Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Legal Notice to SK Sufian

ঋণ না মেটানোর অভিযোগ! নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতা সুফিয়ানকে ‘জাহাজবাড়ি’ নিয়ে নোটিস ব্যাঙ্কের

যদিও সুফিয়ান এই প্রসঙ্গে বলেন, “টাকা আমি শোধ করে দেব। ঋণের উপর চাপানো সুদ নিয়ে কিছু বিতণ্ডার জন্যই মাঝপথে টাকা দেওয়া বন্ধ হয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে অযথা বিতর্ক তৈরি হচ্ছে।”

Nandigram TMC leader SK Sufian gets legal notice from a co-operative bank

নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতা সুফিয়ানকে ‘জাহাজবাড়ি’ নিয়ে নোটিস পাঠাল ব্যাঙ্ক। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২৩ ০৯:৫৫
Share: Save:

আবারও চর্চার কেন্দ্রে নন্দীগ্রামের ‘জাহাজবাড়ি’। ব্যাঙ্ক থেকে বিপুল টাকা ঋণ নিয়েও তা না মেটানোয় জাহাজবাড়ির মালিক কথা নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ানের নামে আইনি নোটিস পাঠালেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন এই সুফিয়ানই। ব্যাঙ্কের দাবি, ওই জাহাজবাড়ি তৈরির পাশাপাশি ট্রলার কেনার জন্য বিপুল টাকা ঋণ নিয়েও তা মেটাননি সুফিয়ান। তার জেরেই ৩০ দিনের মধ্যে সুদ ও আসল মিলিয়ে প্রায় ৪৯ লক্ষ টাকা মেটানোর চরম সময়সীমা দিয়ে জাহাজবাড়িতে আইনি নোটিস ঝুলিয়ে দিলেন ঋণদানকারী ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে বকেয়া পরিশোধ না হলে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে বলে ব্যাঙ্কটি জানিয়ে দিয়েছে। যদিও সুফিয়ান এই প্রসঙ্গে বলেন, “টাকা আমি শোধ করে দেব। ঋণের উপর চাপানো সুদ নিয়ে কিছু বিতণ্ডার জন্যই মাঝপথে টাকা দেওয়া বন্ধ হয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে অযথা বিতর্ক তৈরি হচ্ছে।” যদিও ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের পাল্টা দাবি, এর আগে তাঁরা বকেয়া মেটানোর নোটিস দিয়েছিলেন। তাতে কাজ না হওয়াতেই এ বার আইনি পথে হাঁটতে চলেছেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।

নন্দীগ্রাম সদর থেকে গোকুলনগরের দিকে কয়েক পা গেলেই দেখা মিলবে মাথায় প্রকাণ্ড জলের ট্যাঙ্ক-সহ জাহাজবাড়িটির। গোটা নন্দীগ্রামে এমন বড় বাড়ির দেখা মেলা ভার। জন্মলগ্ন থেকেই এই বাড়িটি বিরোধীদের নিশানায় রয়েছে। কী ভাবে বিপুল টাকা ব্যয় করে এই বাড়ি তৈরি হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী শিবির। তবে এ বার ঋণখেলাপের জেরে নতুন করে চর্চায় উঠে এসেছে জাহাজবাড়ির নাম। সূত্রের খবর, ২০১৪ সালে জাহাজবাড়ি করার জন্য কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে ২৫ লক্ষ টাকা ঋণ নেন শেখ সুফিয়ান। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত নিয়মিত মাসিক কিস্তি দিয়ে গেলেও তার পর থেকে আর তা দেননি তৃণমূল নেতা।এখনও ওই ঋণের ৭ লক্ষ ৩৩ হাজার টাকা বকেয়া রয়েছে। অন্য দিকে, ট্রলার কেনার জন্য ওই ব্যাঙ্ক থেকেই ২০২০ সালে ২৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন সুফিয়ান। ঋণ নেওয়ার পর এক বারও মাসিক কিস্তি দিয়ে টাকা পরিশোধ করেননি বলে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের অভিযোগ। এই মুহূর্তে ঋণ বাবদ নেওয়া টাকার বকেয়া ২৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার পাশাপাশি সুদের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে আরও ৯ লক্ষ ৬৯ হাজার টাকা। এখন সব মিলিয়ে ওই তৃণমূল নেতার কাছ থেকে কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের পাওনা প্রায় ৪৯ লক্ষ টাকা বলে ব্যাঙ্ক সূত্রে খবর।

বর্তমানে এই দু’টি ঋণ ব্যাঙ্কের পরিভাষায় অনুৎপাদক সম্পদ (নন পারফর্মিং অ্যাসেট) হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় ব্যাঙ্কও বেকায়দায় পড়েছে। অভিযোগ, ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ একাধিক বার ওই তৃণমূল নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করে বকেয়া টাকা শোধ করার বার্তা দিলেও সে সব কানেই তোলেননি। তাই এক মাসের সময়সীমা দিয়ে ব্যাঙ্ক শেষ পর্যন্ত আইনজীবীর মাধ্যমে নোটিস পাঠিয়ে দিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, ঋণখেলাপি ব্যক্তির বন্ধক দেওয়া সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে পারে ব্যাঙ্ক। এ ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ শেখ সুফিয়ানের জাহাজবাড়ি এবং ট্রলার দখল করেন কি না, সে দিকেই নজর সকলের।

২০০৭ সালে নন্দীগ্রাম আন্দোলনে প্রথম সারিতে থাকা সুফিয়ানের পুরনো বাড়িটি ছিল ছোট্ট পাকা বাড়ি। নন্দীগ্রাম এলেই এই বাড়িতেই কিছুটা সময় জিরিয়ে নিতেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতায় ফেরার পথে সুফিয়ানের পরিবারের বানানো খাবার নিতেন তিনি। তবে স্থানীয়দের সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পর আচমকাই নিজের ছোট বাড়িটি ভেঙে বিশালাকায় জাহাজবাড়ি তৈরি করে সুফিয়ান। তাঁর বাড়ির ছাদে থাকা সুদৃশ্য জাহাজ থেকেই বাড়িটির নাম ‘জাহাজবাড়ি’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। তবে সুফিয়ান এই সুবিশাল বাড়ি তৈরির পর থেকে ওই বাড়িতে মুখ্যমন্ত্রী আর যাননি বলে তৃণমূল সূত্রে খবর।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE