কুণাল ঘোষ ও শুভেন্দু অধিকারী। — ফাইল চিত্র।
দু’দলের ‘নন্দীগ্রাম দিবস’ কর্মসূচি পালনকে কেন্দ্র করে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। বৃহস্পতিবার পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে তৃণমূল এবং বিজেপি আলাদা ভাবে ওই কর্মসূচি পালন করে। আর সেই কর্মসূচিতেই তৃণমূল অভিযোগ তুলল, নন্দীগ্রাম আন্দোলনে বিজেপির কোনও ভূমিকা ছিল না। বিজেপির পাল্টা দাবি, ওই আন্দোলনে লালকৃষ্ণ আডবাণীর মতো নেতা অংশ নিয়েছিলেন তাদের পক্ষে। দু’পক্ষের এই তরজার মাঝে একে অপরকে নিশানা করেছেন কুণাল ঘোষ এবং শুভেন্দু অধিকারী। নাম না করে তাঁরা একে অপরকে কটাক্ষও করেছেন।
২০০৭ সালের ১০ নভেম্বর নন্দীগ্রামে গুলি চালিয়েছিল পুলিশ। তার পরের বছর অর্থাৎ ২০০৮ সাল থেকেই এই দিনটিকে নন্দীগ্রাম দিবস হিসেবে পালন করে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি। যার নেতৃত্বে থাকে তৃণমূল। তবে শুভেন্দু তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে আলাদা ভাবে ওই কর্মসূচি পালন করেন। বৃহস্পতিবার দু’তরফের ‘নন্দীগ্রাম দিবস’ পালন কর্মসূচি পালনের জন্য সকাল এবং বিকেলে আলাদা ভাবে অনুমতি দিয়েছিল পুলিশ-প্রশাসন। নিজেদের মঞ্চ থেকে নন্দীগ্রামের জন্য বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত, তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ নাম না করে বিঁধলেন বিজেপিকে। আবার রাজ্যের বিরোধী দল নেতা শুভেন্দু অধিকারী তাঁদের মঞ্চ থেকে জবাবও দিলেন তার।
বৃহস্পতিবার ‘নন্দীগ্রাম দিবস’ কর্মসূচি পালনের জন্য তৃণমূলকে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল সকালে। নন্দীগ্রামের গোকুলনগর এবং মহেশপুরের মাঝে যে শহিদবেদী রয়েছে সেখানে সকালে পৌঁছন কুণাল। এর পর কর্মসূচি শুরুর মুহূর্তে ভিড় বাড়তে থাকে ওই এলাকায়। ভিড়ের মধ্যে একটি অংশ অভিযোগ করে, জমি আন্দোলনের নেতা তথা তমলুক জেলার সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পীষূষ ভুঁইয়াকে ওই কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। ওই অংশের অভিযোগ, কর্মসূচি পালনকে কেন্দ্র করে ‘ছড়ি ঘোরাচ্ছে’ শেখ সুফিয়ানের গোষ্ঠী। এই নিয়েই শুরু হয় গন্ডগোল। ধস্তাধস্তি সামলাতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। এর পর পরিস্থিতি মোকাবিলায় সচেষ্ট হন কুণাল। সমর্থকদের সামলানোর চেষ্টা করেন তিনি।
কর্মসূচিতে গন্ডগোল পাকানো এক জনকে ধমকাতেও দেখা যায় কুণালকে। ওই ব্যক্তির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘শহিদ তর্পণের দিনে তুমি যদি এমন করো, তা হলে আমি বলতে বাধ্য হব, তোমার উদ্দেশ্য অনুষ্ঠানটি নষ্ট করা। কেউ তোমায় পাঠিয়েছে।’’ এর পরেই কুণালের হুঁশিয়ারি, ‘‘যারা অনুষ্ঠান বন্ধ করতে পাঠিয়েছে তাদের বলে রাখছি, এমন কাজ হলে বিকেল ৩টেয় এখানে মঞ্চসুদ্ধ উপড়ে ফেলে দিয়ে আসব। এটা ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির কর্মসূচি। দলের নয়। যদি কোনও ক্ষোভ থাকলে নেতৃত্বকে বলুন। আমরা আছি শুনব।’’
নিজেদের কর্মসূচি শেষে নন্দীগ্রাম তৃণমূলের একাংশ দাবি করে যে, তারা বিজেপিকে সভা করতে দেবে না। তাদের যুক্তি, নন্দীগ্রাম আন্দোলনে অংশ নেয়নি বিজেপি। তাই তারা কোনও ভাবেই এতে ‘ভাগ বসাতে’ পারে না। সেই দাবিকে সামনে রেখে তৃণমূল নেতা এবং কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে রাস্তায় বসে পড়েন কুণাল। ছিলেন রাজ্যের কারামন্ত্রী অখিল গিরিও। তিনিও রাস্তায় বসে পড়েন। এর পর পুলিশ এসে তাঁদের উঠে যেতে বলে। এর পর অবশ্য তৃণমূল নেতা এবং কর্মী-সমর্থকরা আর অবস্থান চালিয়ে যাননি।
এর পর বিকেলে নন্দীগ্রামে পৌঁছন শুভেন্দু। তৃণমূলের সভামঞ্চ থেকে বিজেপির সভাস্থল ছিল মাত্র ফুট দশেক দূরে। মঞ্চে উঠে তিনিও নাম না করে কটাক্ষ করেন কুণালকে। তাঁর খোঁচা, ‘‘এখানে কিছু ছাঁট মাল কর্মচারী এসেছে।’’ পাশাপাশি, তৃণমূল নেতাদের অবস্থানের পরেও উঠে যাওয়া নিয়ে তাঁর কটাক্ষ, “কোমরে যদি এত জোর তা হলে উঠে গেলি কেন?’’
নন্দীগ্রাম আন্দোলনে বিজেপির যে কোনও ভূমিকা ছিল না, তৃণমূলের সেই অভিযোগের জবাবও দিয়েছেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামে ১৪ মার্চের পর প্রথম এসেছিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী। তিনি না এলে নন্দীগ্রামে কারও ঢোকা হত না। ভারতীয় জনতা পার্টি ৬২ দিন লোকসভা এবং রাজ্যসভা অচল করে রেখে নন্দীগ্রামের ঘটনার নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করতে বাধ্য করেছিল। এখন আপনাদের কাছ থেকে শিখতে হবে না আমাদের। এই আন্দোলনে থাকার অধিকার আমাদের আছে, আমরা থাকব।’’
গত দু’-এক দিন ধরে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়ছে নন্দীগ্রামে। বুধবার নন্দীগ্রামের তারাচাঁদবাড় গ্রামে দুই পক্ষের সংঘর্ষে দুই মহিলা গুরুতর জখম হন। ওই ঘটনায় ৪ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। অভিযোগ, বিজেপির গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরেই ওই ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। এর মাঝেই বৃহস্পতিবার ‘নন্দীগ্রাম দিবস’কে কেন্দ্র করে তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে শুরু হয় টানাপড়েন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy