প্রধানশিক্ষিকার ঘরে বিক্ষুব্ধ ছাত্রীরা। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।
মাধ্যমিকে কম নম্বর পাওয়া ছাত্রীদের ভর্তি নিতে নারাজ রঘুনাথগঞ্জ বালিকা বিদ্যালয়। স্কুল কর্তৃপক্ষের যুক্তি, তাতে স্কুলের সুনাম নষ্ট হবে। আর সেই কারণেই ওই স্কুল থেকেই মাধ্যমিক পাশ করা প্রায় ৫০ জন ছাত্রী নিজের স্কুলেই একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারছে না। এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার স্কুলে এসে প্রধানশিক্ষিকা-সহ আরও তিন শিক্ষিকাকে অফিসঘরে তালাবন্দি করে বিক্ষোভ দেখাল ছাত্রীরা। ভাল রেজাল্ট করা ছাত্রীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারী ছাত্রীদের বচসা ও ধস্তাধস্তিও শুরু হয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রধানশিক্ষিকা বুধবার স্কুল পরিচালন সমিতির সভায় ছাত্রীদের ভর্তির বিষয়টি বিবেচনা করার আশ্বাস দিলে দুপুর নাগাদ শিক্ষিকারা ঘেরাও মুক্ত হন।
বিক্ষুব্ধ ছাত্রীদের অন্যতম সুহিনা খাতুনের বক্তব্য, “পঞ্চম শ্রেণি থেকে এই স্কুলে পড়াশোনা করছি। খুব ভাল ছাত্রী নই। কিন্তু শিক্ষা দফতর আমাদের মাধ্যমিক পাশ বলে স্বীকৃতি তো দিয়েছে। তা হলে আমরা একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারব না কেন? আমরা সকলেই খুব গরিব ঘরের মেয়ে। বাবা-মায়েরা কেউ দিনমজুর, কেউ বিড়ি শ্রমিক। আমাদের মতো পরিবারগুলির কথা তাহলে কে ভাববে!” প্রধানশিক্ষিকা মানসী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এবারে স্কুলে মাধ্যমিকে ৭৭ শতাংশ ছাত্রী পাশ করলেও উচ্চ মাধ্যমিকে পাশের হার মাত্র ৩২ শতাংশ। মাধ্যমিকে ভাল রেজাল্ট করা ছাত্রীরা অন্য স্কুলে গিয়ে ভর্তি হয়েছে। আমরাও তাই বহিরাগত কিছু ভাল মানের মাধ্যমিক উত্তীর্ণ ছাত্রীকে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি করে নিয়েছি। সেই কারণেই স্কুলের কিছু ছাত্রীকে আমরা ভর্তি নিতে পারছি না। তাছাড়া ভাল রেজাল্ট নয়, এমন ছাত্রীদের ভর্তি নিলে উচ্চ মাধ্যমিকে ফলাফল আরও খারাপ হবে। তখন লাল কার্ড দেখতে হবে স্কুলকে। তাই এ ব্যাপারে পরিচালন সমিতির সভা ডাকা হয়েছে বুধবার দুপুরে। সেখানে ছাত্রী ভর্তি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে সেইমতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্রধানশিক্ষিকার এমন বক্তব্যকে খারিজ করে স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক শিশির মন্ডল বলেন, “সোমবার আমি ভর্তি সমস্যার কথা জানতে পেরে প্রধানশিক্ষিকাকে স্পষ্ট বলে দিয়েছি, নিজের স্কুলের মাধ্যমিক পাশ সমস্ত ছাত্রীকে ভর্তি করে নেওয়ার জন্য। তিনি তা না করে বহিরাগত ছাত্রীদের ভর্তি করে স্কুলে জটিলতা তৈরি করেছেন।” শিশিরবাবু বলেন, “তাছাড়া মাধ্যমিকে ফল খারাপের জন্য ছাত্রীদের ঘাড়ে সব দোষ চাপানো হবে কেন? এ ব্যাপারে দায় এড়াতে পারেন না শিক্ষিকারাও।” তৃণমূলের জেলা শিক্ষা সেলের চেয়ারম্যান শেখ ফুরকান বলেন, “নিজের ক্যাম্পাসের সব ছাত্র-ছাত্রীকে সেই একই ক্যাম্পাসের স্কুলে উচ্চ শ্রেণিতে ভর্তি করতে হবে। এটা তো রাজ্য শিক্ষা দফতরের আগাম ঘোষণাই রয়েছে। প্রয়োজনে অনুমতি সাপেক্ষে বেশি ছাত্রীকে ভর্তি নেওয়াও সম্ভব। এ ব্যাপারে ওই স্কুল চাইলে অনুমতি পাইয়ে দিয়েও সাহায্য করা হবে। তবে উচ্চশিক্ষা থেকে মেয়েদের কোনওভাবেই বঞ্চিত করা যাবে না।” জেলার সহকারি বিদ্যালয় পরিদর্শক পঙ্কজ পাল বলেন, “মাধ্যমিক পাশ করা সব ছাত্রীকেই সেই স্কুলের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি নিতে হবে। কাউকেই ফেরানো যাবে না। এ ব্যাপারে ওই স্কুলের প্রধানশিক্ষিকাকে সমস্যা মেটাতে জঙ্গিপুরের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের ( মাধ্যমিক) সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy