মাছ খাওয়া না খাওয়া নিয়ে শুরু হয়েছে কাজিয়া।
‘প্রিয় বাঙালিরা, দয়া করে মাছেদের কষ্ট দেবেন না’।
‘কলকাতা দু’বছরের মধ্যে ভিগান হবে, এটা আমাদের প্রতিশ্রুতি’।
সামাজিক মাধ্যমে এমন পোস্ট ঘিরে গত কয়েক দিন ধরে সরব বাঙালি নেটিজেনরা। ‘কলকাতা ভিগানস’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপের পক্ষ থেকে করা ওই সমস্ত পোস্ট আসলে বাঙালির খাদ্যাভ্যাস পাল্টে ফেলার চেষ্টা, এই অভিযোগ তুলেছেন অনেকে। আরও অভিযোগ, ওই গ্রুপের পিছনে ইন্ধন রয়েছে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের। পোস্টটির বিরোধিতা করা নেটিজেনরা তাঁদের পক্ষে যুক্তি সাজাতে গিয়ে ওই গ্রুপে থাকা কিছু মন্তব্যের উল্লেখ করেছেন। যেখানে আমিষাশী বাঙালিদের প্রতিবেশী দেশে চলে যাওয়ার উপদেশ দেওয়া হয়েছে বা আমিষ খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট ধর্মকে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
ওই গ্রুপের অ্যাডমিন-রা অবশ্য রাজনৈতিক প্রভাবের কথা নস্যাৎ করছেন। অন্যতম অ্যাডমিন আলতাব হুসেন বলেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক দলের যোগ নেই। ধর্মের ভিত্তিতে ভেদাভেদ করার বিরোধী আমরা। উদ্ভিদজাত খাবার উৎপাদনে পরিবেশ দূষণ কম হয়, তাই পরিবেশ রক্ষার উদ্দেশ্যে ভিগান হয়েছি।’’ তিনি জানান, ধর্মের কারণে পশুহত্যা বা দুধের জন্য গরু পোষারও বিরোধিতা করা হয় তাঁদের গ্রুপের পক্ষ থেকে।
এই প্রেক্ষিতে বাঙালির নিজের খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখার অধিকার রয়েছে বলে সরব হয়েছেন যাঁরা, তাঁদেরই এক জন, পেশায় ইঞ্জিনিয়ার অরুণিমা দাস বলেন, ‘‘কে, কী খাবেন, সেটা তাঁর নিজের পছন্দ। কী খাওয়া উচিত, তা নিয়ে কেউ বোঝাতে আসবেন কেন? তা ছাড়া, যে ভঙ্গি ও ভাষায় ওই গ্রুপের তরফে প্রচার করা হচ্ছিল, তাতে কৌশলে কিছু জিনিস চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে মনে হয়েছে।’’
গ্রুপের তরফে কুরুচিকর ভাষায় আমিষাশীদের মারধর ও ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। সেই সংক্রান্ত বেশ কিছু স্ক্রিনশট ছড়িয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। এ ছাড়াও রয়েছে রাজনৈতিক গন্ধ মাখা মন্তব্য। এই সব মন্তব্য তা হলে কারা করলেন?
আলতাবের দাবি, হঠাৎ বহু মানুষ তাঁদের গ্রুপে এসে মন্তব্য করতে থাকেন। উস্কানিমূলক মন্তব্যগুলি তাঁদের সদস্যেরা কেউ করেননি। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গ্রুপটি ব্যবহার করা হচ্ছিল। কুরুচিকর মন্তব্যগুলিও তাঁদের তরফে করা হয়নি, সেগুলি ফোটোশপ করে তৈরি করা বলে দাবি তাঁর। গ্রুপের এক সদস্য দূর্বা মিত্র বলেন, ‘‘জোর করার প্রশ্ন নেই। ভিগান হলে আসলে যে সকলেরই লাভ, সেটাই মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করছি আমরা। এ নিয়ে সারা বিশ্বেই প্রচার চলছে। আর আমাদের নিয়েও কুরুচিকর কথা বলা হয়েছে।’’
পশ্চিমী দেশগুলিতে প্রায় এক দশক ধরে ভিগানদের সংখ্যা বাড়ছে। পশু অধিকার এবং পরিবেশ রক্ষায় ভিগানিজ়মই শ্রেষ্ঠ পথ বলে প্রচারও চলে পুরোদমে। তবে অনেকে আবার বলেন, কোনও জায়গার স্বাভাবিক, স্থানীয় ভাবে উৎপন্ন খাবার খাওয়া পরিবেশের পক্ষে বেশি লাভজনক।
ফুড ব্লগার সায়ন্তনী মহাপাত্র বলেন, ‘‘ভিগানিজ়ম-এর বিরোধী নই। তবে মাছ-ভাত বাঙালির পরিচয়। অল্প সময়ের মধ্যে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষের খাদ্যাভ্যাস পাল্টানোর প্রতিশ্রুতি কী ভাবে দেওয়া যায়, জানি না।’’
এ ভাবেই বাঙালির খাদ্যাভ্যাস নিয়ে যুক্তি-পাল্টা যুক্তিতে আপাতত উত্তপ্ত নেটপাড়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy