প্রতিবেশীদের হাতে নির্যাতনের শিকার কোলাঘাটের সুপর্ণা দাস। নিজস্ব চিত্র।
মাথার চুল খাবলা খাবলা করে কাটা। পরনের শাড়িতে কাদার দাগ। সারা শরীরে মারধরের চিহ্ন। সেই অবস্থায় এক যুবতী হাতজোড় করে কাঁদছেন। আর তাঁর চারপাশে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে অনেকে। তাঁরা পাল্টা শাসানি দিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার সকালে সুপর্ণা দাস নামের ওই মহিলাকে উদ্ধার করতে গিয়ে এমন ঘটনারই সাক্ষী হল পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট থানার পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন ভোর রাতে কাঁউর চণ্ডী গ্রাম থেকে থানায় খবর আসে। সুব্রত দাস নামে এক ব্যক্তির দেহ নিজের বাড়িতেই ঝুলছে, এই খবর পেয়ে পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে সেখানে পৌঁছয়। কিন্তু তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসকেরা সুব্রত দাসকে মৃত বলে জানিয়ে দেন। মৃতের স্ত্রী সুপর্ণা দাস তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, বুধবার রাত ১টা নাগাদ হঠাৎ তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। উঠেই তিনি দেখেন, ঘরের বাইরে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলছেন সুব্রত। দ্রুত তাঁকে নামিয়ে জল দিয়ে স্বামীর জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু কোনও সাড়া পাননি। এর পর সুপর্ণা পাশের গ্রামে তাঁর বাবা-মা কে ফোন করে খবর দেন। রাতেই তাঁরা আসেন এবং পুলিশকে খবর দেন। এর পর পুলিশ এসে সুব্রত দেহ নামিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
কিন্তু এ দিন সকালে ফের থানায় ফোন আসে কাঁউর চণ্ডী গ্রাম থেকে। অভিযোগ, সুব্রতর অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী-র উপর চড়াও হয়েছেন গ্রামবাসীদের একাংশ। তাঁর মাথার চুল কেটে মন্দিরে আটকে রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে অভিযোগ, ওই মহিলার পরিবারের লোকজনকেও মারধর করা হয়েছে। এর পরেই ওই মহিলা এবং তাঁর আত্মীয়দের উদ্ধার করতে যায় পুলিশ এবং সেখানে গিয়ে ওই দৃশ্যের মুখোমুখি হয়। সুপর্ণাদের উদ্ধার করতে গিয়ে ব্যাপক বিক্ষোভের মধ্যেও পড়তে হয় পুলিশকে। এই ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশের এক শীর্ষ আধিকারিক।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ সকালে কাঁউর চণ্ডীর বাসিন্দারা জানতে পারেন যে সুব্রতর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। নিজের বাড়িতেই তাঁকে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। এর পরেই গ্রামবাসীদের একাংশ সুব্রতর বাড়িতে চড়াও হয় বলে অভিযোগ। ওই বাড়িতে তখন ছিলেন সুব্রতর স্ত্রী সুপর্ণা। ছিলেন সুপর্ণার মা, বাবা এবং দিদি। গ্রামবাসীরা সুপর্ণা এবং তাঁর আত্মীয়দের বাড়ির বাইরে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে আসে বলে অভিযোগ। শুরু হয় মারধর। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, সুপর্ণা এবং তাঁর বাবা-মা মিলে সুব্রতকে খুন করেছেন। পুলিশের কাছে সুপর্ণা অভিযোগ করেছেন, গ্রামের লোকজন তাঁদের বাড়িতে চড়াও হয়ে তাঁদের সবাইকে বেধড়ক মারধর শুরু করেন। এর পর তাঁর মাথার চুল কেটে দিয়ে স্থানীয় একটি মন্দিরে আটকে রাখা হয় বলেও অভিযোগ। এর পর ফের গ্রামে পুলিশ যায়। উদ্ধার করা হয় সুপর্ণাদের।
আরও পড়ুন: রাজ্যে ফিরল কড়া লকডাউন, বিনা প্রয়োজনে বেরলেই ধরপাকড় চলছে কলকাতায়
গ্রামবাসীদের ক্ষোভের মুখে সুপর্ণা, দেখুন ভিডিয়ো
গ্রামের কাউকে খবর না দিয়ে সুপর্ণা কেন পাশের গ্রাম থেকে তাঁর বাবা-মাকে ডেকে আনলেন, তা নিয়েই গ্রামবাসীদের একাংশের আপত্তি। পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভের মধ্যে এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘গ্রামের কাউকে কিছু না বলে হঠাৎ কেন সুপর্ণা বাপের বাড়িতে খবর দিল? কেন পুলিশ চুপিচুপি সুব্রতর দেহ নিয়ে চলে গেল? আমরা বিশ্বাস করি না, সুব্রত আত্মহত্যা করেছে। আমাদের সন্দেহ সুব্রতকে খুন করা হয়েছে।”
একই অভিযোগ অন্য এক গ্রামবাসীর। তাঁর দাবি, গোটাটাই চক্রান্ত। সুপর্ণা এবং তাঁর বাবা মা মিলে খুন করেছেন ওই যুবককে।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ যদিও রহস্যজনক কিছু পায়নি। তারা জানতে পেরেছে, সুপর্ণার বাড়ি কাঁউর চণ্ডীর পাশের গ্রাম গোবরায়। বেশ কয়েক বছর আগে ফুল-ব্যবসায়ী সুব্রতর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বছর সাতেকের একটি ছেলেও আছে তাঁদের। সুপর্ণার মায়ের অভিযোগ, গত কয়েক বছর ধরে সুব্রত-সুপর্ণার দাম্পত্য বিবাদ চলছে। সুপর্ণাকে মারধর করা হত বলেও তাঁর অভিযোগ। এই নিয়ে কিছু দিন আগেই গ্রামে সালিশি সভাও বসে। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি। সুপর্ণার মায়ের দাবি, গ্রামেরই একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাছ থেকে দু’লাখ টাকা ঋণ নিয়ে স্বাধীন ভাবে রোজগারের চেষ্টা করেন তাঁর মেয়ে।
আরও পড়ুন: হাসপাতালের বিল নিয়ে হস্তক্ষেপ স্বাস্থ্য কমিশনের
পুলিশ সুব্রতর নাবালক ছেলের সঙ্গেও কথা বলেছে। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের অনুমান, দাম্পত্য বিবাদকে কেন্দ্র করে অবসাদের জেরেই আত্মহত্যা করেছেন সুব্রত। আর্থিক সমস্যার দিকটাও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। জেলার এক শীর্ষ পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘সুপর্ণা বা তাঁর বাবা-মা অভিযোগ জানালে তাঁরা গ্রামবাসীদের মধ্যে যাঁরা সুপর্ণার উপর হামলা করেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy