুজোর আগে পুলিশের তরফে পিপিটি ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার ওই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল নবান্নে। সম্প্রতি রাজ্য মন্ত্রিসভা তাতে সিলমোহর দেয়। তার পরেই নবান্নের তরফে ওই নির্দেশিকা জারি করা হয়।
আরও পড়ুন: ফের কাজে ডাক্তারেরা, সঙ্কট কাটিয়ে সকাল থেকেই আউটডোর হবে স্বাভাবিক
নিচু তলার পুলিশ অফিসারদের দাবি, প্রতিটি পদের গুরুত্ব এবং দায়িত্ব আলাদা। প্রাক্-পদোন্নতির প্রশিক্ষণে সেটাই শেখানো হত। ওই প্রশিক্ষণ তুলে দিলে, পদোন্নতি হলেও নিজের দায়িত্ব বা বাহিনীর নিয়মশৃঙ্খলা সম্পর্কে সমস্যা তৈরি হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy