শহরের ফুসফুস হিসাবে পরিচিত ২৪৭ বছরের প্রাচীন ঐতিহাসিক ব্যারাক স্কোয়ার মাঠের সবুজ বাঁচাতে রাষ্ট্রপতির কাছে নালিশ জানানোর পাশাপাশি আদালতে মামলা লড়তে চলেছেন বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরী। মাঠের সবুজ বাঁচাতেই তাঁর এই পদক্ষেপ বলে অধীরবাবু জানিয়ে দিয়েছেন।
শুক্রবার তিনি বলেন, “ঐতিহাসিক ব্যারাক স্কোয়ার মাঠের সবুজ বাঁচাতে কলকাতা হাইকোর্টের গ্রিনবেঞ্চে জনস্বার্থের মামলা দায়ের করব। সবুজ রক্ষা করতে হলে ওই মাঠের ভিতর সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের মেলা ও সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। কপ্টার নামার হেলিপ্যাড নির্মাণ করার ব্যাপারেও নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবে। তার জন্য খুব শীঘ্র আদালতের কাছে আর্জি জানানো হবে।”
আজ শনিবার বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের অনুষ্ঠান রয়েছে। কলেজের সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রণববাবু এ দিন দুপুরে আকাশপথে বহরমপুরে পৌঁছবেন। রাষ্ট্রপতির তিনটি কপ্টারের কনভয় নামবে বহরমপুর ব্যারাক স্কোয়ার মাঠে। তার জন্য মাঠের প্রায় পুরো এলাকা জুড়ে তিনটি হেলিপ্যাড তৈরি করা হয়েছে। সবুজ ঢেকে দিয়ে অস্থায়ী তিনটি হেলিপ্যাড তৈরি করা হয়েছে ইট ও বালি দিয়ে। হেলিপ্যাডে রাষ্ট্রপতির কনভয় যাতায়াতের জন্য সবুজ ঘাসের আস্তরণে পুরো করে ঢেলে দেওয়া হয়েছে গুড়ো পাাথরের ঘেস। হেলিপ্যাডের চারপাশে হাজার খানেক বাঁশ দিয়ে গড়া হয়েছে দু’ সারির ব্যারিকেড।
এই নিয়েই অধীর চৌধুরী ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। এ দিনের কলেজের অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ছাড়াও থাকবেন কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা সাংসদ অধীর চৌধুরী। সাংসদ বলেন, “কলেজের অনুষ্ঠানে আমার সঙ্গে রাষ্ট্রপতির দেখা হবে। তখন ব্যারাক স্কোয়ারের সবুজ ধ্বংস করে হেলিপ্যাড তৈরির বিষয়টি তাঁর গোচরে আনা হবে। প্রণববাবু নিজেও প্রকৃতি প্রেমী মানুষ। তিনিও সবুজ ধ্বংস করে হেলিপ্যাড তৈরি করার বিষয় পছন্দ করবেন না।”হেলিপ্যাডের জন্য মাঠের কোনও ক্ষতি হবে না দাবি করে মুর্শিদাবাদ জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, “রাষ্ট্রপতির জেলা সফর শেষ হয়ে গেলে মাঠ ফের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হবে।”
অধীর চৌধুরীর অবশ্য দাবি, “কপ্টারের জন্য ইট-বালির হেলিপ্যাড ও কনভয়ের যাতায়াতের জন্য পাথরের ঘেস দিয়ে পথ তৈরি করায় মাঠের বারোটা বেজে গিয়েছে। ওই এলাকা আর পূর্বের অবস্থায় ফিরবে না। এক কিলোমিটার দূরে স্টেডিয়াম। সেখানে বিশাল এলাকা অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সেখানে হেলিপ্যাড করলে ব্যারাক স্কোয়ার মাঠের সবুজ ধ্বংস হত না।”
বহরমপুরে সেনানিবাস গড়ার জন্য নবাব মির জাফর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে ৪০০ বিঘা জমি দিয়েছিলেন। পলাশির যুদ্ধের ৮ বছর পর ১৭৬৫ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ওই জমিতে ব্যারাক স্কোয়ার মাঠ, মাঠের চার পাশে সেনা নিবাস ও কোম্পানির আধিকারিকদের বাসভবন গড়ার কাজ শুরু করে। শেষ হয় ২ বছর পর, ১৭৬৭ সালে।
বর্গাকৃতি মাঠটির প্রতিটি দিকের দৈর্ঘ্য ৪৪০ গজ। সেই সময়ের হিসাবে মাঠ-সহ সেনানিবাস গড়তে খরচ হয়েছিল ৩ লক্ষ ৩ হাজার ২৭০ পাউন্ড। সিপাহি বিদ্রোহের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে ১৯৫৭ সালে ওই মাঠের উত্তর-পশ্চিম কোনে স্মারক-স্তম্ভ স্থাপন করা হয়। ১৮৫৭ সালের ২৯ মার্চ ব্যারাকপুরের সিপাহি বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে। তারও মাস খানেক আগে ২৫ ফেব্রুয়ারি বহরমপুর ব্যারাক স্কোয়ার লাগোয়া সেনানিবাসে সিপাহি বিদ্রোহের প্রথম স্ফুলিঙ্গ দেখা দেয়। ওই দিন রাতে বহরমপুর সেনানিবাসে ১৯ নম্বর পদাতিক বাহিনী বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল। ঐতিহাসিক সেই মাঠ বাঁচাতে আদালতের দ্বারস্থ হতে চলেছেন বহরমপুরের সাংসদ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy