১৯৯৬ সালের মামলা। নিম্ন মানের ট্রাক্টর বিক্রি করা ও ঠিকমতো পরিষেবা না দিয়ে ক্রেতাদের হয়রান করার জন্য মদন চক্রবর্তী নামে কৃষ্ণনগরের এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে জেলার ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ১১ জন। সময়ের সঙ্গে এক-এক জন করে হাল ছেড়ে দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত মামলাটা চালিয়েছিলেন ছ’জন (এর মধ্যে এক জন পরে যোগ দিয়েছেন)। সম্প্রতি ওই ব্যবসায়ীকে তিন বছর কারাদণ্ড ও দশ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাস কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল নদিয়া জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৯৬ সালে কৃষ্ণনগরের পালপাড়া এলাকার মদন চক্রবর্তীর কাছ থেকে বেশ কয়েকজন ট্রাক্টর কেনেন। তাঁদের মধ্যে ১১ জন বিভিন্ন সময়ে নিম্নমানের ট্রাক্টর বিক্রি ও পরিষেবা না মেলার অভিযোগে জেলার ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হন। অন্যতম অভিযোগকারী স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ট্রাক্টর কেনার কয়েকদিনের মধ্যে বুঝতে পারি বেশ কিছু যন্ত্রাংশ খারাপ। তাছাড়া আমাকে সার্ভিস বুকও দেয়নি। চাইতে গেলে হয়রান করে। প্রায় এক বছর পরে আমাকে সার্ভিস বুক দেয়। তার পরেই আমি ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হই।’’ পরে ২০০৬ সালে আরও একজন মামলা করেন। ২০০৮ সালে নদিয়া জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত মদন চক্রবর্তীকে ওই ছ’জনকে নতুন ট্রাক্টর অথবা ট্রাক্টরের ক্রয় মূল্য ৭৭ হাজার ৯২৫ টাকা, মামলা খরচ বাবদ ৫ হাজার টাকা ও ক্ষতিপূরণ বাবদ ২০ হাজার টাকা করে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এই টাকা দিতে দেরি করলে মোট টাকার উপরে ১৮ শতাংশ হারে সুদ দেওয়ার কথাও বলে আদালত। মদনবাবু সেই টাকা না দেওয়ায় ২০০৯ সালে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। দু’মাস পরে পুলিশ তাঁকে ধরে। পরদিন সমস্ত টাকা পরিশোধের শর্তে এক হাজার টাকার ব্যক্তিগত জামিনে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এবারও তিনি টাকা পরিশোধ না করায় ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। এরপরে তিনি একাধিকবার এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালত ও হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। প্রতিবারই জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের রায় বহাল থাকে। তবে, এরই মধ্যে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানার উপরে তিন মাস স্থগিতাদেশ জারি করে। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত আবার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। বেগতিক বুঝে মদনবাবু আত্মগগোপন করেন এ বার। শেষমেশ গত ২৬ ফেব্রুয়ারি কোতোয়ালি থানার পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে আদালতে তোলে। আদালত দু’দিনের জন্য জেল হেফাজতে পাঠায় এবং এই দু’দিনের মধ্যে টাকা পরিশোধের সুযোগ দেয়। টাকা পরিশোধ না করায় এরপর মদনবাবুকে আদালত কারাদণ্ডে পাঠায়। স্বপন ভট্টাচার্যের আইনজীবী মকবুল রহমান বলেন, ‘‘মদন চক্রবর্তী জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে একাধিকবার রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালত ও হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ে পরাজিত হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত ক্রেতা সুরক্ষা আদালত কারাদণ্ডের যে রায় দিয়েছে, তাতে আমরা খুশি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy