বিয়েবাড়িতে এই মেনু কার্ড দেখেই ক্ষুব্ধ তৃণমূল।—নিজস্ব চিত্র।
ইচ্ছে ছিল, ছোট মেয়ের বিয়ের মেনু কার্ডে একটা নতুনত্ব থাকবে। সেই মতো আনন্দবাজার পত্রিকার প্রথম পাতার ছবি ব্যবহার করে মেনু কার্ড তৈরি করেছিলেন নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের শোনঘাটার বাসিন্দা শ্যামল পাল। খবরের খানিকটা অংশ বাদ দিয়ে ছেপে দিয়েছিলেন লোভনীয় খাদ্যতালিকা -- দই কাতলা, চিকেন কষা, ক্ষীর মালাই।
কিন্তু সবই তেতো করে দিল রাজনীতি।
আনন্দ-উৎসাহে শ্যামলবাবু খেয়াল করেননি, সোমবার কাগজের প্রথম পাতায় ছিল বিজেপি নেতা অমিত শাহের রবিবারের জনসভার ছবি। শিরোনামে তৃণমূলকে বাংলা থেকে উৎখাত করার আহ্বান। মেনু কার্ডে তাই দেখে ডালের গামলায় তুফান তুললেন তৃণমূল সমর্থকরা। পড়শির মেয়ের বিয়ের নেমন্তন্ন খেতে এসেও দলের অবমাননা মানতে রাজি নন তাঁরা। প্রবল আপত্তির মুখে পড়ে শ্যামলবাবুকে নর্দমায় বিসর্জন দিতে হল সাধের মেনু কার্ড। মেনু ছাড়াই খাবার পরিবেশন করা হয়। এমনকি বরযাত্রীদেরও মেনুকার্ড দিতে না পারায় কিছুতেই যেন আফশোস যাচ্ছে না পাল পরিবারের। কনেপক্ষের এক আত্মীয়ের কথায়, “বরযাত্রীরা হয় তো ভাবলেন, আমরা মেনু কার্ড ছাপাইনি। লজ্জায় আমাদের মাথা কাটা যাচ্ছিল।”
পোস্টার-প্ল্যাকার্ড তো নয়, নেহাত একটা ভোজের মেনু কার্ড। তার জন্য এত গোঁসা কেন? কোনও রাখঢাক না করেই স্থানীয় কৃষ্ণগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলের গোপাল সরকার বলেন, “হ্যাঁ, আমরাই আপত্তি করেছিলাম। একে আনন্দবাজার পত্রিকার প্রথম পাতায় আমাদেরকেই সমূলে উৎখাত করার ডাক। উপরে আবার বিজেপি নেতা অমিত শাহের ছবি। এটা সহ্য করা যায় না।”
তৃণমূল নেত্রী প্রায় যে কোনও বিষয়ে বিরোধীদের ষড়যন্ত্র দেখতে পান। তাঁর সমর্থকরাও এই মেনু কার্ডের পিছনে বিরোধীদের হাত দেখছেন। এক স্থানীয় নেতার অভিযোগ, “শ্যামলবাবুর উপরে আমাদের কোনও রাগ নেই। কিন্তু তাঁর এক আত্মীয় বিজেপি নেতা গৌরাঙ্গদেব পালই এই সব করেছেন। সামাজিক অনুষ্ঠানেও বিজেপি নোংরা রাজনীতি করছে।”
ব্যাপার শুনে খানিকটা কৌতুকের সুরে তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও বলেন, “এর পিছনে একটা গভীর চক্রান্ত থাকলেও থাকতে পারে। কারণ খেতে বসার আগেই মেনু-কার্ডে এমন একজনের মুখ দেখানো হচ্ছে যাতে সব স্বাদ বিস্বাদ হয়ে যায়।”
শ্যামলবাবুর পিসির ছেলে বিজেপির কৃষ্ণগঞ্জ ব্লক সভাপতি গৌরাঙ্গবাবু অবশ্য বলেন, “আমি ওই বিয়ের কোনও দায়িত্বেই নেই। অহেতুক এর মধ্যে আমাকে জড়ানো হচ্ছে।” তাঁর কটাক্ষ, “তৃণমূল আসলে সব কিছুতেই বিজেপি জুজু দেখছে। সামান্য মেনু কার্ডকেও ভয় পাচ্ছে।”
এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ অবশ্য তৃণমূল সমর্থকদের গা জোয়ারিতে কন্যাকর্তার এমন অবমাননায় ক্ষুব্ধ। তাঁদের কথায়, “একটা মেনু কার্ডের জন্য তৃণমূল দলটার বিরাট কোন ক্ষতি হয়ে যেত না। সামান্য বিষয় নিয়ে বিয়ে বাড়িতে শ্যামলবাবুকে অপ্রস্তুত হতে হল।”
তবে মেয়ের বিয়ে নিয়ে এই রাজনৈতিক তরজায় যেতে রাজি নন শ্যামলবাবু। তিনি বলেন, “আমরা শুধু মেয়ের বিয়েতে একটা নতুন কিছু করব ভেবেছিলাম। সেই মতো আমরা বিয়ের দিনের আনন্দবাজার পত্রিকার প্রথম পাতাটাকে ব্যবহার করে মেনুকার্ড তৈরি করেছিলাম। এত কিছু ভাবিনি। এখন মনে হচ্ছে ভাবা উচিত ছিল।” কেউ আঘাত পেয়ে থাকলে তিনি দুঃখিত, জানিয়েছেন শ্যামলবাবু।
পুরো বিষয়টি জেনে তাজ্জব বিজেপি-র বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “টলিউড, টেলিউড মেলা-মোচ্ছবের সংসারের সমর্থকরা কি সাধারণ রসিকতাটুকুও ভুলে গেলেন!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy