ছবি: পিটিআই।
লোকসভার ভোট পর্বে কলকাতায় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের ‘রোড শো’ চলাকালীন তাঁর দলের কর্মীদের বিরুদ্ধে বিদ্যাসাগর কলেজে বিদ্যাসাগর-মূর্তি ভাঙার অভিযোগ উঠেছিল। হিন্দু মৌলবাদের সঙ্গে লড়াই করে বিধবা বিবাহ, স্ত্রীশিক্ষার প্রসারে ব্রতী বিদ্যাসাগরের সংস্কৃতির সঙ্গে হিন্দুত্বের তকমাধারী দল বিজেপির সম্পর্ক নিয়েও নানা মহলে প্রশ্ন আছে। এই প্রেক্ষাপটে এই মহানগরেই বিদ্যাসাগরের মুখোমুখি হতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মঞ্চে বিদ্যাসাগরকে নিয়ে চলবে নাট্যাভিনয়। দর্শকাসন থেকে তা দেখতে পারেন প্রধানমন্ত্রী।
বিদ্যাসাগরের ঘটনাবহুল জীবনের যে-বিশেষ দৃশ্যটি মোদীর সামনে তুলে ধরার কথা ভাবা হয়েছে, ঐতিহাসিক গুরুত্ব উপচে সেটি এক অবিস্মরণীয় মুহূর্ত। আধুনিক যুগের দুই বরণীয় বাঙালি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের মুখোমুখি হওয়ার দৃশ্যটি নিয়ে নাগাড়ে চর্চা হয়ে আসছে। ভবিষ্যতেও হবে, সন্দেহ নেই।
ওই দুই মনীষীর সাক্ষাতের মুহূর্তটির আবেশ এ বার মিশে যাচ্ছে মোদীর সম্ভাব্য কলকাতা সফরের সঙ্গে। বিদ্যাসাগরের মূর্তির উপরে সাম্প্রতিক হামলার ঘটনায় বাঙালির ভাবাবেগ যে আহত হয়েছে, সেটা বিলক্ষণ বুঝেছে গেরুয়া শিবিরও। এই অবস্থায় বিদ্যাসাগরের সঙ্গে রামকৃষ্ণের সাক্ষাৎ নিয়ে এই নাটকের উপস্থাপনার উদ্যোগে মধ্যে সেই ক্ষতে কিছুটা প্রলেপ দিয়ে বাঙালি আবেগের শরিক হওয়ার চেষ্টা দেখছেন অনেকে।
নভেম্বরে মোদী আসতে পারেন ধরে নিয়ে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের নির্দেশে তোড়জোড় শুরু করেছে পূর্বাঞ্চলীয় সংস্কৃতি কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের তরফে অবশ্য রবিবার পর্যন্ত তাঁর কলকাতা সফরের বিষয়ে নিশ্চিত ভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে সরকারি সূত্রের খবর, ২২ নভেম্বর ইডেনে ভারত-বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট দেখতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত হলে মোদীও এ শহরে আসতে পারেন। আর তখনই প্রধানমন্ত্রীর সামনে বিদ্যাসাগরকে নিয়ে নাট্যাভিনয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শহরের একটি নাট্যদলকে। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্তাদের সামনে ইতিমধ্যে দৃশ্যটি অভিনয় করে দেখিয়েছে তারা।
১৮৮২ সালের ৫ অগস্ট ‘দয়ার সাগর’ বিদ্যাসাগরকে দেখতে তাঁর কলকাতার বাসভবনে কথামৃতকার ‘শ্রীম’ এবং অন্য কয়েক জন ভক্তের সঙ্গে উপস্থিত হয়েছিলেন রামকৃষ্ণ। সবিনয়ে বলেছিলেন, বিদ্যাসাগর জাহাজ। তাই তিনি হয়তো খাল-বিলে যেতে পারবেন না। কিন্তু তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যেতেই হবে। ‘শ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত’ সেই সাক্ষাতের যে-বিবরণ দিয়েছে, তার ভিত্তিতে ‘যুগদ্রষ্টা’ নামে মিনিট পনেরোর নাটকটি লিখেছেন উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। পরিচালনায় পূর্ব-পশ্চিম নাট্যদলের কর্ণধার সৌমিত্র মিত্র। রামকৃষ্ণের ভূমিকায় প্রদীপ হাইত, বিদ্যাসাগরের ভূমিকায় থাকছেন প্রান্তিক চক্রবর্তী। গোড়ায় দেবশঙ্কর হালদারকে বিদ্যাসাগরের ভূমিকায় অভিনয়ের কথা বলা হয়েছিল। ‘‘প্রাথমিক ভাবে এ বিষয়ে সরকারি কর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছিল। কিন্তু ওঁরা অভিনয়ের নির্দিষ্ট তারিখ বলতে পারেননি। তাই কথা এগোয়নি,’’ বললেন দেবশঙ্করবাবু।
কবে এমন নাট্যাভিনয় অভিনয় হবে? পরিষ্কার করে কিছু বলতে চাননি পূর্বাঞ্চলীয় সংস্কৃতি কেন্দ্রের অধিকর্ত্রী গৌরী বসু। তিনি শুধু বলেন, ‘‘যখন যেমন নির্দেশ আসবে, সেই অনুযায়ী আয়োজন করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy