গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
২০১০ সালের পর থেকে পশ্চিমবঙ্গে যত ওবিসি শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে, বুধবার তা বাতিল করে দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। আদালত জানিয়েছে, বাতিল হওয়া শংসাপত্র আর কোনও চাকরি প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা যাবে না। এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে সিপিএম এবং বিজেপি। দিল্লি থেকে আদালতের এই রায় প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও ওবিসি শংসাপত্র বাতিলের রায়কে স্বাগত জানিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন। চুপ করে নেই বাম শিবিরও। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বিবৃতি দিয়ে এ বিষয়ে নিজের বক্তব্য জানিয়েছেন।
ওবিসি শংসাপত্রে মমতার মুসলিম তোষণের রাজনীতি দেখছে বিজেপি। দিল্লিতে একটি জনসভা থেকে হাই কোর্টের রায় প্রসঙ্গে মোদী বুধবার বলেন, ‘‘কলকাতা হাই কোর্ট ‘ইন্ডি’ জোটকে বড়সড় থাপ্পড় মেরেছে। ২০১০ সালের পর থেকে দেওয়া সমস্ত ওবিসি শংসাপত্র বাতিল করে দিয়েছে। কারণ, বাংলার সরকার মুসলমান ভোটব্যাঙ্ক হাতে রাখার জন্য তাঁদের ওবিসি শংসাপত্র দিয়ে দিয়েছিল। এটা ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি, তোষণের রাজনীতি। এই রাজনীতিতে তৃণমূল সব সীমা ছাপিয়ে গিয়েছে।’’
মোদীর বক্তব্যকেই আরও ব্যাখ্যা করে শাহ বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের অনগ্রসর শ্রেণীর অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে কোনও রকম সমীক্ষা ছাড়াই ১১৮টি মুসলিম জাতিকে মমতার সরকারের দেওয়া ওবিসি সংরক্ষণ সার্টিফিকেট স্থগিত করার আদেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। এই রায়কে আমি স্বাগত জানাই। এই সিদ্ধান্তে মমতা সরকারের তোষণ নীতি এবং অনগ্রসর জাতিবিরোধী ভাবমূর্তি সকলের সামনে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। হাই কোর্টের নির্দেশ না মানা আদালত অবমাননার শামিল। পিছিয়ে পড়া সমাজের অধিকারে তৃণমূলের হস্তক্ষেপ বিজেপি সহ্য করবে না।’’
উল্লেখ্য, মমতা বুধবারই পানিহাটির জনসভা থেকে হাই কোর্টের রায়কে তুলোধনা করেন। সরাসরি এই রায়কে ‘বিজেপির রায়’ বলে কটাক্ষ করেন তিনি। বলেন, ‘‘এই রায় আমি মানি না। রাজ্যে ওবিসি সংরক্ষণ চলছে, চলবে। আমাকে ওরা চেনে না। আমি মাথা নত করার লোক নই। মুসলিমেরা কেন তফসিলিদের চাকরিতে ভাগ বসাবে? ওরা এত খারাপ নয়। মোদীবাবু আগুন নিয়ে খেলছেন। তফসিলিদের সংরক্ষণ আপনি বাতিল করতে চাইছেন। এটা হতে পারে না। মোদীকে খুশি করার জন্য এই রায়। এর বিরুদ্ধে যত দূর যেতে হয়, আমি যাব। প্রয়োজনে উচ্চতর আদালতে মামলা করব।’’ উল্লেখ্য, হাই কোর্টের কোনও বিচারপতির নাম নেননি মমতা। তবে বুধবার এই রায় ঘোষণা করেছে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বেঞ্চ। নাম না করেই তাঁদের রায়ের বিরোধিতা করেছেন।
ওবিসি রায় নিয়ে সিপিএম নেতা সেলিমের বক্তব্য, ‘‘রঙ্গনাথ মিশ্র কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে বাম সরকার প্রথম দেশে ওবিসি সংরক্ষণ ১৭ শতাংশ করেছিল। সংখ্যালঘু, মূলত মুসলমান সমাজে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও শিক্ষাগত দিক থেকে যাঁরা পিছিয়ে পড়া, তাঁদের শিক্ষা এবং চাকরিতে সংরক্ষণের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছিল। বুধবার আদালতের রায় বাম সরকারের সেই সিদ্ধান্তকে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর থেকে মমতা রাজ্যে ওবিসি সংরক্ষণকে তছনছ করে দিয়েছেন। কোথাও আইন মানা হয়নি। খোলামকুচির মতো শংসাপত্র বিলি করেছে তাঁর সরকার। সংবিধানকে তোয়াক্কা না করে রাজনৈতিক স্বার্থে মমতা যা করেছেন, তার ফলশ্রুতি হাই কোর্টের এই রায়।’’ সেলিম জানান, রাজ্য সরকারের কাছে তাঁদের দাবি, দ্রুত আদালতের নির্দেশ এবং ওবিসিদের চাহিদাকে মান্যতা দিয়ে পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়ন করে ভুল শুধরে নেওয়া হোক।
কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকেও আক্রমণ করেছেন সেলিম। তিনি বলেন, ‘‘সংবিধান নির্দেশিত আইন অনুযায়ী যাঁরা সংরক্ষণ পাওয়ার যোগ্য, কেন্দ্র এবং রাজ্য তাঁদের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না। লক্ষ লক্ষ পদ তফসিলি জাতি, আদিবাসী এবং ওবিসিদের জন্য সংরক্ষিত রয়েছে। তা পূরণ করা হচ্ছে না। দুই সরকার মিলে সংরক্ষিত পদকে সামনে রেখে মেরুকরণের রাজনীতি করছে।’’
উল্লেখ্য, বুধবারের রায়ে আদালত ওবিসি শংসাপত্র বাতিল করলেও ওই শংসাপত্র ব্যবহার করে ইতিমধ্যে যাঁরা চাকরি পেয়ে গিয়েছেন, তাঁদের চাকরিতে হস্তক্ষেপ করা হবে না বলেও জানিয়েছে হাই কোর্ট। রায়কে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মমতা। শালবনির সভা থেকে তৃণমূল সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও আদালতের নির্দেশের সমালোচনা করেছেন।
(আনন্দবাজার অনলাইন দেশের সমস্ত বিচারালয়, বিচারপতি এবং বিচারব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এই খবরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে, তা তাঁদের নিজস্ব অভিমত। তার দায় আনন্দবাজার অনলাইনের নয়)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy